এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে দেওয়া হলো কাঁটাতারের বেষ্টনী
‘আমরা শিগগির ফিরব অনেক মজা করব’
অপেক্ষার প্রহর গুনছেন মুক্ত নাবিকরা

এমভি আবদুল্লাহতে কাঁটাতারের বেষ্টনী
সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ | ০০:২২
অক্ষত অবস্থায় মুক্তি মিলেছে সব নাবিকের। চলতি মাসেই দেশে ফিরবেন তারা। এ খবর নিশ্চিত হওয়ার পর অপেক্ষার প্রহর গুনছেন নাবিকদের স্বজন। ফোন করে একই রকম অনুভূতির কথা স্বজনকে জানাচ্ছেন নাবিকরাও। সোমালি জলদস্যুর হাত থেকে মুক্ত হওয়ার পর পরিবারের কাছে ফোন করেন জাহাজের প্রধান কর্মকর্তা আতিকুল্লাহ খান। তিনি কথা বলেন সন্তানসম্ভবা স্ত্রীসহ সবার সঙ্গে। আতিকুল্লাহর মা শাহনুর আক্তার বলেন, ‘ঈদের আনন্দ মাটি হয়ে গিয়েছিল পরিবারে। ছেলের মুক্তির কথা শুনে প্রাণ ফিরে পেয়েছে সবাই। সে এলে ঈদের জামা পরব সবাই।’ একই রকম ইচ্ছার কথা জানিয়ে আতিকুল্লাহ খান তাঁর পরিবারকে বলেন, ‘আমরা শিগগির ফিরব। তখন অনেক মজা করব। তোমরা আমাদের জন্য দোয়া করো।’
শুধু আতিকুল্লাহ খান নন; এমভি আবদুল্লাহ জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন পরিবারের সান্নিধ্য পেতে। জাহাজের চিফ ইঞ্জিনিয়ার সাইদুজ্জামান সাইদের বাড়ি নওগাঁয়। গতকাল ভিডিওবার্তায় তিনি অক্ষত অবস্থায় মুক্তি পাওয়ায় সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। জাহাজের মালিকপক্ষের কাছেও কৃতজ্ঞ বলে মন্তব্য করেন সাইদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘কঠিন সময় পার করেছি আমরা। আপনাদের দোয়া ও চেষ্টায় এখন আমরা মুক্ত। শিগগিরই দেশে ফিরব। পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে। তখন অনেক আনন্দ করব।’
সাইদুজ্জামানের বাবা আবদুল কাইয়ুম বলেন, ‘সোমালি জলদস্যুর হাতে আটকের খবর পাওয়ার পর থেকে দিনগুলো যেন বিভীষিকাময় কেটেছে। এর মধ্যে পবিত্র ঈদুল ফিতর চলে এলেও খুশি ছিল না পরিবারে। মুক্তির খবর শোনার পর স্বস্তি এসেছে।’ সাইদুজ্জামান সাইদের স্ত্রী মান্না তাহরিন বলেন, ‘আমাদের বুকের ওপর যে পাথর চেপে ছিল, সেটি নেমে গেছে। ঈদের আনন্দ আমরা নতুন করে উপভোগ করছি।’
ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ বিপ্লবের বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার মোমারিজপুর গ্রামে। বিপ্লবের স্ত্রী নুসাইবা সোনিয়া জানান, ‘কীভাবে আমাদের দিন কেটেছে তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। দিন-রাত আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয়েছে।’
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের দ্বিতীয় প্রকৌশলী খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলাম। তাঁর স্ত্রী জোবায়দা নোমান নগরীর করিমনগর এলাকার বাড়ি থেকে আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, ‘রোববার ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে খুশির দিন। গত এক মাস অনেক দুশ্চিন্তা গেছে।’ তৌফিকের মা দিল আফরোজ বলেন, ‘এখন আমাদের আনন্দের শেষ নেই।’
জাহাজে বেষ্টনী
মুক্ত জাহাজ সোমালিয়ার উপকূল থেকে যাত্রা শুরুর আগে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। জাহাজের দুই পাশে দেওয়া হয়েছে কাঁটাতারের বেষ্টনী। অন্য কোনো জলদস্যু গ্রুপ যাতে জাহাজটিতে ফের আক্রমণ করতে না পারে সে জন্য এমন বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে। জাহাজের সুরক্ষা কুঠুরি ‘সিটাডেল’ও সাজানো গোছানো। কেএসআরএম গ্রুপের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেরুল করিম বলেন, ‘সোমালিয়ার যে উপকূল থেকে নাবিকরা আরব আমিরাতের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছেন, সেটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। এ জন্য আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছি। কাঁটাতার জাহাজেই ছিল। আমাদের সব জাহাজে এমন প্রস্তুতি থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা অতিক্রমের সময় সেটি ব্যবহার করি।’ আক্রান্ত হওয়ার আগে কাঁটাতার ব্যবহার করেননি কেন– এ প্রশ্নের জবাবে কেএসআরএম গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত বলেন, ‘সোমালিয়ার উপকূল থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। তখন আমরা ৬০০ নটিক্যাল মাইল দূরে ছিলাম।’
গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগর থেকে ২৩ নাবিকসহ এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করেছিল সোমালিয়ার জলদস্যুরা। মুক্তিপণ নিয়ে ১৪ এপ্রিল জাহাজটি ছেড়ে দেয় তারা। জানতে চাইলে কেএসআরএম গ্রুপের মিডিয়া উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করে জাহাজটি দুবাইয়ের উদ্দেশে রওনা হয়েছে। আশা করছি, ২২ এপ্রিল সেখানে নোঙর করবে।’
এমভি আবদুল্লাহ গতকাল রাতে ভারত মহাসাগরের ঝুঁকিপূর্ণ চ্যানেল অতিক্রম করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দুটি যুদ্ধজাহাজ পাহারা দিয়ে নিয়ে গেছে সেটিকে।
- বিষয় :
- জাহাজ জিম্মি