রাষ্ট্রপতি বিল ফেরত পাঠানোয় শ্রম আইন সংশোধন হয়নি
আইএলওকে বাংলাদেশ

ছবি-সংগৃহীত
তাসনিম মহসিন
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৪ | ০০:৫৪ | আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৪ | ০৬:০৭
শ্রমিকবান্ধব শ্রম আইন করতে জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও), ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিদ্যমান আইন সংশোধনের অঙ্গীকার রয়েছে ঢাকার। আর এ নিয়ে একটি পথনকশাও ঢাকার পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। তবে ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে শ্রম আইনের সংশোধন বিল রাষ্ট্রপতি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে ফেরত পাঠালে তা পাস হয়নি।
তবে বর্তমান সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বিলটি পাস হবে বলে আইএলওকে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এ প্রতিশ্রুতিও রক্ষা করতে পারেনি ঢাকা। এরই মধ্যে প্রথম অধিবেশন শেষ হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার জেনেভায় আইএলওর গভর্নিং বডির ৩৫০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের শ্রম পরিস্থিতির অগ্রগতি নিয়ে শুনানি হবে। এতে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকে একটি প্রতিনিধি দল জেনেভায় গিয়েছে। শুনানিতে শ্রম অধিকার রক্ষায় সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির অগ্রগতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে।
আইএলওকে বাংলাদেশ সরকার জানুয়ারি মাসে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়। তাতে বলা হয়েছে, আইএলওসহ সংশ্লিষ্টদের সুপারিশ অনুযায়ী বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধনের প্রক্রিয়া শুরু করে। সে অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধনের বিলটি শুরুতে মন্ত্রিসভা এবং পরে গত সরকারের সংসদের শেষ অধিবেশনে পাস হয়। এর পর বিলটি রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। তবে রাষ্ট্রপতি কিছু পর্যবেক্ষণ দিয়ে বিলটি ফেরত পাঠান। এর পর ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নতুন সরকার সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করে। রাষ্ট্রপতির সুপারিশ ও আইন পর্যালোচনা কমিটির আলোচনার পর গত ২৩ জানুয়ারি শ্রম আইনে আরও সংস্কার এনে চূড়ান্ত করা হয়।
চূড়ান্ত সংশোধনটি ন্যাশনাল ট্রাইপ্যাট্রিয়েট কনসালটেটিভ কাউন্সিলের (এনটিসিসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে অনুমোদন হলে তা মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। আশা করা যায়, সংসদের প্রথম অধিবেশনেই বিলটি পাস করা হবে।
এ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বিলটি সংসদের প্রথম অধিবেশনে ওঠেনি। গত ৫ মার্চ প্রথম অধিবেশন শেষ হয়।
অগ্রগতি প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বলেছে, শ্রম অধিকার, নিরাপত্তাসহ শ্রম খাতের সংস্কার নিয়ে ২০২১-২০২৬ সালের পথনকশা বাস্তবায়নে সরকার আন্তরিক। এ খাতের প্রশাসনিক, আইনি ও নীতিগত সংস্কার নিয়ে সাম্প্রতিক অগ্রগতির প্রতিবেদন এরই মধ্যে সরকার জমা দিয়েছে। এতে অগ্রগতির মধ্যে রয়েছে ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রম, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা, মজুরি, দক্ষতা উন্নয়ন এবং শ্রমকল্যাণ। সাম্প্রতিক সময়ে গভর্নিং বডির বৈঠকে সরকারের এসব প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে।
সরকারের দেওয়া পথনকশায় আইনি ও প্রশাসনিক সংস্কারগুলো জড়িত। এর সঙ্গে আইন বাস্তবায়ন ছাড়াও প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয় রয়েছে। এতে প্রধান চারটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। সেগুলো হলো শ্রম আইনের সংস্কার, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শন ও আইন প্রয়োগ এবং অন্যায্য শ্রম চর্চা, শ্রমিকের বিরুদ্ধে সহিংসতা, ট্রেড ইউনিয়নের বিষয়ে বৈষম্য।
আইএলও চাইছে, শিল্পকারখানায় ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে শ্রমিকদের স্বাক্ষরের হার ১০ শতাংশ করা হোক। তবে এ ক্ষেত্রে শ্রমিক ও মালিকপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে যা সিদ্ধান্ত নেবে, তা বাস্তবসম্মত হিসেবে মনে করে সরকার। ট্রেড ইউনিয়ন গঠন, শ্রম পরিদর্শন, সমাবেশের স্বাধীনতার মতো বিষয়গুলোতে আইএলও এখনও সন্তুষ্ট হতে পারেনি। তবে ত্রিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে এগুলো সংস্কারে জোর দিয়ে আসছে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ শ্রম আইন সংস্কারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তার সব কয়টিরই অগ্রগতি আগামী ৩৫২তম সেশনে দেখতে চায় আইএলও।
জানা গেছে, আইএলওর এবারের শুনানিকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ, করোনার কারণে প্রতিশ্রুত পথনকশার অনেক কিছুই সরকার এখনও পালন করতে পারেনি। এ বিষয়গুলো আইএলওকে এরই মধ্যে জানানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ে ২০২৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী শ্রম আইন সংশোধনের সবকিছুই করা হবে, সেই প্রতিশ্রুতিতে এখনও অটল রয়েছে ঢাকা।
নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে শ্রম আইনের সংশোধন সহজ কোনো বিষয় নয়। তবে সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক। বিষয়গুলো আইএলও বা ইইউ বুঝতে পারে। এ বিষয়ে অংশীদাররা সরকারকে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। তবে ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে। তাই এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে যে আইএলওর শুনানিতে যাতে তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে শক্ত কোনো অবস্থান না নেয়; বরং শ্রম বিষয়ে ইতিবাচক সংস্কারে বাংলাদেশের সহযোগী শক্তি হিসেবে ঢাকা ওয়াশিংটনকে দেখতে চায়, সে বার্তাই তাদের দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের দেওয়া অগ্রগতির প্রতিবেদনে শ্রম খাতের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ, ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন সহজীকরণ, অনলাইনে ট্রেড ইউনিয়ন নিবন্ধন, শ্রম পরিদর্শক নিয়োগ, আরও শ্রম আদালত গঠন, হেল্প লাইন স্থাপন, পুরোনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, সচেতনতা বাড়ানোসহ বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের অগ্রগতি তুলে ধরা হয়েছে।
- বিষয় :
- রাষ্ট্রপতি
- সংসদ
- আইএলও