নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচালের ভয় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর

ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ডিক্যাব টক’ এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ১২:০৬ | আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৩ | ১৭:০৪
আগামী জাতীয় নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চলছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হলে দেশের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। এটা আমাদের ভয়। এ মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন। শনিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ‘ডিক্যাব টক’-এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দেশের রাজনীতি নিয়ে বিদেশিদের চাপ, তৎপরতা ও বিরোধী দলের সঙ্গে সংলাপ নিয়ে প্রশ্ন করলে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার অবাধ ও মুক্ত নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিদেশিরা বাংলাদেশে আসছেন, আমরা তাদের স্বাগত জানাই। আশা করছি আমাদের নির্বাচন বিশ্বে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করবে। আশা করি তারাই সার্টিফিকেট দেবে বাংলাদেশে দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন হয়েছে।
আলোচনার এই আয়োজন করে কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)। এতে মূল অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ডিক্যাব সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস ও সাধারণ সম্পাদক ইমরুল কায়েস। এ সময় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মিসরের মতো আমরা বড় রাজনৈতিক দল বাদ দিয়ে নির্বাচন করতে চাই না। আফগানিস্তানের মতো বড় দল বাদ দিয়ে বা মিয়ানমারের মতো নির্বাচন করতে চাই না, যেগুলোকে ওনারা (পশ্চিমা দেশগুলো) ভালো বলে সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আমরা সব দলকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই। কোনো দল অংশগ্রহণ না করলে সেটি তাদের সিদ্ধান্ত। দেশে সন্ত্রাসী দল থাকতে পারে। তারা যদি নির্বাচনে না আসে, তাহলে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে না। তবে যারা রাজনৈতিক দল, তাদের সবাইকে নির্বাচনে যোগ দিতে আমন্ত্রণ জানাই।
বিদেশিদের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হলে দেশের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। এই প্রক্রিয়া যাতে ধ্বংস না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা যুক্তরাষ্ট্র থেকে যারাই আসবেন, তাদের আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের লুকানোর কিছুই নাই। বিদেশিরা এসে নির্বাচন প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করতে পারে। ভালো বিষয়ে পরামর্শ দিলে আমরা স্বাগত জানাব। তারা কেউ কেউ হয়তো নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবেন। সেটা যদি করেন, তাহলে দেশের অমঙ্গল ডেকে নিয়ে আসবেন। নির্বাচন প্রক্রিয়া যাতে ধ্বংস না হয়, এ বিষয়ে সবার সজাগ থাকতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়া ধ্বংস হলে দেশের ভবিষ্যৎ খারাপ হবে। এটা আমাদের ভয়।
কে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে তারা বাংলাদেশের না বাইরের জানতে চাইলে এ সম্পর্কে কিছু বলেননি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেউ কেউ বলছেন যে নির্বাচন করতে দেবেন না। যারা নির্বাচন করতে দিতে চান না, গণমাধ্যমকে তাদের প্রশ্নের সম্মুখীন করা উচিত।
কোনো চাপ নেই জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, আমরা আমাদের নিজেদের তাগিদে স্বচ্ছ ও সুন্দর নির্বাচন করতে চাই, অন্যের পীড়াপীড়িতে নয়। আমাদের গ্রহণযোগ্যতা না থাকলে, আমরা ক্ষমতায় থাকব না। যদি সব দলের আন্তরিকতা থাকে, তাহলে আমরা অবাধ, স্বচ্ছ ও সহিংসতামুক্ত নির্বাচন করব, এ বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারেন।
সংলাপ কার সঙ্গে সে প্রশ্ন তোলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক দল কি সংলাপ করে? ওখানে কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে পদত্যাগ করেন? যুক্তরাজ্যে কি নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন? পাকিস্তান বাদে দুনিয়ার কোথাও কি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা রয়েছে? ফলে সংলাপ বেহুদা আলোচনা। বাংলাদেশের নিয়ম অনুোয়ী নির্বাচন হবে।’
ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বরেলের সংলাপের আহ্বান প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সেটি তাঁর বক্তব্য। আমাদের কোনো আপত্তি নাই যদি তাতে ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকে। তবে আমরা সন্ত্রাসীর সঙ্গে কথা বলব না।
জাতিসংঘের মধ্যস্থতা নিয়ে প্রশ্নের উত্তরে ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশে সংলাপের উদ্দেশ্যে অনেকে এসেছেন, তাতে কোনো কিছু অর্জন হয়েছে বলে ধারণা নাই। জাতিসংঘের অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো যে এসেছিলেন, কোনো প্রস্তাব নিয়ে আসেননি। ভালো কোনো প্রস্তাব কেউ যদি দেন, তাহলে বিবেচনা করা হবে। শুধু ভালো প্রস্তাব হলেই হবে না, তা বাস্তবায়নযোগ্য কিনা সেটি দেখতে হবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আশাবাদ জানিয়ে ড. মোমেন বলেন, মিয়ানমার বলেছে সহায়ক পরিবেশের সঙ্গে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিয়ে রোহিঙ্গা ফেরত নেবে। মিয়ানমার তাদের কথা রাখেনি। তবে তারা কখনও বলেনি যে রোহিঙ্গাদের নেবে না। বিভিন্ন শক্তি ও গোষ্ঠী প্রত্যাবাসন আটকে দিতে পাঁয়তারা করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পাইলট প্রকল্পে অনেকে বাধা দিচ্ছেন। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গোপন নথি ফাঁস হওয়া নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক। এ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দেশে আয় বৈষম্য রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়া শুরু হলে অনেক দেশে বৈষম্য তৈরি হয়। তিনি বলেন, বৈদেশিক ঋণ প্রশ্নে দেশ সজাগ আছে। বাংলাদেশ কোনো নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকতে চায় না বরং সবার সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখে।