ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

মামলার জালে আটকা ভূমির মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ

মামলার জালে আটকা ভূমির মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ

হকিকত জাহান হকি

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ | ০১:১৭

মামলার জালে আটকে আছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের মাঠ প্রশাসনে নিয়োগ। বিভিন্ন সময়ে ভূমি অফিসের কয়েকজন কর্মকর্তা তাদের পদোন্নতি ছাড়া নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবিতে আদালতে মামলা করেন। নিয়োগ বন্ধ থাকায় জনবল সংকটে আছে সারাদেশের ভূমি অফিস। মামলা চলমান থাকায় নতুন নিয়োগ সম্ভব হচ্ছে না।

ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার রাশিদাবাদ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক মো. আজিজুল হক পদোন্নতি ছাড়া নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার দাবিতে মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আজ বৃহস্পতিবার এটির শুনানি হওয়ার কথা।

এই মামলায় ভূমি মন্ত্রণালয়ে নিয়োগের পক্ষে রায় দেওয়া হলে নতুন নিয়োগের কাজ শুরু হবে। রায় বিপক্ষে গেলে হাতগুটিয়ে বসে থাকতে হবে মন্ত্রণালয়কে।

ভূমি মন্ত্রণালয় সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) মাধ্যমে ১ হাজার ২৭৪ জন (নন-ক্যাডার) ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে চাচ্ছে। এই নিয়োগ-সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। মামলা নিয়ে জটিলতার কারণে এই পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাঠ প্রশাসন) প্রদীপ কুমার দাস সমকালকে বলেন, মামলা-সংক্রান্ত জটিলতা দূর হওয়ার পর নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হলেই বর্তমানে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদোন্নতি প্রক্রিয়া শুরু হবে। এর আগে পদোন্নতির কাজ শুরু হবে না। তিনি আরও বলেন, সর্বোচ্চ আদালতের এক রায়ে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির জন্য ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, নতুন নিয়োগ না দেওয়ায় কার্যক্রমে গতি আসছে না। পিএসপির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হলে বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি হবে না– এ ধারণা সঠিক নয়। কারণ, তাদের পদোন্নতির জন্য ২০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী অফিস সহায়ক মো. আজিজুল হকের বক্তব্য জানার জন্য তাঁর মোবাইল ফোনে বারবার কল দেওয়া হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

উচ্চ আদালতের আরেকটি রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে পদোন্নতির জন্য ২০ শতাংশ হারে সারাদেশে ৩১৮ জন ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার পদ সংরক্ষণ করা হয়েছে। তারা ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা থেকে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি লাভ করবেন।

ভূমি মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিধিমালা-২০১৯ চূড়ান্ত করেছে। এরই আলোকে পিএসসির মাধ্যমে ও মন্ত্রণালয় থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সূত্র জানায় মাঠ পর্যায়ের কিছুসংখ্যক অদক্ষ কর্মচারী পদোন্নতি পেয়ে ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা ও ভূমি সহকারী কর্মকর্তা হতে চান।  তারা ওই দুটি নিয়োগ বিধিমালার বিরোধিতা করছেন। তাদের মধ্যে একাধিক কর্মচারী বিধিমালা দুটি বাতিল চেয়ে আদালতে মামলা করেছেন। এ কারণেও নতুন নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়ার শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। অন্যদিকে মন্ত্রণালয় পিএসসির মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী মাঠ প্রশাসনে কর্মকর্তার পদ ৮টি। এই আটটি পদে মোট ১০ হাজার ৭৪৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিপরীতে বর্তমানে ৫ হাজার ৯১৩ জন কর্মরত আছেন। এই হিসাব অনুযায়ী, শূন্য পদের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৩৬।

সূত্র জানায়, মোট আটটি পদের মধ্যে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা ও ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা পদে জনবল বেশি। সাংগঠনিক কাঠামো অনুযায়ী, সারাদেশে ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তার পদ ৩ হাজার ৪৩০টি। বর্তমানে এই পদে কর্মরত ১ হাজার ৬৬১ জন। সারাদেশে ৪ হাজার ১৪৩টি ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তার পদ থাকলেও কর্মরত আছেন ২ হাজার ৫৩৯ জন। মাঠ প্রশাসনের বাকি ছয়টি পদ হলো– অতিরিক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, উপসহকারী প্রকৌশলী, কানুনগো, সার্ভেয়ার, ড্রাফটম্যান ও চেইনম্যান।

আরও পড়ুন

×