যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি তুহিন কাজ করছিলেন টিভি চ্যানেলে

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৩ | ১১:৩৭ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৩ | ১১:৩৮
দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলার একটি মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্য তুহিন রেজাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে র্যাব-৩ এর একটি দল তাকে গ্রেপ্তার করে। দীর্ঘ প্রায় ১৮ বছর ধরে পলাতক এই জঙ্গি সর্বশেষ একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করছিলেন। নিরাপদ মনে করায় এই পেশায় থেকে তিনি ‘আত্মগোপনে’ ছিলেন বলে জানিয়েছে র্যাব।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৩ জেলায় একসঙ্গে বোমা হামলা চালায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। এরমধ্যে ঝিনাইদহ শহরের ডিসি অফিস, জেলা জজ আদালত চত্বর, বাস টার্মিনাল ও কলেজ মোড়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে একযোগে বোমা হামলা ও নিষিদ্ধ লিফলেট ছড়ানো হয়। এ ঘটনায় ঝিনাইদহ সদর থানায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা হয়। জেএমবি ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়। এতে জড়িত ২১ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ঝিনাইদহের বিশেষ ট্রাইব্যুনাল বিচার শেষে অভিযুক্ত সবাইকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে অভিযোগপত্র পুনর্বিবেচনার মাধ্যমে পরের বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি ১৪ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। সাত আসামি খালাস পান। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে সাজাপ্রাপ্ত ১২ আসামি গ্রেপ্তার হয়। পলাতক দু’জনের মধ্যে মামলার ১০ নম্বর অভিযুক্ত তুহিন রেজাকে তেজগাঁও রেলগেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। ওই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত মোহন এখনও পলাতক।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র্যাবের অধিনায়ক জানান, তুহিন রেজা ২০০৪ সালে জেএমবির ঝিনাইদহ সদর শাখায় যোগ দেন। এরপর তিনি লিফলেট তৈরি, লিখিত প্রচার-প্রচারণা সম্পাদনা, গোপন ও নাশকতমূলক খবর আদান-প্রদান, বিভিন্ন ভিডিও সম্পাদনার মাধ্যমে বিভ্রান্তিমূলক প্রামাণ্যচিত্র তৈরির কাজ করেন। এসবের মাধ্যমে তিনি তরুণদের পথভ্রষ্ট করতেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিরিজ বোমা হামলার দিন ভোরে জড়িত অন্যদের সঙ্গে তিনি আদালত চত্বরের আশেপাশে অবস্থান নেন। হামলার সময় তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ঘটনার পর পালিয়ে ঝিনাইদহ সদরের জঙ্গি ক্যাম্পে গিয়ে কিছুদিন থাকেন। এরপর মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলে তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এখানে তিনি যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, উত্তরা ও মহাখালীসহ বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করেন। গ্রেপ্তার এড়াতে তিনি বারবার বাসা বদলেছেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি তেজগাঁও এলাকার ভাড়া বাসায় ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখান থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পলাতক অবস্থায় তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও সম্পাদনাসহ বিভিন্ন সফটওয়্যারভিত্তিক কাজের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার জঙ্গি প্রথমে মহাখালীর একটি প্রতিষ্ঠানে ভিডিও সম্পাদনার কাজ করতেন। পরে তিনি দুটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ভিডিও এডিটর হিসেবে কাজ করেন।
অধিনায়ক জানান, পলাতক অবস্থায় তুহিন জেএমবির কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন– এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
/এসআর/