দলছুট ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরানের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া- ফাইল ছবি
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:৩৩ | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৪:৩৩
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকা ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি এ পদে থাকতে পারবেন না, তাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে–এমন প্রশ্নই এখন নানা মহলে আলোচিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তিনি (ইমরান) শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। আমরা বিষয়টি দেখব।’ অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত উনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এটি (বক্তব্য) দিয়েছেন।’
সোমবার হাইকোর্টের বর্ধিত ভবনের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহম্মদ ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, ড. ইউনূস একজন সম্মানিত ব্যক্তি। তাঁর সম্মানহানি করা হচ্ছে এবং এটি বিচারিক হয়রানি।’ তাকে ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে সই করতে বলা হচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি। তিনি স্বাক্ষর করবেন না জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘…এটি আমার নিজস্ব চিন্তা। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনসহ শতাধিক ব্যক্তি যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার সঙ্গে আমি একমত।’ অবশ্য অ্যাটর্নি জেনারেল তার এ দাবিকে অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, বিবৃতিতে সই করার কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি। কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এমরান আহম্মদ ভূঁইয়ার বক্তব্যে বিব্রত হয়েছেন তার সহকর্মীরাও। তারা বলছেন, অবকাশের (ছুটি) কারণে উচ্চ আদালত বন্ধ রয়েছে। ছুটির দিনে তিনি নিজে উৎসাহী হয়ে প্রেসের জন্য নির্ধারিত ডায়াসে এসে কেন বক্তব্য দিয়েছেন তা বোধগম্য নয়। এর পেছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। এদিকে সরকারের পলিসির বাইরে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় মঙ্গলবার দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় এমরান আহমেদ ভূঁইয়ার ৫১১ নম্বর কক্ষ থেকে তার নামফলক খুলে ফেলা হয়েছে।
এ বিষয়ে অপর এক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘ডেপুটি অ্যাটর্নি হিসেবে রাষ্ট্র এমরান আহম্মদ ভূঁইয়াকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখবেন। অথচ রাষ্ট্রের একজন আইন কর্মকর্তা হয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই তাঁর নেমপ্লেটটি অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে থাকতে পারে না বলে মনে করি। যে কারণে তাঁর নেমপ্লেট খুলে ফেলেছি।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ইমরান আহম্মদ ভূঁইয়া নিজেই পদত্যাগ করুক- এটাই সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা। যদি এমন না হয় তাহলে শিগগিরই তার নিয়োগ বাতিল করা হবে। রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় রয়েছেন। তিনি ৪৩তম ‘আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলন’ এবং ১৮তম ‘পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে’ যোগদান শেষে সিঙ্গাপুরে যাবেন। তিনি ১৬ সেপ্টেম্বর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
উচ্চ আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে বর্তমানে ২১৩ জন আইন কর্মকর্তা রয়েছেন। এর মধ্যে একজন অ্যাটর্নি জেনারেল, তিনজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, ৬১ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ১৪৮ জন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। তারা রাষ্ট্রপতির আদেশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। রিটেইনার ফি হিসেবে তারা সুযোগ সুবিধা ভোগ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল একটি সাংবিধানিক পদ। অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারকে সংবিধান, সাধারণ আইন, আন্তর্জাতিক চুক্তি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আইনগত পরামর্শ দেন। সরকারের পক্ষে আদালতে উপস্থিত থাকেন। বলা হয় অ্যাটর্নি জেনারেল সরকারের আইনগত পরামর্শকও। তিনি মাসিক এক লাখ ৫ হাজার টাকা রিটেইনার ফি (সর্বসাকুল্যে) ভোগ করেন। এ ছাড়া অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মাসিক ৯৫ হাজার ৬০০, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ৯১ হাজার এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ৮১ হাজার টাকা রিটেইনার ফি পেয়ে থাকেন।