ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

কনস্টেবলের মোটরসাইকেল কিনে বিপাকে যুবক

কনস্টেবলের মোটরসাইকেল কিনে বিপাকে যুবক

আব্দুল হামিদ

প্রকাশ: ১০ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ | ১১:৫৮

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কনস্টেবল ফাহিম সিকদারের কাছ থেকে বিনা কাগজপত্রে মোটরসাইকেল কিনে বিপাকে পড়েছেন খিলগাঁওয়ের যুবক পিয়াস মিয়া। পুলিশের সাবেক সদস্য তানভীর এসব বাইক অবৈধভাবে সিলেট সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসেন। পরে সেগুলো পুলিশসহ সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করেন। এসব বাইকে লাগানো থাকে পুলিশের স্টিকার। এতে সেগুলো সাধারণত তল্লাশির মুখে পড়ে না। এ স্টিকার লাগানো বাইক সাধারণ মানুষও ব্যবহার করছেন।

গত ১৭ জুন ডিএমপি সদরদপ্তরের ক্যান্টিনে বসে মোটরসাইকেল বিক্রির টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও ফুটেজ ও অনলাইনে বিভিন্ন গ্রুপে বাইক বিক্রির পোস্টের স্ক্রিনশট এসেছে সমকালের হাতে। এর মধ্যে একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ভুক্তভোগী যুবক কালো গেঞ্জি গায়ে ফাহিমের দিকে তাকিয়ে আছেন। সামনে টাকার বান্ডিল। আর ফাহিম টেবিলের নিচে হাত দিয়ে টাকা গুনছেন। পাশেই মোটরসাইকেলের চাবি।  ভুক্তভোগী যুবক পিয়াস মিয়ার দাবি তিনি একজন বাইকার।সমকালকে বলেন, বাইক সেল বিডি (বাইক কেনাবেচার বাজার) ফেসবুক পেজে নীল-সাদা রঙের একটি আরওয়ানফাইভ বিক্রির পোস্ট দেখে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে ফাহিমের সঙ্গে পরিচয়। পরে বাইক কেনার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি ১৭ জুন ডিএমপি সদরদপ্তরে আসতে বলেন। পরে বাইকের কাগজপত্র চাইলে জানান, ‘কাগজপত্র লাগবে না, আমি আছি তো। কেউ ধরলে আমি দেখব।’ বাইকের সামনে ডিএমপির স্টিকার লাগানো। বাইক কেনার পরও তাদের মধ্যে একাধিকবার কথা হয়েছে। গত ৬ জুলাই পিয়াস আরওয়ানফাইভ ভি-৪ (বর্ডার কোরাস) একটি গ্রুপে সাব্বির নামে একজনের সঙ্গে কথা বলেন। মেসেজের স্ক্রিন শট আছে সমকালের কাছে।

সেখানে দেখা যায়, সাব্বির নামে একটি আইডি থেকে পিয়াসের সঙ্গে বার্তা আদান-প্রদান হচ্ছে। তবে ভুক্তভোগী পিয়াসের দাবি, এই সাব্বিরই ফাহিম। এক পর্যায়ে ফাহিম ভুক্তভোগী পিয়াসের কাছ থেকে বাইক কিনতে রাজি হন। হোয়াটসঅ্যাপে আরিয়ান নামে এক ব্যক্তির ঠিকানায় এস এ পরিবহনের মাধ্যমে কক্সবাজারে বাইক পাঠিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু পিয়াস তাতে রাজি হননি।

পিয়াস বলেন, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে বাইক দেখবে বলে খিলগাঁও থানার সামনে আসতে বলে একটি পার্টি। ওখানে আসার সঙ্গে সঙ্গে চার-পাঁচজন পুলিশ সদস্য সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে নেমেই ঘিরে ধরেন। কাগজপত্র দেখতে চান তারা। এরই মধ্যে গাড়িটি থানার মধ্যে নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা।

পিয়াস জানান, গতকাল সোমবার বিকালে থানায় বাইকটি আনতে গেলে উপপরিদর্শক শামীম জানান, গাড়ির কাগজপত্র না থাকায় জব্দ করা হয়েছে। এখন গাড়ির আগের মালিক ফাহিম এলে দেওয়া হবে। রাত ৮টার দিকে ওই ঘটনায় থানায় জিডি করতে গেলে গ্রহণ করেনি। একই সময় থানায় ফাহিমকে দেখা যায় শামীমের সঙ্গে। এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ওসি ওমর হোসেন মোল্লা বলেন, বিষয়টি ফোনে বলা যাবে না, থানায় আসেন।  

এদিকে পিয়াসকে কক্সবাজারে আরিয়ানের যে ঠিকানায় গাড়ি পাঠাতে বলা হয়, সেই ঠিকানায় যোগাযোগ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। আরিয়ান বলেন, ফাহিমের কাছ থেকে বাইক নিয়েছেন। তাঁর কাছে আরও বাইক আছে। তবে আমরা তানভীরের কাছ থেকে বাইক নিয়ে আসি। তিনিই মূলত অবৈধভাবে সীমান্ত পার করে (টানা বাইক) বাইক দেশে নিয়ে আসেন। তানভীর ও সিদ্দিকের মাধ্যমে ফাহিমের সঙ্গে আরিয়ানের পরিচয়।

পরে কথা হয় তানভীরের সঙ্গে। আরিয়ানের কথা শুনেই জানতে চান পুলিশ সদস্য কত সালের ব্যাচ। ঢাকা থেকে বলছি শুনেই বলেন, আপনার কি বাইক লাগবে, বাজেট কেমন ইত্যাদি। তানভীর বলেন, তিনিও পুলিশ সদস্য ছিলেন। ২০১৬ সালে সিএমপিতে যোগ দেন।  গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় ফাহিম সিকদারকে ফোন দিয়ে মোটরসাইকেলের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই এই নম্বরে আর ফোন দিয়েন না।’

আরও পড়ুন

×