সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতার কারণে দেশে ধান উৎপাদন কমবে: পরিবেশমন্ত্রী

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৩ | ১৫:২৬ | আপডেট: ১৮ জুন ২০২৩ | ১৬:৫১
পরিবেশমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেছেন, 'সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে এ শতকের শেষে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার প্রায় ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ থেকে ১৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ সমুদ্রে নিমজ্জিত হবে। কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাংলাদেশে ধান উৎপাদনের পরিমাণ ৫ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৯ দশমিক ১ শতাংশ হ্রাস করবে।'
সরকার দলীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হলে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়।
মন্ত্রী জানান, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও ঝুঁকি নিরূপণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড-এর অর্থায়নে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ‘প্রজেকশন অফ সী লেবেল রেইস এন্ড অ্যাসেসমেন্টস অফ ইটস সেক্টোরাল (এগ্রিকালচার, ওয়াটার এন্ড ইনফ্রাসটাকচার) ইম্প্যাক্ট’ শীর্ষক একটি গবেষণামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। উক্ত গবেষণায় পাওয়া ফলাফল থেকে দেখা যায় যে, বিগত ৩০ বছরে বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় প্রতিবছর সমুদপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির হার প্রায় তিন দশমিক ৮ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ মিলিমিটার।
মন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে জলবায়ু পরিবর্তন রোধে খুব দ্রুত ও ব্যাপক পদক্ষেপ না নিলে আগামী দুই দশকের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি শিল্প-বিপ্লব পূর্ববর্তী সময়ের পূর্বের তুলনায় ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যাবে, যা ২১০০ সাল নাগাদ প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেতে পারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধির কারণে এন্টার্কটিকার বরফ গলার হারও বেড়ে গেছে বহুগুণে।
তিনি বলেন, ১৯৯০-এর দশকের তুলনায় এখন পৃথিবীর বরফ দ্রুত হারে গলছে। ২০২১ সালে 'দা ক্রায়োস্ফিয়ার' জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৯৯০-এর দশক থেকে বিশ্বের মোট সামুদ্রিক বরফ, বরফখণ্ড ও হিমবাহের মধ্যে প্রায় ২৮ ট্রিলিয়ন মেট্রিক টন গলে গেছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, তিন দশক আগে যে হারে বরফ গলত, বর্তমানে তা ৫৭ শতাংশ দ্রুত হারে গলছে। নাসার এক সাম্প্রতিক গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রতিবছর গড়ে ১৫০ বিলিয়ন টন হারে এন্টাকটিকার বরফ গলছে এবং প্রতিবছর গড়ে ২৭০ বিলিয়ন টন হারে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলছে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এন্টার্কটিকা এবং গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলা পানি বৈশ্বিক সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে এক তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ অবদান রাখছে।
পরিবেশমন্ত্রী বলেন, জার্মানওয়াচের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম; যদিও গ্রীন হাউস গ্যাস নিঃসরণে বাংলাদেশের ভূমিকা অতি নগন্য। মূলত শিল্পোন্নত এবং বড় বড় উন্নয়নশীল দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে বৈশ্বিক তাপমাত্রা ক্রমশঃ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই, বিশ্বের বড় বড় দেশের কার্বন নিঃসরণ হ্রাসই এক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা অর্জনের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার স্ব উদ্যোগে বিশদ পরিকল্পনা এবং কৌশল প্রণয়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযোজন এবং প্রশমন পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করেছে।