ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ট্রান্সকমের সিমিনের বিরুদ্ধে এবার ভাই হত্যার মামলা

ট্রান্সকমের সিমিনের বিরুদ্ধে এবার ভাই হত্যার মামলা

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রয়াত লতিফুর রহমানের বড় মেয়ে সিমিন রহমান ও ছোট মেয়ে শাযরেহ হক

বিশেষ প্রতিনিধি 

প্রকাশ: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ১২:১৭ | আপডেট: ২৪ মার্চ ২০২৪ | ১২:৪১

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিমিন রহমানের বিরুদ্ধে এবার ভাই হত্যার অভিযোগ আনলেন তাঁর ছোট বোন শাযরেহ হক। গত শুক্রবার গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছেন তিনি। মামলায় আরও ১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। 

মামলার অপর আসামিরা হলেন– সিমিন রহমানের ছেলে কোম্পানির হেড অব ট্রান্সফরমেশন যারেফ আয়াত হোসেন, এসকেএফ ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপক ডা. মুরাদ এবং পরিচালক (বিপণন ও বিক্রয়) ডা. মুজাহিদুল ইসলাম, ট্রান্সকম গ্রুপের পরিচালক (অর্থ) কামরুল হাসান, আইন কর্মকর্তা ফখরুজ্জামান ভূঁইয়া, ব্যবস্থাপক (করপোরেট অ্যাফেয়ার্স) কেএইচ মো. শাহাদত হোসেন, কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ও সেলিনা সুলতানা এবং গ্রুপের কর্মচারী রফিক ও মিরাজুল।

ট্রান্সকম গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত লতিফুর রহমানের ছোট মেয়ে মামলার অভিযোগে বলেছেন, তাঁর বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান গত বছরের ১৬ জুন রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা যান। বড় বোন সিমিন রহমানসহ আসামিরা আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে বিষ প্রয়োগ বা শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন।

শাযরেহ হক এজাহারে বলেছেন, বাবা লতিফুর রহমান মারা যাওয়ার পর ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান, বোন সিমিন রহমান এবং তিনি নিজে তাঁর বাবার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মুসলিম শরিয়া আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ। কিন্তু সিমিন রহমান ও তাঁর ছেলে যারেফ আয়াত হোসেন বিভিন্ন জাল কাগজপত্র তৈরি করে স্থাবর সম্পত্তিসহ ট্রান্সকম গ্রুপের শেয়ার ও পজিশন থেকে তাঁকে এবং তাঁর ভাইকে বঞ্চিত করেন। এসব বিষয় জানার পর বড় ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের সঙ্গে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩ সালের ৮ জুন আরশাদ ওয়ালিউর রহমান শাযরেহ হককে আমমোক্তারনামা দেন। 
এজাহারে আরও বলা হয়, আরশাদ ওয়ালিউর ‘ডিভোর্সি ও নিঃসন্তান’ ছিলেন। আমমোক্তারনামা  দেওয়ার কারণে সিমিন রহমান তাঁর ভাইয়ের ওপর চরম ক্ষিপ্ত হন। এ কারণে তিনি কাছের মানুষের কাছে জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। আমমোক্তারনামা দেওয়ার আট দিনের মাথায় ১৬ জুন বাবা লতিফুর রহমানের পুরোনো গৃহকর্মী মোসলেম হাওলাদারের মাধ্যমে ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমান গুরুতর অসুস্থ বলে জানতে পারেন। এরপর ভাইয়ের গুলশানের বাসায় যান। সেখানে গিয়ে তাঁর ভাইকে বিছানায় মৃত অবস্থায় দেখতে পান। যেখানে আগে থেকে সিমিন রহমান, যারেফ আয়াত হোসেনসহ মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই ছিলেন।

