উষ্ণায়ন না কমলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে ১০ মিটার

.
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩ | ০১:২৫ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫:৩২
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বরফাচ্ছাদিত হিমালয় গলে বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। এতে বাংলাদেশ, চীন, ভারত ও নেদারল্যান্ডসের মতো দেশগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে। হুমকির মুখে রয়েছে ব্যাংকক, বুয়েন্স আয়ার্স, জাকার্তা, লাগোস, লন্ডন, লস অ্যাঞ্জেলেস, মুম্বাই, মাপুতো, নিউইয়র্ক ও সাংহাইয়ের মতো বড় শহরগুলো। এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল শুক্রবার দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে (কপ২৮) বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়।
জলবায়ু সম্মেলনের প্রধান সায়মন স্টিল বিশ্ব সম্প্রদায়কে সতর্ক করে বলেছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে ব্যর্থ হলে আগামী ২ বছরের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ মিটার বাড়তে পারে। কার্বন নির্গমন রোধে ব্যর্থ হওয়ার আসন্ন বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক করেন তিনি।
জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সেক্রেটারি সায়মন স্টিল এক্সপো সিটি দুবাইয়ে ২৮তম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের একটি পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে এ সতর্কতার কথা জানান।
জাতিসংঘের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ১৯০০ সাল থেকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা দ্রুত বাড়ছে। অন্যদিকে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে নদীভাঙন, জলোচ্ছ্বাস বাড়ার কারণে প্রায় দুই কোটি মানুষ গৃহহীন হবে, এমন পূর্বাভাস পরিবেশ ও জলবায়ু-সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর।
গত ৩০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া সম্মেলন দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়েছে। স্টিল সবগুলো পক্ষকে সতর্ক করেন, আগামী দুই বছরে নির্গমন রোধ করা না গেলে বিপর্যয়কর পরিণতির সঙ্গে অপরিবর্তনীয় টিপিং পয়েন্টের দিকে নিয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, আপনি যদি আগামী দুই বছরের মধ্যে নির্গমন বক্ররেখা বাঁকানো শুরু না করেন, আমরা জটিল সন্ধিক্ষণে পড়ে যাব।
এদিকে সম্মেলনে জলবায়ু বিজ্ঞানীরা দেড় ডিগ্রি উষ্ণতাকে একটি সীমারেখা হিসেবে দেখেন। তাপমাত্রা যদি এর বাইরে চলে যায়, তাহলে মারাত্মক বন্যা, খরা, দাবানল ও খাদ্য সংকটের ঝুঁকি তৈরি হবে। তারা বলেছেন, আমরা যদি এই মূল সীমারেখা অতিক্রম করি, আমরা গ্রহের দৃষ্টিকোণ থেকে কখনও ফিরে যেতে পারব না। দেড় ডিগ্রি একটি বাস্তব সীমা; কোনো পছন্দ নয়।
দেড় ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা বাড়লে আমরা অপরিবর্তনীয়ভাবে বরফের চাদর হারাতে পারি। এমনটা হলে বিশ্বজুড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১০ মিটার বেড়ে যাবে। এটি বেশির ভাগ উপকূলীয় শহর ও অঞ্চলের কেন্দ্রীয় অংশগুলো প্লাবিত করবে। কয়েক লাখ মানুষ স্থানান্তরিত হবে এবং আমরা সম্ভবত সমস্ত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় প্রবাল প্রাচীর সিস্টেমগুলো হারিয়ে ফেলব, যার ওপর কয়েক লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্ভরশীল।
জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে ফের উদ্বেগ
জলবায়ু সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আল জাবের গতকাল জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনের চূড়ান্ত পাঠে জীবাশ্ম জ্বালানির ফেজ-ডাউন অন্তর্ভুক্ত করার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি জানান, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ২০৩০ সালের মধ্যে কমিয়ে আনা এবং বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারে বিশ্বের ১১৮টি দেশ ইতোমধ্যে সম্মত হয়েছে।
প্রতি বছর জলবায়ু সম্মেলন হলেও সঠিক কর্মপন্থার অভাবে তেমন সুফল বয়ে আনে না। এ নিয়ে সম্মেলন কেন্দ্রের বাইরে বিক্ষোভ করেন পরিবেশবাদীরা। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্ল্যাকার্ড হাতে উপস্থিত হয়েছেন শত শত বিক্ষোভকারী।
- বিষয় :
- কপ২৮
- বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন