এক দশকেও শেষ হলো না বিচার পাওয়ার অপেক্ষা

.
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ০২:১১ | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | ১০:০৩
চাপা কষ্ট আর দীর্ঘশ্বাস সঙ্গী করে ১০ বছর ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন খুরশিদা বেগম। তাঁর বুকের নিধি ইশতিয়াক হোসেন জনিকে তো আর কোনোদিন ফিরে পাবেন না। তবে প্রাণপ্রিয় সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর জন্য দায়ীদের সাজা কার্যকর দেখে যেতে চান। এটুকু সান্ত্বনা নিয়ে কাটাতে চান জীবনের শেষ দিনগুলো। তাই কিছুদিন পরপরই ছোট ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন– কবে শেষ হবে বিচার।
এক দশক আগে রাজধানীর পল্লবীতে পুলিশ হেফাজতে নির্মম নির্যাতনে মারা যান গাড়িচালক জনি। এ ঘটনায় নির্যাতন এবং হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনে মামলা হয়। এটি ছিল ওই আইনে দায়ের প্রথম মামলা, এখনও যার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে বিচারের রায় ঘোষণার পর আসামিপক্ষ আপিল করে। এত দিনেও রায়ের পেপারবুক তৈরি না হওয়ায় শুনানি বিলম্বিত হচ্ছে। অথচ এক মাসের মধ্যে পেপারবুক তৈরির আদেশ দিয়েছিলেন আদালত। আর আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবার ক্ষতিপূরণও পাচ্ছে না।
তিনি জানান, জনি হত্যায় দণ্ডিতদের মধ্যে পুলিশ সদস্য এএসআই কামরুজ্জামান মিন্টু এখনও পলাতক। দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর পুলিশের সোর্স মো. রাসেল গ্রেপ্তার হলেও এখন জামিনে আছেন। আর পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল হাসান ও পুলিশের সোর্স সুমন কারাগারে।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পল্লবী-১১ নম্বর সেকশনের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গাড়িচালক জনি ও তাঁর ভাই রকিকে আটক করে পুলিশ। তাদের পল্লবী থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে পরদিন জনির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ইমতিয়াজ হোসেন রকি বাদী হয়ে ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলা করেন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
পুলিশ ও আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে তিন পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন এবং দুই সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দণ্ডিত পুলিশ কর্মকর্তাদের ভুক্তভোগীর পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়।
আইনজীবীরা বলছেন, মামলার দীর্ঘসূত্রতার কারণে ভুক্তভোগীর পরিবার যে ভোগান্তির শিকার হয়, তা থেকে উত্তরণের জন্য রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট নীতিমালা ও মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির পদক্ষেপ থাকা প্রয়োজন। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তি বা তাঁর ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণ দিতে কল্যাণ তহবিল গঠন করা দরকার।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী রকি বলেন, দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে কাঙ্ক্ষিত রায় পেলেও আমাদের অপেক্ষা শেষ হয়নি। দ্রুত আপিল নিষ্পত্তি হলে দোষীদের সাজা কার্যকর হতে পারত। সেই সঙ্গে আমরা ক্ষতিপূরণের অপেক্ষায় আছি। পাশাপাশি নিহত জনির সন্তানদের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য রাষ্ট্রের প্রতি দাবি জানাচ্ছি।
- বিষয় :
- পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন
- মৃত্যু