ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোচিং ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে কোচিং ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে: শিক্ষামন্ত্রী

ফাইল ছবি

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৫:৪৮ | আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২৩ | ১৬:১০

নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে বলে সংসদে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি। নোট-গাইড ব্যবসায়ী ও কোচিং বাণিজ্যে জড়িত কিছু শিক্ষক এ বিভ্রান্তি ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত বলেও দাবি করেন মন্ত্রী। তাদের বাণিজ্য বন্ধের আশংকায় ইচ্ছ্কৃতভাবে এটা করছেন বলে শিক্ষামন্ত্রী দাবি করেন।

রোববার সংসদের বৈঠকে ‌ঠাকুরগাঁও বিশ্ববিদ্যালয় বিলের আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এর আগে বিলের সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপণ করলে বিরোধী দলীয় সদস্যরা সমালোচনা করেন।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নতুন জাতীয় শিক্ষাক্রমে পরীক্ষা পদ্ধতি রাখা হয়নি, বিষয়টি একেবারেই সত্য নয়। আগে কেবল ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক পরীক্ষা হতো। আর এখন ধারাবাহিক মূল্যায়ন হয়। প্রতিদিন শিক্ষার্থী কী শিখছে? কেমন করে শিখছে? সক্রিয় অংশগ্রহণ করছে কি না সবকিছুর মূল্যায়ন হয়। সেই মূল্যায়ন নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে..  এজন্য অ্যাপস তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষকরা সহজে মূল্যায়ন করতে পারবেন। এখন ম্যানুয়ালি করতে হচ্ছে বলে একটু সমস্যা হচ্ছে। নতুন যেকোন কিছু গ্রহণের ক্ষেত্রে তো অনেক রকম বাধা থাকে, যার কারণে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, কেউ কেউ বলছেন গুটি কয়েক অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক, গুগল থেকে দিচ্ছে। কেবল বই নয়, এখন নানারকম সোর্স থেকে শিক্ষার্থীরা তথ্য নেবে। সেগুলো নিয়ে গ্রুপ ওয়ার্ক করবে এবং উপস্থাপন করবে।

নতুন শিক্ষাক্রম চালুর কারণ উল্লেখ করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিশ্বমানের যে শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয় সেখানে তফাৎটা কোথায়- এটা নিয়ে বার বার আলাপ হয়েছে। সফট স্কিলের জায়গায় আমরা বারবার পিছিয়ে পড়ছি। আমরা কমিউনিকেট করতে পারছি না। আমাদের সূক্ষ্ম চিন্তার দক্ষতা, আমাদের সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের দক্ষতা, আমাদের কোলাবরেশনের দক্ষতা, দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা—এখন এই কাজটি একবারে শৈশব-কৈশোর থেকে রপ্ত করবে। সেটা না করলে একেবারে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে সেগুলোকে ক্যাপসুল আকারে গিলিয়ে খাওয়াতে দিলে সম্ভব হয় না। এ জন্য নতুন শিক্ষাক্রমে এই বিষগুলো শেখানো হচ্ছে।’

শিক্ষার্থীদের বাড়ি থেকে ডিম ভাজি ও আলু ভাজি করে আনার অভিযোগের ব্যাখ্যা দিয়ে দীপু মনি বলেন, ডিম বাজি, আলু ভর্তার কথা প্রায়শই বলা হচ্ছে। এটি একেবারেই অপপ্রচার। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ১২১টি অধ্যায় আছে। এর মধ্যে জীবন-জীবিকার একটি অধ্যায় হচ্ছে রান্না। সেই রান্নাটি কেন? আমাদের শিক্ষার্থী দেখে বাড়িতে মা কিংবা অন্য কোনো একজন রান্না করে। সেই বিষয়টি যে জরুরি, সে তা শেখে না। একজন মানুষ যখন রান্না করবে সে রান্নার বিষয়টি চিন্তা করবে। ১২১টি অধ্যায়ের মাত্র একটি এবং সারা বছরে একদিন বিদ্যালয়ে পিকনিক করে রান্নাটা দেখবে। এটা বাড়িতে নয়, যেটা বাড়িতে দেওয়া হচ্ছে সেটা শিক্ষকের না বোঝার ফল। সেজন্য শিক্ষকদের বার বার প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষাক্রম নিয়ে কেউ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এমন মন্তব্য করে ড. দীপু মনি বলেন, যারা কোচিংয়ে ব্যস্ত থাকেন, কোচিং ব্যবসায়ীরা এটাকে বিকৃত করার জন্য কিছুটা বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। শহরের কিছু বিদ্যালয় এটা করছে। তাদের কড়া নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বাচ্চারা স্কুলে পিকনিক করে রান্না শিখবে। এই রান্নার মধ্যে খাদ্য, পুষ্টি.. এই রান্না করাটাও যে একটা আর্ট। এর মধ্যে একটা পরিমিতিবোধ থাকতে হয়। অনেক সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় তার সবকিছুই শিখবে। আমরা কী পিকনিক করিনি? কাজেই এটা একটা অপপ্রচার। বাড়ি থেকে রান্না করে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। যারা করছেন তারা এটা প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য করছেন।’

তিনি বলেন, আর্টপেপার কিনতে হবে.. ব্যয়বহুল, এটাও না বুঝার ফল। আর্টপেপার কেনার কথা নয়, বাড়িতে পুরনো খবরের কাগজ, ক্যালেন্ডার ইত্যাদি ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে। এটাও কিছু শিক্ষকরা ইচ্ছাকৃতভাবে করাচ্ছেন। আর মোরগ পালন মোটেই করতে হবে না। এখানেও একটি বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছে।

আন্দোলনকারীদের পেছনে কতিপয় শিক্ষকদের জড়িত থাকার অভিযোগ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কয়েক জায়গায় মানববন্ধন দেখেছি। আমরা তদন্ত করেছি। সেখানকার স্কুলগুলো জানিয়েছে, এই অভিভাবকরা তাদের অভিভাবক নন। তারা মূলত কোচিং ও নোট-গাইড ব্যবসায়ী। তারা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, তাদের ব্যবসা হয়তো উঠে যাবে। হাতে-কলমে লিখে লিখে পরীক্ষা রাখার অর্থই হচ্ছে আমরা কোচিং ব্যবসাটা চালু রাখতে চাই।’

নতুন শিক্ষাক্রমে এরই মধ্যে ফল পাওয়া শুরু হয়েছে দাবি করে শিক্ষা মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যেটা দরকার শিক্ষার্থীদের থেকে আমরা সেই দক্ষতাটা পাচ্ছি। তারা কিন্তু অনেক কিছু লিখছে। এখন একটা কিছু লিখতে দেন, লিখে দিতে পারে। বলতে দেন, বলতে পারে। বানিয়ে দিতে বলেন, বানিয়ে দিতে পারে।’

আরও পড়ুন

×