ইয়াবা দিয়ে মিথ্যা মামলা
নিজেই ফেঁসে গেলেন ডিএনসির এসআই সাজ্জাদ

গত ৫ ডিসেম্বর সমকালে প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৪১ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৫৯
তরুণীকে ইয়াবা মামলায় ফাঁসানোর ঘটনা প্রমাণিত হওয়ায় মামলার বাদী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) এসআই শেখ মো. সাজ্জাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ফৌজদারি মামলা করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মোশাররফ হোসেন এ আদেশ দিয়ে নতুন মামলাটির তদন্তভার সিআইডিকে দিতে বলেছেন।
আদেশে বলা হয়েছে, এসআই সাজ্জাদ নিজ হেফাজতে থাকা এক হাজার ইয়াবা দিয়ে আসামি তরুণীকে অন্যায়ভাবে ফাঁসিয়েছেন। অবৈধভাবে আটক, মিথ্যা মামলা ছাড়াও নিজের কাছে ইয়াবা রাখা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ জন্য সাজ্জাদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা দেওয়ার জন্য ডিএনসির মহাপরিচালককে নির্দেশ দেন বিচারক।
এতে আরও বলা হয়, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিলকারী ডিএনসির অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমান নতুন এ মামলায় বাদী হবেন এবং তদন্ত করবে সিআইডি।
গত বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোডের কুড়াতলীর বাসা থেকে এক হাজার ইয়াবাসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের এক ছাত্রীকে আটকের পরদিন খিলক্ষেত থানায় মামলা করেন ডিএনসি ঢাকা মহানগর উত্তরের গুলশান সার্কেলের তৎকালীন এসআই সাজ্জাদ হোসেন। বর্তমানে তিনি ডিএনসির পিরোজপুর কার্যালয়ে কর্মরত।
সাজ্জাদ ওই ছাত্রীর বাসায় অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এ নিয়ে গত বছরের ৫ ডিসেম্বর সমকালে ‘মাদক আইনের মারপ্যাঁচে মেধাবী ছাত্রী’ শিরোনামে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

অনুসন্ধানে উঠে আসে, তরুণী ইয়াবা কারবারে জড়িত নন। এলাকায় টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ চালাতেন। এলাকার মাদক কারবারি রায়হানের সন্তানকে পড়াতে রাজি না হওয়ায় তাঁর প্ররোচনায় সাজ্জাদ মাদক মামলায় তরুণীকে ফাঁসান। প্রায় চার মাস পর জামিনে তিনি জেল থেকে মুক্তি পান।
সমকালের প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নজরে এলে দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি হয় এবং তারা প্রতিবেদনের সত্যতা পায়। পরে সাজ্জাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়। এরই মধ্যে তরুণীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কয়েক দফায় পরিবর্তন হয়। সর্বশেষ তদন্ত করেন ডিএনসির খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক আহসানুর রহমান। তদন্ত শেষে সম্প্রতি তিনি তরুণীকে মামলা থেকে অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন।
এতে বলা হয়, এজাহারভুক্ত আসামি তরুণী নির্দোষ। সার্বিক তদন্তে তরুণীর মাদক কারবারির কোনো সাক্ষ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলায় উল্লিখিত সাক্ষী ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তরুণীর ঘরে প্রবেশের আগেই সাজ্জাদের হাতে এক হাজার ইয়াবা ছিল। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে সেই ইয়াবা জব্দ দেখিয়ে মিথ্যা মামলা করেন সাজ্জাদ।
সোমবার ওই তরুণী সমকালকে বলেন, মিথ্যা কখনও সত্য এবং সত্য কখনো মিথ্যা হয় না। মিথ্যা মামলায় সাময়িক ভোগান্তি হয়েছে, প্রায় চার মাস জেল খেটেছি। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, অবশেষে ন্যায়বিচার পেয়েছি।