শাযরেহ হক দাবি করেন, তাঁর ভাই কোনো জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন না। মারা যাওয়ার ঘটনার ৩-৪ দিন আগে থেকে তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে তিনি কোনো যোগাযোগ করতে পারেননি বলেও মামলায় বলা হয়েছে। সিমিন রহমান ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের মৃতদেহ হাসপাতালে নিয়ে মৃত্যুর সনদ তাড়াতাড়ি গ্রহণ করা এবং ওই দিনই বিকেলের মধ্যে দাফন করার জন্য সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছিলেন। এরপর একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ ইউনাটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক ‘কেন দেরি করে আনা হলো’, ‘অনেক আগেই মারা গেছেন’ বলে মন্তব্যও করেন। মৃত ঘোষণার পর হাসপাতালের চিকিৎসক আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের শারীরিক অবস্থা কী ছিল, তাঁর কোনো দুরারোগ্য ছিল কিনা জানতে চাইলে সঙ্গে থাকা ডা. মুরাদ নিজেকে তাঁর (আরশাদ ওয়ালিউর) পারিবারিক চিকিৎসক দাবি করেন। তিনি ‘সমস্ত জানেন’  বলে কোনো পুলিশি রিপোর্ট প্রয়োজন নেই বলে জানান। এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে ডা. মুরাদসহ সেখানে উপস্থিত কয়েকজন মরদেহ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, স্বজন ছাড়া লাশ হস্তান্তর করা হবে না। এরপর শাযরেহ হকের স্বামী আরশাদ হক ভগ্নিপতি হিসেবে লাশ গ্রহণ করেন।

মৃত্যুর সনদসহ হাসপাতালের সব কাগজপত্র ডা. মুরাদসহ অন্যরা নেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। তবে মৃত্যু সনদের একটি ছবি তাঁর স্বামী আরশাদ হক মোবাইল ক্যামেরায় তুলে রাখেন। যেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘অজানা’ লেখা রয়েছে।

মামলায় শাযরেহ হক দাবি করেন, পারিবারিকভাবে বনানী করবস্থানে আরও ৪টি খালি কবর থাকার পরও তাড়াহুড়া করে তাঁর ভাইয়ের মরদেহ তাঁর ছোট বোন শাজনীনের কবরের ওপর দেওয়া হয়। মৃত্যুর প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ময়নাতদন্ত বা বিষক্রিয়ার হয়েছে কিনা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আরশাদ ওয়ালিউর রহমানের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু লতিফুর রহমান রাসকিন জানতে চান সিমিন হকের কাছে। এর উত্তরে সিমিন নিশ্চুপ ছিলেন বলে মামলায় বলা হয়। আরশাদ ওয়ালিউরের মৃত্যুর পরপরই তাঁর বাড়ি, গাড়িসহ অন্যান্য সম্পত্তি সিমিন রহমান, যারেফ আয়াত হোসেনসহ অন্যরা দখলে নিয়ে যান বলে অভিযোগ করেন শাযরেহ হক।

এর আগে ২১ ফেব্রুয়ারি শাযরেহ হক বাদী হয়ে গুলশান থানায় তিনটি মামলা করেন। সেই মামলায় ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহনাজ রহমান, তাঁর মেয়ে সিমিন রহমানসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। বিশ্বাস ভঙ্গ, জালিয়াতি ও দলিল জালের মাধ্যমে শাযরেহ ও তাঁর প্রয়াত ভাই আরশাদ ওয়ালিউর রহমানকে ১০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পারিবারিক সম্পত্তির ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ আনা হয়।

আইনজীবী সূত্র জানায়, মামলা দায়েরের আগে থেকে দেশের বাইরে রয়েছেন শাহনাজ রহমান, সিমিন রহমান ও যারেফ আয়াত হোসেন। এই অবস্থায় তারা যাতে দেশে ফিরতে পারেন সেই জন্য সুরক্ষা চেয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। ২০ মার্চ হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন শাযরেহ হক। সেই আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে ২১ মার্চ আদেশ দেন চেম্বার আদালত। তাতে ট্রান্সকম গ্রুপের এই তিন শীর্ষ কর্তাকে দেশে ফেরায় বাধা না দিতে এবং ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়।

গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীম সমকালকে বলেন, মামলাটি দণ্ডবিধির ৩০২ ও ৩৪ ধারায় হয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। এখনও কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। 

আরও পড়ুন

×