ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

সুজনের গোলটেবিলে বিশিষ্টজন

সংকট থেকে উত্তরণের উপায় অবাধ নির্বাচন

সংকট থেকে উত্তরণের উপায় অবাধ নির্বাচন

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ | ১৭:০১ | আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২৩ | ১৭:০১

সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন আয়োজিত অনলাইন গোলটেবিলে বক্তারা বলেছেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের ওপর দেশের অস্তিত্ব নির্ভর করছে। সাধারণ মানুষকে ভোট দেওয়ার সুযোগ করে দিতে হবে। বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে দেশের পরিণতি কম্বোডিয়ার মতো হবে। চলমান সংকট রাজনৈতিক। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনই সংকট থেকে উত্তরণের উপায়।

মঙ্গলবার ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন, সাংবিধানিক কাঠামো ও বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন বিশিষ্টজন। সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।

সভাপতির বক্তব্যে এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ‘গত ৫০ বছরে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের নজির নেই। এবারও তাই হবে বলে মনে হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে বড় ধরনের গণঅভ্যুত্থানের সম্ভাবনা নেই। তাই  ঘুরেফিরে ওই একটি কথাই আসে– নির্দলীয় সরকার চাই।’

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেন, বর্তমান সংকট রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক। অনেক সংকটের মূলে আছে রাজনীতি। এর সমাধান করতে হবে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে। 

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রধান দুই দলের এক দল অংশ না নিলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না। তাই এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে, যাতে দুটি দলই অংশ নেয়। এ জন্য সরকারকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি বলেন, ইসির আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ অপ্রয়োজনীয়। মূল দরকার আইনের প্রয়োগ। 

চার্লস ডারউইন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো ড. রিদওয়ানুল হক বলেন, ২০১৪ সালের ভোটকে সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বলা যায় না। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সব দলের নামমাত্র অংশগ্রহণ ছিল। প্রতিনিধিত্বমূলক, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের উপায়। গণতন্ত্রের প্রয়োজনে, মানুষের স্বার্থে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তা সাংবিধানিক হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি ও সরকার বিভাগের অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, মূল সংকটটা রাজনৈতিক। অংশগ্রহণমূলক বহুদলীয় গণতন্ত্র থাকবে কী, থাকবে না তার সংকট। রাজনীতিকে এককেন্দ্রিক করার প্রবণতা আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে। কার্যত অগণতান্ত্রিক, দৃশ্যত গণতান্ত্রিক একটি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। বর্তমান ধারা চলতে থাকলে পরিণতি হবে কম্বোডিয়ার মতো। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র শুধু নয়, বাংলাদেশ অস্তিত্ব নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর। অর্থনীতি, পরিবেশ, রাজনীতি সবকিছু নির্ভর করছে এর ওপর। 

স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, যত সংস্কারই হোক, মানুষ ভোট দিলে এটি দৃশ্যমান হতে হবে। মানুষ নির্বাচনের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ভোটকেন্দ্রে আসছে না। প্রবাসীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করলে ভোটে ভারসাম্য আসতে পারে।

অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সঠিকভাবে চর্চা না হলে জবাবদিহির অভাবে অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য সংকট তৈরি হয়। এখন সবকিছু আমলাতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। কারণ নির্বাচনে জিততে হলে আমলাদের সহায়তা লাগবে। দুর্নীতি একদম তৃণমূলে চলে গেছে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, সুজনের কোষাধ্যক্ষ সাবেক ব্যাংকার সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস প্রমুখ। 

আরও পড়ুন

×