১০টি কৃষিপণ্য নষ্টে বছরে ২৪০ কোটি ডলার ক্ষতি

বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে সেমিনারে বক্তারা -সমকাল
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:১৫ | আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:১৬
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন খাদ্যশস্য, মসলা ও ফলের একটি বড় অংশই উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়ে নষ্ট হয়। ১০টি কৃষি পণ্যের মধ্যে উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়ে নষ্ট হয় প্রায় ৫১ লাখ ৩০ হাজার টন। যার আর্থিক মূল্য কমপক্ষে ২৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার ডলার। অথচ এক্সরে প্রযুক্তির মাধ্যমে পঁচনশীল বিভিন্ন ফসলের সংরক্ষণ কাল স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানো সম্ভব।
সোমবার বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) ও যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস টেক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ আয়োজনে অনুষ্টিত এক সেমিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) অডিটরিয়ামে এ সংশ্লিষ্ট প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিনার ইলেক্ট্রনিক্স ও স্বাস্থ্য পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. শরিফুল হক ভূঞা। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে পেয়াজে ২০-২৫ শতাংশ, আমে ৩০-৩৫ শতাংশ, কলা, পেপে, পেয়ারা ও লিচুতে ২৫-৩০ শতাংশ, চালে ৮-৯ শতাংশ ডাল ৬-৭ শতাংশ, আলু ১০ শতাংশ এবং আদায় উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়ে ক্ষতি হয় ৫-৭ শতাংশ। এ ১০টি পণ্যের মোট উৎপাদন হয় ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭০ হাজার টন। এর মধ্যে উৎপাদন পরবর্তী পর্যায়ে নষ্ট হয় প্রায় ৫১ লাখ ৩০ হাজার টন। যার আর্থিক মূল্য কমপক্ষে ২৩৯ কোটি ৭৪ লাখ ২০ হাজার ডলার।
সেমিনারে বলা হয়, উৎপাদন পরবর্তী ক্ষতি কমাতে একটি ই-রেডিয়েশন সেন্টার স্থাপন করতে চায় বিনা। যেখানে এক্সরে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পঁচনশীল এসব খাদ্যপণ্যের সংরক্ষণ কাল বাড়ানোর মাধ্যমে উৎপাদন পরবর্তী ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই ই-রেডিয়েশন সেন্টারটি তৈরি হলে বছরে ৩১৮ কোটি ৩২ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পাবে। বিনা এই ই-রেডিয়েশন সেন্টারটি স্থাপন করতে চায় দুই বছরের মধ্যে। বর্তমানে চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি তৈরির কাজ চলছে বলে জানানো হয়।
একই সঙ্গে সবজি ও পঁচনশীল পণ্যগুলোর বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেও এ প্র্রযুক্তি বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানান বক্তারা। তারা বলেন, এসব পণ্যের জীবনকাল কম থাকায় তা সহজে রপ্তানি করা সম্ভব হয় না। একই সঙ্গে সবজি মাঠ থেকে তোলার পর দাগ পড়ে এবং নানা ধরনের পোকামাকড়ের আক্রমণ আসে। যা এ সেন্টারের মাধ্যমে রোধ করা সম্ভব।
বিনার মহাপরিচালক ড. মির্জা মোফাজ্জল ইসলাম বলেন, মাঠ থেকে তোলার পর কোনো কোনো কৃষিপণ্যে আমাদের ক্ষতি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। আমরা কৃষি পণ্য উৎপাদন করছি, রপ্তানির বিশাল বাজার আছে, অথচ আমরা এখনো অনেক পিছিয়ে। এক্সরে প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা আমাদের রপ্তানি দক্ষতা কাজে লাগাতে চাই। এক্সরে প্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য ৩ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
অনুষ্ঠানে প্যাসিফিক উত্তর-পশ্চিম জাতীয় ল্যাবের রিডিউস প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেনিফার এলস্টার বলেন, এক্সরে প্রযুক্তি এখন বিশ্বব্যপী চলছে। আমেরিকা ২০১৫ সালে চালু করেছে। এ প্রযুক্তির খরচও এখন কম।
অনুষ্ঠানে বিএআরসির চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার বলেন, আমাদের কৃষিপণ্য আমদানিতে ব্যয় হয় প্রায় ১৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার। অথচ আমরা প্রচুর পরিমান খাদ্যপণ্য উৎপাদন করছি, যার বড় অংশ নষ্ট হচ্ছে।