ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন

জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ-আউটের সম্ভাবনা ক্ষীণ

জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ-আউটের সম্ভাবনা ক্ষীণ

ছবি: সমকাল

আবু সালেহ রনি

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৯:২৪ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৩ | ১৫:২৯

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সঙ্কট থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বকে বাঁচাতে এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আর এজন্য জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর ঐক্যমত প্রয়োজন। তবে সম্মেলন শেষ হওয়ার আগের দিনেও এ নিয়ে কোনো সুখবর হয়নি এখনো। এ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও।

সোমবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত জালবায়ু সম্মেলনে এক সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি ফেজ-আউটের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারলে কপ-২৮ সম্মেলন সফল হবে। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনকারী দেশগুলোর এবারের সম্মেলনে এ বিষয়ে সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এরপরেও জাতিসংঘের মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আমাদের একটি উচ্চাভিলাষী ফলাফল দরকার যা জলবায়ু সংক্রান্ত সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এবারের সম্মেলনে অনেক দিককে কভার করা সম্ভব হয়েছে। যাতে একটি বিশ্বব্যাপী ভারসাম্য সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। আমাদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা দেড় ডিগ্রীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এই লক্ষ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি সময় কাঠামোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবাশ্ম জ্বালানী ব্যবহার পর্যায়ক্রমে শেষ করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। এর মানে এই নয় যে সব দেশকে অবিলম্বে জীবাশ্ম জ্বালানি বন্ধ করতে হবে।

গত ৩০ নভেম্বর সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুবাইয়ের এক্সপো ২০২০ সিটিতে শুরু হওয়া এই জলবায়ু সম্মেলন আগামীকাল মঙ্গলবার শেষ হবে। অথচ নানা ইস্যুতে এখনও বিভিন্ন দেশ ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি। জাতিসংঘ মহাসচিব অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতিনিধিদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জীবাশ্ম জ্বালানি হ্রাসের জন্য পর্যায়ক্রমিক পদ্ধতিতে ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নি:সরন শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্য অর্জন করতে হবে। একই সঙ্গে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সীমা ১ দশমিক পাঁচ শূন্য ডিগ্রীর মধ্যে রাখতে বিশ্বকে এক সারিতে আসতে হবে। তিনি বলেন, এখানে সাধারণ কিন্তু ডিফারেনসিয়েটেড রেসপনসিবিলিটিস (সিবিডিআর) নীতি প্রয়োগ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যখন সম্মেলনের সমাপ্তি সীমার কাছে যাচ্ছি, আমার মূল বার্তাটি পরিষ্কার-আমাদের অবশ্যই একটি উচ্চাকাঙ্খী ফলাফলের সাথে সম্মেলনটি শেষ করতে চাই। যা ১ দশমিক পাঁচ শূন্য ডিগ্রির লক্ষ্যমাত্রাকে জীবিত রাখতে এবং জলবায়ু সংকটের প্রথম সারিতে থাকা ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পরিকল্পনা প্রদর্শন করতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিবের মতে, সমঝোতার বিষয়ে এখনও অনেক বড় ফাঁক রয়েছে যা পূরণ করা দরকার। এখন সর্বোচ্চ উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সর্বাধিক নমনীয়তার সময়। জাতিসংঘের প্রধান বলেন, মন্ত্রী ও আলোচকদের অবশ্যই নিজ নিজ রেড লাইন থেকে সরে আসতে হবে। এটাই সময় ওভারড্রাইভে যাওয়ার জন্য সরল বিশ্বাসে আলোচনা করার এবং কপ প্রেসিডেন্ট ড. সুলতান আহমেদ আল জাবের সেটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবেন বলে আশা করছি। তিনি বলেন, বিজ্ঞানের সঙ্গে আপস না করে বা সর্বোচ্চ উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রয়োজনের সঙ্গে আপস না করে সমাধানের জন্য আপোষ করার সময় এসেছে।

জীবশ্ম জ্বালানি ফেজ–আউটের বিষয়ে জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত সাবের হোসেন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ফসিল ফুয়েল ফেজ আউট করে পৃথিবীর বৈশ্বিক তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে রাখতে হলে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার বাতিল করতে হবে। এ নিয়ে আমরা যদি ঐক্যমত হতে না পারি, তাহলে আমাদের জলবায়ু অভিযোজনের ওপর বিশাল প্রভাব পড়বে।’

তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই আমাদের অভিযোজন খরচ বাড়ছে। গত বছর ৩.৪ মিলিয়ন ডলার আমরা নিজেদের থেকে দিয়েছি। এটি প্রতি বছরই বাড়ছে। এছাড়া জলবায়ু তহবিলে ১০০ বিলিয়ন ডলারের কথা বলা হয়েছে, যেগুলো বাংলাদেশসহ অন্যান্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো পাবে। কিন্তু এই সংখ্যাটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, এটাকে বিজ্ঞানসম্পন্ন করে নির্ধারণ করা জরুরি।’

আরও পড়ুন

×