ভারতে ফের বার্ড ফ্লু, বাংলাদেশে সতর্কতা

জাহিদুর রহমান
প্রকাশ: ০৬ মার্চ ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৭ মার্চ ২০২৩ | ০৪:২৮
ভারতে সর্বশেষ ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ছড়িয়ে পড়েছিল অ্যাভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু। এবার বাংলাদেশের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ লাগোয়া ঝাড়খণ্ড রাজ্যে থাবা বসিয়েছে ভাইরাসটি। গত সপ্তাহে ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলায় বার্ড ফ্লুতে আক্রান্ত চার হাজার হাঁস-মুরগি মেরে ফেলা হয়। এর পর রাজ্যের রাজধানী রাঁচিতে বার্ড ফ্লু শনাক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির বিভিন্ন গণমাধ্যম।
গতকাল সোমবার ডেকান হেরাল্ড ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, বার্ড ফ্লু সংক্রমিত এলাকার এক কিলোমিটারের মধ্যে সব ধরনের পোষা পাখি মেরে ফেলতে নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। রাখা হয়েছে কড়া নজরদারি।
বাংলাদেশে এখনও সংক্রমণ ধরা না পড়লেও বার্ড ফ্লু প্রতিরোধ এবং জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। পোলট্রি খামারিদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে নির্দেশনা দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সীমান্ত এলাকায় নেওয়া হয়েছে সতর্কতা।
দেশে মাংসের মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি জোগান দেয় পোলট্রি খাত। বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিআইএ) তথ্যানুযায়ী, দেশে ৯৫ হাজার ৫২৩টি খামার আছে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ ও ডলার সংকটে বেড়ে গেছে প্রাণিজ খাদ্যের দাম। করোনার পর থেকে খরচ সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে গেছে ৬২ হাজার ৬৫৬টি খামার।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের তথ্য বলছে, ২০০৭ সালে বাংলাদেশে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের আগে থেকেই লো-প্যাথোজেনিক এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের উপস্থিতি ছিল। এবার বার্ড ফ্লু যেন দেশের খামারিদের আরেকটি মহামারিতে না ফেলে, এ জন্য বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। কোনো মৃত বা সন্দেহজনক হাঁস-মুরগি বা পাখি পাওয়া গেলে নমুনা সংগ্রহ করে দ্রুত নিকটবর্তী ল্যাবে পরীক্ষা করে ফলাফল অনুযায়ী পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ গতকাল সমকালকে বলেন, ভারতে বার্ড ফ্লু সংক্রমণের তথ্য জানার পরপরই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলেছি। স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় সীমান্ত এলাকায় আমাদের কার্যালয়গুলোকে সতর্ক করতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাৎক্ষণিক ফোনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বার্তা পাঠানো হয়েছে। চোরাপথেও কোনো প্রাণী যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে, সে জন্য সতর্ক করা হয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর প্রশাসনকে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, আমরা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছি। বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকে এখনও বার্ড ফ্লু সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। সব রকমের প্রস্তুতি আছে। মাঠ পর্যায়ে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বার্ড ফ্লু নিয়ে যেন অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল বোঝাবুঝি বা প্রচারণা না ছড়ায়, সেদিকে যেন আমরা সতর্ক থাকি। খামারি বা ক্রেতার আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ক্রেতাসাধারণকে অনুরোধ করব, আতঙ্কিত হয়ে আপনারা হাঁস-মুরগি বা ডিম খাওয়া বন্ধ করবেন না। কারণ ভারতের আক্রান্ত এলাকায় সতর্কতা জারি হয়েছে।
এ বিষয়ে কোনো চিঠি জারি হয়েছে কিনা– এমন প্রশ্নে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক বলেন, নানা সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সবকিছু প্রকাশ করা যাবে না, যাতে মানুষের মাঝে আতঙ্ক না ছড়ায়। জনস্বার্থে যা যা করা দরকার, তা আমরা করছি। বিশেষায়িত ভ্যাকসিন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা দ্রুত চলে আসবে।
- বিষয় :
- বার্ড ফ্লু
- আতঙ্ক
- সতর্ক
- ভারত
- বাংলাদেশ