গ্রামেগঞ্জে লোডশেডিং সেচ নিয়ে বড় বিপদ

প্রতীকী ছবি
সমকাল ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১৪ মে ২০২৩ | ২১:৩৪
ঘূর্ণিঝড় মোকার প্রভাবে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সারাদেশের মানুষ। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। কোথাও কোথাও দিনে ১৫ বার পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের খবর পাওয়া গেছে। এ কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে সেচ কার্যক্রম। বিপাকে পড়েছেন অনেক পেশাজীবী। বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে বিভিন্ন কারখানায় উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। গ্যাস না থাকায় রান্না-খাওয়া নিয়েও সমস্যা দেখা দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ জ্বালানিচালিত অধিকাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এ কারণে সৃষ্টি হয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। তবে দু’দিনের মধ্যে দেশে গ্যাস সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি জানান, উপজেলার আদাবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলাম পেশায় অটোরিকশাচালক। রাতের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ না থাকায় তিনি রিকশার ব্যাটারি পুরোপুরি চার্জ করতে পারেননি। শনিবার রাতেও দীর্ঘ সময় বিদ্যুৎ ছিল না। পরিণতিতে গতকাল রোববার তিনি বেশি সময় রিকশা চালাতে পারেননি। এতে কমে গেছে আয়। আশরাফুলের মতো কৃষি ও ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পসহ নানা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
স্থানীয় বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্যমতে, দৌলতপুরে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা ১৫-২০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে সরবরাহ পাওয়া যায় ৮-১০ মেগাওয়াট। পল্লী বিদ্যুতের দৌলতপুর জোনাল অফিসের উপমহাব্যবস্থাপক মির্জা কে. ই. তুহিন বলেন, সরবরাহ কম থাকায় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতিদিন গড়ে ৪-৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে।
উপজেলার ভাঙ্গাপাড়া গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, দিনের যেটুকু সময় বিদ্যুৎ পাওয়া যায়, তাতে সব জমিতে পানি দেওয়া সম্ভব হয় না। ফলে পানির অভাবে অনেক ফসল নষ্ট হচ্ছে বা উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
মিঠাপুকুর (রংপুর) প্রতিনিধি জানান, দু’দিন ধরে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে পড়েছে মিঠাপুকুরের মানুষ। শনিবার রাত ১২টা থেকে রোববার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১৬ ঘণ্টায় অন্তত ১৫ বার লোডশেডিং হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে দুঃসহ পরিস্থিতিতে রয়েছেন উপজেলার ১৭ ইউনিয়নের মানুষ। উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শাল্টিপাড়া গ্রামের আবদুল মজিদ খন্দকার ও বান্দেরপাড়া বাবুরহাট এলাকার মাহিদুল ইসলাম জানান, প্রচণ্ড গরমে শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।
ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে টিভি, ফ্রিজসহ বিদ্যুৎচালিত সরঞ্জাম বিকল হয়ে যাচ্ছে। লোডশেডিংয়ের বিরূপ প্রভাব পড়েছে ভারী শিল্পকারখানার ওপর। উপজেলার জায়গীর এলাকায় নর্থ বেঙ্গল জুট মিলের পরিচালক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ে ভারী যন্ত্রাংশের খুবই ক্ষতি হচ্ছে। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার কারণে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের পথে বসতে হবে।
দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি জানান, দিন ও রাত মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ বার লোডশেডিংয়ের কারণে এলাকায় কলকারখানা, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার উপক্রম। মাত্র ৭-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এ কারণে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোয় অসংখ্য মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিপাকে পড়েছে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. সন্তোষ কুমার মজুমদার বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ঠিকঠাক অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয় না। গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে বিদ্যুৎ গেলে টর্চলাইট জ্বালিয়ে কাজ শেষ করতে হয়।
চালনা বৌমার গাছতলা রাইস মিল চালক তুলসী সাহা বলেন, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ধান মাড়াই করে চাল তৈরি করতে পারছি না। মাঝেমধ্যে মিল বন্ধ রাখি এবং বিকল্প ব্যবসার চিন্তা করছি। চালনা পৌরসভার পোলট্রি মুরগি ব্যবসায়ী পলাশ রায় বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে আমার তিনটি ফার্মে প্রতিদিন ১৫-২০টি মুরগির বাচ্চা মারা যাচ্ছে।
শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি জানান, সরেজমিন শ্যামনগর উপজেলার কাঁচড়াহাটি, বাদঘাটা, দেওল, হরিপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে স্থানীয়দের অসন্তোষের কথা জানা যায়। বারবার লোডশেডিংয়ে তাঁরা অসহনীয় পরিস্থিতিতে পড়েছেন।
বিদ্যুৎ সংকট নিয়ে শিল্পকারখানাসহ ইজিবাইক ও মোটরচালিত ভ্যানচালক থেকে শুরু করে ওয়ার্কশপে কর্মরতদের বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ না মেলায় বরফ কলসহ কাঁকড়া ও হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বেকায়দায় পড়েছে। অধিকাংশ সময় এসব প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব ব্যবস্থায় জেনারেটর সচল রাখতে হচ্ছে।