ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া

মারামারি না, শান্তিতে ভোটটা দিতে চাই

মারামারি না, শান্তিতে ভোটটা দিতে চাই

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৩ | ১৮:০০ | আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ | ০১:৩০

কুড়িগ্রামের রাজাপুর উপজেলার আবদুস সালাম গ্রামে কৃষিকাজ করতেন। পোষায় না বলে মাস তিনেক আগে ঢাকায় এসেছেন তিনি। তেজগাঁও শিল্প এলাকায় শমরিতা হাসপাতালের পাশে একটি প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করেন। মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন। এতে সংসার চলে না বলে দিন ১৫ ধরে অফিস শেষে হাতিরঝিলে ফেরি করে তৈরি চা বিক্রি করেন। তাতে দিনে ৪০০ টাকা আয় হয়।

আবদুস সালাম জানালেন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ থাকলে বেশি রাত পর্যন্ত হাতিরঝিলে থাকতে দেয় না পুলিশ। অন্য দিনগুলোতে রাত ১০টা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারেন। গত শনিবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির আগের রাতে ৮টায় হাতিরঝিল থেকে বের করে দেওয়া হয়। শুক্রবার বেশি মানুষ বেড়াতে আসে বলে আয় হয় বেশি। সেদিনের আয় নষ্ট হয়েছে রাজনীতির কারণে। নিজের ক্ষতি হলেও রাজনীতি নিয়ে কোনো মন্তব্য নেই চল্লিশোর্ধ এই শ্রমজীবীর।

রাজনীতির খবর রাখেন না এবং বোঝেন না বলে জানালেন হাতিরঝিলে বসে থাকা ২৪ বছর বয়সী তরুণ আনিসুর রহমান। তাঁর বাড়ি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে। তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় ওয়েল্ডিং মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। গতকাল বুধবার এ তরুণ জানালেন, তিনি কখনও ভোট দেননি। গত জাতীয় নির্বাচনের সময় ঢাকায় ছিলেন। ইউনিয়ন পরিষদ এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাচনেও ভোট দেওয়া হয়নি। ফেসবুকের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ, বিএনপির সমাবেশের খবর পান। সামনে পড়লে ভিডিও দেখেন। তবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আগ্রহ নেই। বাড়িতে থাকা মা-বাবা, স্ত্রী এবং তিন মাস বয়সী কন্যার ভরণপোষণের চিন্তাতেই দিন কাটে তাঁর। আনিসুর বললেন, ‘মারামারি হুড়োহুড়ি চাই না, এলাকায় শান্তিতে ভোটটা দিতি চাই।’

গতকাল রাজধানীর হাতিরঝিল, কারওয়ান বাজার, জিগাতলায় যেসব সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমকালের কথা হয়েছে, তাদের অধিকাংশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও শ্রমজীবী মানুষ। তারা চলমান রাজনৈতিক উত্তাপ নিয়ে কথা বললেও মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত চাকরিজীবীদের অধিকাংশ নিজেদের অভিমত জানাতে রাজি হননি।

কারওয়ান বাজারে চায়ের দোকানে কথা হয় লক্ষ্মীপুরের রামগতির শাহ আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আলাপ করে একটা ভালো নির্বাচন করলেই হয়। যেখানে সবাই সুস্থভাবে ভোট দিতে পারব। এত ক্যাচালের দরকার কী!’

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে কারওয়ান বাজারে চায়ের দোকানে আলোচনা করছিলেন দুই তরুণ ও এক তরুণী। রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অভিমত জানতে চাইলে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলেন তারা। জানালেন, রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে অভিমত জানানো সমীচীন মনে করেন না।

চলতি পথে পাওয়া অনেক সাধারণ মানুষের মনোভাব আওয়ামী লীগ বা বিএনপির চেয়েও কঠোর। আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মনে করেন, বিএনপির মহাসমাবেশের দিনে পাল্টা সমাবেশ ডাকাটা দোষণীয় নয়। বিএনপি বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের বাদ দিয়ে ভোট করা উচিত। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে দোষের কিছু হয়নি বলে মনে করেন তারা।

বিএনপি সমর্থক যারা, তাদের অবস্থান ১৮০ ডিগ্রি বিপরীত। তারা মনে করেন, সব সমস্যার মূলে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতার জোরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাদ দিয়ে গত দুটি নির্বাচনে ব্যাপক ভোট চুরি করেছে। তাদের অধীনে আবার নির্বাচন হলে একই ঘটনা ঘটবে। তাই বিএনপির আরও কঠোর আন্দোলন করা উচিত।

তবে মাঝামাঝি থাকা সাধারণ মানুষ বলছেন, সমাধান ও সহাবস্থানের কথা। প্রকৌশলী ও পোশাক খাতের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা নাহিদুর রহমানের কাছে একই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি টেলিফোনে বলেন, দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয় রাজনৈতিক দলের এমন কোনো কিছু করা উচিত নয়। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে তা নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংলাপ না হলেও আলোচনা করা উচিত। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অঙ্গীকার থাকা উচিত সব দলের।

নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত না হলে পোশাক খাতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, দেশের স্বার্থে সরকারের উচিত সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। আসন্ন নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমাদের যে উদ্বেগ ও তাগিদ রয়েছে, তা দোষণীয় মনে করেন না তিনি।

জিগাতলার ট্যানারি মোড় এলাকায় বারোয়ারি পণ্যের পারিবারিক দোকান রয়েছে মো. মিরাজ হোসেনের। পাশাপাশি হেমায়েতপুরে রয়েছে চামড়ার ব্যবসা। তিনি বলেন, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি হলে ভোগান্তি এবং ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয় সাধারণ মানুষের। অথচ এই মানুষগুলোই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থক। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের সমর্থকদের কষ্টে ফেলছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে এমনিতেই মানুষ কষ্টে আছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থাও খারাপ। এখান থেকে বেরোনোর পথ হলো একটি ভালো নির্বাচন; যেখানে মানুষ নিজের পছন্দে ভোটটি দিতে পারবে।

আরও পড়ুন

×