নিজের অজান্তেই সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামীণ নারীরা

সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩:১৬ | আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ | ১৩:১৬
দেশে বর্তমানে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার যেমন বেড়েছে তার পাশাপাশি বেড়েছে সাইবার হয়রানি। গ্রামীণ নারীরাও এর বাইরে নয়। ফেসবুক, ইমোসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের অজান্তেই সাইবার হয়রানির শিকার হচ্ছে গ্রামীণ নারী ও কিশোরীরা। ইন্টারনেট সিকিউরিটি সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে এই হয়রানির মাত্রা দিন দিন বাড়ছে।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ সব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। এতে বক্তারা অনলাইনে নারী ও কিশোরীদের যৌন হয়রানিসহ অন্যান্য হয়রানি প্রতিরোধে সচেনতার পাশাপাশি আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ইন্টারনেটে আপত্তিকর ছবি বা ভিডিও ছেড়ে দেওয়া, গোপন তথ্য বা একান্ত ব্যক্তিগত কথা বা ছবি ফাঁস, ব্ল্যাকমেইলি করে টাকা হাতিয়ে নেওয়া অথবা জোর করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি, ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বের জের ধরে আইডি হ্যাক করা, যৌন নিপীড়নমূলক বার্তা পাঠানোর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কিশোরী ও নারীদের হেনস্তা করা হচ্ছে।
বেসরকারি সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ৩৬ শতাংশের বেশি মেয়ে শিশু অনলাইনে যৌন হয়রানির শিকার হয়। ২৭ শতাংশের বেশি মেয়ে-শিশু পরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ও আত্মীয় এবং ১৮ শতাংশ অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়।
বৈশ্বিক আরেকটি জরিপে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মেয়েদের যত হয়রানি করা হয়, তার ৩৯ শতাংশ করা হয় ফেসবুকে, ২৩ শতাংশ ইনস্টাগ্রামে, ১৪ শতাংশ হোয়াটসঅ্যাপে।
আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সচিবালয় সমন্বয়কারী ফেরদৌস আরা রুমী বলেন, আমাদের দেশের গ্রামগুলোতে এখন ফেসবুক, ইমো, হোয়াটসঅ্যাপের মতো বিভিন্ন অ্যাপ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সচেতনতার অভাবে অনেকেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে এবং হয়রানির শিকার হচ্ছে। এই হয়রানি প্রতিরোধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তারা জানান, অনলাইনে সহিংসতা ও সাইবার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা নেওয়ার কিছু হেল্প ডেস্ক রয়েছে। কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সাইবার পুলিশ সেন্টার, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন (পিসিএসডব্লিউ), হ্যালো সিটি অ্যাপ, রিপোর্ট টু র্যাব অ্যাপ, ৯৯৯ এবং এগুলোর ফেসবুক পেইজে অভিযোগ জানানো যায়। মানুষকে এই হেল্প ডেস্কগুলো সম্পর্কে জানার আহ্বান জানান বক্তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির সভাপতি শামীমা আক্তার।
তিনি বলেন, সরকারের উচিত অনলাইনে হয়রানি বন্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফরমগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা। যেন যেকোনো ধরনের ফেইক আইডি, হয়রানিমূলক পোস্ট, অডিও, ভিডিও ইত্যাদির বিরুদ্ধে দ্রুত তারা ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
১৯৯৫ সালে বেইজিংয়ে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের চতুর্থ নারী সম্মেলনে ১৫ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস হিসেবে পালনের কথা বলা হয়। ১৯৯৭ সাল থেকে বিশ্বে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন দিবসটি পালন করছে। বাংলাদেশেও ২০০০ সাল থেকে প্রতিবছর বেসরকারিভাবে দিবসটি পালিত হচ্ছে। আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি জানায়, দেশের ৫০ টির বেশি জেলায় রোববার আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উদযাপন করা হচ্ছে। এ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও র্যালি, সেমিনার, মানববন্ধন, মেলা আয়োজন এবং গ্রামীণ নারীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার জন্য সম্মাননা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
- বিষয় :
- সাইবার হয়রানি
- ফেসবুক
- ইমো