ঢাকা সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫

দেশে কিডনি রোগে ভুগছে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ

দেশে কিডনি রোগে ভুগছে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ

গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। ছবি: সমকাল

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ১৭:৪২ | আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪ | ১৮:৪৬

দেশে কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে প্রায় ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ। যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে জীবনযাপন করলে ৫০ থেকে ৬৯ ভাগ কিডনি রোগ প্রতিরোধ সম্ভব। তবে এ রোগ প্রতিরোধের ঠিকভাবে বার্তা পায় না মানুষ। 

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২৪’ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। বৈঠকের আয়োজন করেন ‘কিডনি এওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।

বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠা ও সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। তিনি বলেন, কিডনি রোগের চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। চিকিৎসা করতে গিয়ে পুরো পরিবার নিঃস্ব হয়ে যায়। অনেকে টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারেন না। ফলে কিডনি রোগে আক্রান্ত অধিকাংশ মানুষের মৃত্যু হয়। এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে ‘কিডনি সুরক্ষা বীমা’ চালু করা জরুরি।

ডা. সামাদ বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুবরণ করবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির বেশি মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্য এর মধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে মরণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতি বছর ১ কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হয়, যার ৮৫ ভাগই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। উন্নত দেশে কিডনি বিকলের চিকিৎসা করতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার শতকরা ১৬-১৮ ভাগ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালাইসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে, শতকরা ১০ জন কিডনি বিকল রোগী তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ ভাগ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। 

প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, রোগ হয়ে গেলে অনেক ঝামেলা। আমাদের টার্গেট থাকবে কিডনি রোগ হওয়ার আগে। আমাদের সচেতনতার মাধ্যমে প্রতিরোধ করতে হবে। সাংবাদিক, ধর্মীয়গুরু, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষকসহ সমাজের নেতৃত্ব পর্যায়ের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। 

তিনি আরও বলেন, কিডনি বীমার বিষয় আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে আলোচনা করব। তবে সরকার গ্রাম পর্যায়ে রোগ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ মানুষ রয়েছে, যারা বিভিন্ন ধাপে কিডনি রোগে আক্রান্ত। সমঅধিকার যদি চাই, তাহলে বীমা ছাড়া কোনো উপায় নেই। একজন মানুষ চিকিৎসা করতে গিয়ে কেন দেউলিয়া হবে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের সেদিকে নজর রাখতে হবে।

তিনি বলেন, আমাদের শস্য অনেক ভালো, আমাদের খাদ্যে কোনো ঘাটতি নেই। কিন্তু সমস্যা হলো আমাদের খাদ্যগুলো তৈরি করার জন্য অনেক পরিমাণ কীটনাশক দেওয়া হয়। এই কীটনাশকযুক্ত খাবারগুলো আমাদের কিডনির সমস্যার জন্য দায়ী, এটা প্রমাণিত। তবে আমরা কিন্তু দেখিনি খাদ্যে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে কী পরিমাণ কিডনি রোগ বাড়ছে।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান বলেন, কিডনি রোগ ৭০-৮০ শতাংশ প্রতিরোধে সম্ভব। আমরা প্রতিরোধের কথা বলি, মানুষ শুনছে না। কিন্তু আমরা কেউ গবেষণা করিনি যে কীভাবে বললে মানুষ শুনবে।

আরও পড়ুন

×