ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মোটরযানে থার্ড পার্টি, বীমা ফিরছে

মোটরযানে থার্ড পার্টি, বীমা ফিরছে

ছবি: ফাইল

রাজীব আহাম্মদ

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৩ | ২০:১৭

মোটরযানে থার্ড পার্টি বীমা আবার বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এ লক্ষ্যে সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। তবে পরিবহন মালিক ও শ্রমিক নেতারা বলছেন, এটি অযৌক্তিক। বীমা বাধ্যতামূলক করা হলে শুধু বীমা কোম্পানির লাভ হবে। দুর্ঘটনা ঘটলে হতাহতদের পরিবার বঞ্চিত হবে। গাড়ি, মোটরসাইকেল চালানোয় খরচ বাড়বে।

২০১৮ সালে বীমা ঐচ্ছিক করা হয়। এর বদলে দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়। গত ১ জানুয়ারি থেকে নিবন্ধিত যানবাহন থেকে তহবিলের জন্য চাঁদা নিচ্ছে সরকার। বীমা ফিরিয়ে আনা হলেও বাতিল হবে না এ চাঁদা। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা বলছেন, তৃতীয় পক্ষের বীমায় কারও ক্ষতিপূরণ পাওয়ার নজির নেই, বরং আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ পাওয়া সহজ। ফের বীমা চালু হলে তহবিলে চাঁদা নেওয়া বন্ধ করতে হবে।

১৯৮৩ সালের মোটরযান অধ্যাদেশে বীমা বাধ্যতামূলক ছিল। বীমা ছাড়া গাড়ি সড়কে চালালে জরিমানা দিতে হতো। ফার্স্ট পার্টি বীমা করলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির জন্য ক্ষতিপূরণ পেতেন মালিক। বাধ্যতামূলক ছিল থার্ড পার্টি নামে পরিচিত তৃতীয় পক্ষের বীমা। এ বীমার আওতায় দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত যাত্রী, পথচারীর ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা ছিল। এই বীমার প্রিমিয়ামও (কিস্তি) ছিল সামান্য। বাসের জন্য বছরে দেড় হাজার টাকা এবং মোটরসাইকেলে ২২০ টাকা দিতে হতো। অন্যান্য যানবাহনে প্রিমিয়ামের পরিমাণ ছিল ৩০০ থেকে দেড় হাজার টাকা।
থার্ড পার্টি বীমা তুলে দিয়ে ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী আর্থিক সহায়তা তহবিল গঠন করা হয়। তহবিল পরিচালনায় ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে আইনের ৫৪ ধারা অনুযায়ী। দুর্ঘটনায় হতাহতদের পক্ষে আবেদন করলে তদন্ত সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ পাওয়া যাবে।

গত ২৭ ডিসেম্বর কার্যকর হওয়া সড়ক পরিবহন বিধিমালার ১৪৯ ধারা অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনায় কেউ নিহত হলে তাঁর পরিবার অন্যূন ৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ পাবে তহবিল থেকে। অঙ্গহানি ও পঙ্গুত্বের জন্য ৩ লাখ এবং চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সম্ভাবনা থাকলে ১ লাখ টাকা সহায়তা পাবেন দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তি। সরকারের অনুমোদনে সহায়তার পরিমাণ কমবেশি করতে পারবে ট্রাস্টি বোর্ড।

বিধিমালার ১৪৩ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, প্রাইমমুভারের জন্য মালিককে বছরে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে তহবিলে। নতুন নিবন্ধন এবং প্রতিবছর গাড়ির কাগজ হালনাগাদ করার সময় এই চাঁদা দিতে হবে। মিনিবাস, মিনিট্রাক, পিকআপের বার্ষিক চাঁদা ৭৫০ টাকা। কার, জিপ, মাইক্রোবাসের চাঁদা ৫০০ টাকা। তিন চাকার গাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের চাঁদা ৩০০ টাকা। তবে বছর বছর মোটরসাইকেলের ট্যাক্স টোকেন ও ফিটনেস হালনাগাদ করতে হয় না। তাই এই দ্বিচক্রযান নিবন্ধনের সময় এককালীন ১ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়া হচ্ছে।

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সমকালকে বলেছেন, তহবিল চালু হওয়ায় থার্ড পার্টি বীমা বাতিল করা হয়। সবার সম্মতিতেই তা করা হয়েছিল। আর থার্ড পার্টি ইন্স্যুরেন্সে বীমা কোম্পানি ছাড়া আর কারও লাভ হয় না। গাড়ির মালিক শুধু শুধু কিস্তি দিয়ে যান।

সড়ক পরিবহনের ৬০ ধারায় প্রথম পক্ষের বীমার বিধান রয়েছে। তবে তা ঐচ্ছিক। ৬০(১) ধারায় বলা হয়েছে, মোটরযানের মালিক বা প্রতিষ্ঠান ইচ্ছা করলে মালিকানাধীন যে কোনো মোটরযানের জন্য যে সংখ্যক যাত্রী পরিবহনের জন্য নির্দিষ্ট, তাদের জীবন ও সম্পদের বীমা করতে পারবে। পরের দুটি উপধারায় বলা হয়েছে, গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হলে বীমার ক্ষতিপূরণ পাবেন মালিক। তবে গাড়ির ক্ষতির জন্য আর্থিক সহায়তা তহবিল থেকে ক্ষতিপূরণ পাবেন না।

এনা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ সমকালকে জানান, সব মালিকই গাড়ির জন্য প্রথম পক্ষ বীমা করেন। এনা পরিবহনের হিনো বাসের জন্য বছরে ১ লাখ ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার কিস্তি দিতে হয়। দুর্ঘটনা না হলে ‘নো ক্লেইম বোনাস’-এর মাধ্যমে প্রিমিয়ামের একটি অংশ ফেরত পাওয়া যায়।

অধিকাংশ বাস ও গাড়ির মালিক জানিয়েছেন, শুধু মামলা থেকে বাঁচতে আগে থার্ড পার্টি বীমা করতে হতো। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে ২২০ টাকার বীমা করা না থাকলে ৮০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতো। একাধিক বাস মালিক জানান, মামলা থেকে বাঁচতে ২০০-৩০০ টাকায় বীমার কাগজ বানানো হতো। কিন্তু এখন দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য গঠিত তহবিলে বাধ্যতামূলক চাঁদা দিতে হচ্ছে। আগে থার্ড পার্টির বীমায় ক্ষতিপূরণ না পেলেও এখন তহবিল থেকে পাওয়ার সুযোগ তৈরি রয়েছে। সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী সমকালকে বলেছেন, বীমা বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে তাঁদের আপত্তি রয়েছে। তা সরকারকে জানানো হবে। এতে বীমা কোম্পানির লাভ হলেও গাড়ি চালানোর খরচ বাড়বে।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন করে বীমা বাধ্যতামূলক করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব অমল কৃষ্ণ মণ্ডলকে প্রধান করে ১১ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সড়ক পরিবহন সচিব এ বি এম আমিন উল্ল্যাহ নুরী সমকালকে জানিয়েছেন, আইন সংশোধনে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন

×