ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আপনার ঘর আমি পাহারা দিতে পারব না, তৃণমূল বিএনপিকে সিইসি

আপনার ঘর আমি পাহারা দিতে পারব না, তৃণমূল বিএনপিকে সিইসি

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:০৮ | আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:০৮

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ভোট কক্ষে প্রার্থীকে অবশ্যই পোলিং এজেন্ট দিতে হবে। প্রার্থীর ঘর (ভোট কক্ষ) পাহারা দিতে তিনি পারবেন না। একজন মানুষের পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। ফেরেশতাদের পক্ষে সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির সাবেক নেতাদের নিয়ে গঠিত নতুন নিবন্ধন পাওয়া রাজনৈতিক দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে তিনি এই মন্তব্য করেন। বৈঠকে সিইসির সঙ্গে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে দলটির ১৮ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেন। বিএনপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিলেও এই দলটি আগামী জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল আরো বলেন, নির্বাচনে সরকারের সহায়তার ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে সরকার সহায়তা দিতে বাধ্য। নির্বাচনের সময় দলীয় সরকার ক্ষমতায় থাকবে। তাই সরকার নিরপেক্ষ থাকবে কী–না এ নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনই বাংলাদেশে মূল সরকার।

সিইসি বলেন, নির্বাচন একটা খেলা। ভালো খেলতে না পারলে জেতার আশা করা কঠিন। এর পাশাপাশি যারাই প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন তাঁদেরকে অবশ্যই পোলিং এজেন্ট দিতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি কিন্তু ওখানে (ভোট কেন্দ্রের ভিতরে) বসে আপনার ঘর পাহারা দিতে পারব না। ৪২ হাজার কেন্দ্রে তিন লক্ষ বুথে একজন মানুষের পক্ষে বিভাজিত হয়ে, কুটি কুটি (খন্ড খন্ড) হয়ে একজনের পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এটা ফেরেশতারা পারে। আমরা পারব না। ঐশ্বরিক শক্তি নয়, মানবিক শক্তি দিয়ে যতটা আমাদের পক্ষে সম্ভব পর্যবেক্ষণ করবো।’

রাজনীতিবীদদের অভিজ্ঞতার ওপর জোর দিয়ে সিইসি বলেন, রাজনীতির মাঠে কিভাবে প্রতিপক্ষকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, সেটা আপনাদের জানা আছে। না থাকলে থাকতে হবে। এসময় তিনি নির্বাচনের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সাধ্যমত চেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, 'আপনাদের বলছি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করবো। কিন্তু প্রতিটি বুথে, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে যারা রিয়াল প্রতিদ্বন্দীতা করবে তাদের কিন্তু এজেন্ট থাকবে। আমি দেখেছি এজেন্ট যদি আপনারা ঠিকভাবে নিয়োগ দিতে পারেন, এজেন্ট যদি সাহসী ও অনুগত হয়, সে যদি শক্ত হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আরেকজনের পক্ষে, আপনার বিপক্ষে অনাচার ও কারচুপি করা কঠিন হবে। সেই জন্য বলবো যারা প্রার্থী হবেন তারা যেন শক্তিশালী এজেন্ট দেন। আমরা দেখেছি, অনেক প্রার্থীর এজেন্ট একেবারেই নাই। অনেকে  প্রার্থী এজেন্ট না দিয়েও বলে তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এটা আমাদের নলেজে আসতে হবে আমরা ব্যবস্থা নেবো ।’

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ফলে অন্তর্ভূক্তিমূলক শব্দটি চলে গেছে। ভোট যদি এক পার্সেন্ট পড়ে... মোট ২ লাখ ভোটার তার মধ্যে একজন ১৫০ পেয়েছেন অন্যজন ৫০ পেয়েছেন, তাহলে যে ১৫০ পেয়েছেন সে জিতে যাবে দিস ইজ দ্যা ল। আমি ল সৃষ্টি করি নাই। আমাদের সংবিধান রক্ষা করতে হবে।’

সিইসি বলেন, ‘ভোটারদের ভোট বিমুখতা রাজনৈতিক দলগুলো তৈরি করেছে। মানুষকে ভোট কেন্দ্রে নিতে ইসির প্রচারণা থাকবে। কিন্ত রাজনীতি ও প্রার্থী যারা আছেন তাদের কাজ হবে ভোটারদের কাছে যাওয়া। প্রার্থী যতটা ভোটারের নিকটে যেতে পারবে ইসি পারবে না।’

শমসের মবিন চৌধুরীর সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও তৃণমূল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার মেয়ে ও দলটির নির্বাহী চেয়ারপারসন অন্তরা সেলিমা হুদা প্রমূখ।

বৈঠক শেষে শমসের মবিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, তারা ১২ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য বলেছেন এবং ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের ১২ দফার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনকে সংবিধানে দেওয়া দায়িত্ব ও ক্ষমতা সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে। নির্বাচনের সময় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্বাচন কাজে নিয়োজিত যা নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে এরকম প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ ইসির হাতে থাকতে হবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের দিন প্রত্যেকটি কেন্দ্রে সিসি টিভির ব্যবস্থা করতে হবে। নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও জোরদার করতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা যেতে পারে, এতে জনগণের আস্থা অর্জিত হবে।

আরও পড়ুন

×