মিথ্যা মামলায় সাজার বিধান যুক্ত করে সাইবার নিরাপত্তা বিলের প্রতিবেদন পেশ

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৩:২৩ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ | ১৩:২৩
মিথ্যা মামলা দায়েরকে অপরাধ হিসেবে গণ্যের সুযোগ রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিলের চূড়ান্ত প্রতিবেদন সংসদে পেশ করা হয়েছে। এই অপরাধের সাজা হবে মূল আইনের সমান। রোববার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এ সুপারিশ করেছে। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
গত মঙ্গলবার সাইবার নিরাপত্তা বিল সংসদে তোলা হয়। এরপর বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য পাঁচদিনের সময় দিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। গত ৭ সেপ্টেম্বর সংসদীয় কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং একাধিক সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন চলবে। এরমধ্যে যেকোন দিন বিলটি পাস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কমিটির প্রতিবেদনে বিলের ৩২ নম্বর ধারা বাদসহ কয়েকটি ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিলে নতুন একটি ধারা যুক্ত করে (৩৪ ধারা) বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ক্ষতিসাধনের উদ্দেশ্যে কারও বিরুদ্ধে এ আইনে মিথ্যা মামলা বা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। এই অপরাধে মামলা বা অভিযোগ দায়েরকারী ব্যক্তি এবং যিনি অভিযোগ দায়ের করিয়েছেন তাকে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রয়েছে সে দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। যদি এই আইনের একাধিক ধারায় কোনো মামলা বা অভিযোগ করেন, তাহলে ওই ধারায় বর্ণিত অপরাধগুলোর মধ্যে মূল অপরাধের জন্য যার দণ্ডের পরিমাণ বেশি হয়, সেটাই দণ্ডের পরিমাণ হিসাবে নির্ধারণ করা যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ট্রাইব্যুনাল এ অপরাধের অভিযোগ গ্রহণ ও মামলার বিচার করতে পারবেন।
এ ছাড়া বিলের ২১ ধারায় শব্দগত পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালায় তা অপরাধ বলে কথা বলা আছে। এখানে ‘পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা বা’ এর স্থলে ‘পতাকা সম্পর্কে বিদ্বেষ, বিভ্রান্তি ও কুৎসামূলক’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হবে।
বিলের ৩২ ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ধারায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছিল। ডিজিটাল মাধ্যমে কেউ অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টভুক্ত অপরাধ করলে তার সাজার বিধান করতে এটি যুক্ত করা হয়েছিল।
বিলের ৪২ ধারায় বিনা পরোয়ানায় তল্লালি ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দেওয়া আছে পুলিশকে। এখানে সংশোধনী এনে বলা হচ্ছে, এই ধারায় সাব-ইন্সপেক্টর পর্যায়ের কর্মকর্তার জায়গায় পুলিশ পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তা বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
বিলের ৮ ধারায়ও সংশোধনী আনা হচ্ছে। ডিজিটাল মাধ্যম থেকে তথ্য–উপাত্ত অপসারণ ও ব্লক করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে এই ধারায়। এখানে আগে বলা ছিল, যদি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘প্রতীয়মান’ হয় ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত কোনো তথ্য-উপাত্ত দেশের বা কোনো অংশের সংহতি, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা, ধর্মীয় মূল্যবোধ বা জনশৃঙ্খলা ক্ষুণ্ণ করে বা জাতিগত বিদ্বেষ ও ঘৃণার সঞ্চার করে, তাহলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত তথ্য-উপাত্ত অপসারণ বা ব্লক কবার জন্য, মহাপরিচালকের মাধ্যমে বিটিআরসিকে অনুরোধ করতে পারবে।
এখানে প্রতীয়মান শব্দের জায়গায় ‘তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ সাপেক্ষে, বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে’ প্রতিস্থাপন করা হবে।