ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

আলোচনা সভায় বক্তারা

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গুম-হত্যা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা

ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গুম-হত্যা ছিল স্বাভাবিক ঘটনা

আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতি‌বেদক

প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৫ | ২২:৩৮

বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিম দেশের মানুষের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো। মানুষের মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। সর্বোপরি জীবন ছিল কারাগারের মতো। এ সময়ে গুম, খুন, গণহত্যা, সীমাহীন দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার সবকিছুই ছিল নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনা।

শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘‘জুলাইয়ের লাল বিপ্লব বনাম সশস্ত্র বাহিনী ‘বিচারহীনতায় বরখাস্ত–বাধ্যতামূলক অবসর–পিএনজি’’’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। এ সভার আয়োজন করে নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিস (এনডিজে)।

সভায় বলা হয়, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও অন্যায়-অবিচারের স্বীকার হয়েছে সশস্ত্র বাহিনী। বিডিআর হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক কর্মকর্তা শহীদ হয়েছেন। গুম, খুন, জেল ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন অনেক কর্মকর্তা। অসংখ্য কর্মকর্তাকে বরখাস্ত বা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এসব ঘটনার এখনও কোনো বিচার হয়নি। 

সভায় কয়েকটি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- 

১. বিগত স্বৈরাচার আমলে (২০০৯-২০২৪) অন্যায়ভাবে জেল, জুলুম, নির্যাতনের শিকার এবং চাকরি হারানো কর্মকর্তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। 

২. কর্মকর্তাদের অন্যায়ভাবে গুম, খুন, জুলুম, নিষ্ঠুর নির্যাতন এবং অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করার সঙ্গে যুক্ত এবং দায়ী সবাইকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

৩. সশস্ত্র বাহিনীর কোনো সদস্যকে তার বাহিনীতে অবাঞ্চিত ঘোষণা করার সামরিক বা বেসামরিক কোনো আইন নেই। এমন নিয়ম পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানে নেই। এমনকি দেশেরও অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নেই। শুধু রাজনৈতিক বা প্রতিহিংসা জনক কারণেই বিগত সময়ে অনেককে বেআইনিভাবে পিএনজি বা অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। এটা একেবারেই অযৌক্তিক, অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা চাই এই নতুন বাংলাদেশে আর কাউকে যেন পিএনজি করা না হয়। একই সঙ্গে  অতীতে করা সব পিএনজি তুলে নেওয়া হয়। এই অন্যায় কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঠিক বিচার এবং ভুক্তভোগীদের সঠিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হয়।

৪. দেশের অস্তিত্ব ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী সশস্ত্র বাহিনীর কোনো বিকল্প নেই। আর তার জন্য দেশপ্রেমিক ও যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত একটি স্বাধীন প্রতিরক্ষা কমিশনের দাবি আমরা অনেকদিন ধরে জানিয়ে আসছি। এই দাবিটাই আমরা পুনরায় উত্থাপন করছি।

৫. মেজর জিয়া একজন সৎ, দেশ প্রেমিক ও অত্যন্ত যোগ্য অফিসার, কিন্তু সেনাবাহিনীতে ক্যু করার নাটক সাজিয়ে তাকে দেশছাড়া করা হয়েছে। আমরা এর ন্যায়বিচারের মাধ্যমে মেজর জিয়ার যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ এবং পুনর্বাসন চাই।

বক্তারা আরও বলেন, জুলাই বিপ্লব আমাদের গর্ব এবং অহংকার। এই জুলাই মাসের লাল বিপ্লবের প্রথম দিনে জুলাই বিপ্লবের একজন সম্মুখ দেশপ্রেমিক অফিসারকে সেনানিবাসে বেআইনিভাবে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা কোনোভাবেই কাম্য নয়। একজন বয়স্ক অসুস্থ মানুষকে ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার অধিকার কারও নেই। এ ব্যাপারে সেমিনারে উপস্থিত সবার সর্বসম্মতিক্রমে ন্যায়বিচারের জন্য রিট করা হবে।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে রাখেন- নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হাসানুজ্জানান চৌধুরী। নেক্সাস ডিফেন্স অ্যান্ড জাস্টিসের সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ হাসান নাসিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- প্রফেসর ভাজ হাশমী, সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ার, কর্নেল মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শহীদুল ইসলাম, আলী আহসান জোনায়েদ, শরিফ ওসমান হাদি, আশরাফ উদ্দিন মাহানি প্রমুখ। 
 

আরও পড়ুন

×