ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

হেফাজত তাণ্ডবের ১১ বছর

অর্ধশত মামলার ৪৬টিরই শেষ হয়নি তদন্ত

অর্ধশত মামলার ৪৬টিরই শেষ হয়নি তদন্ত

ফাইল ছবি

 সাহাদাত হোসেন পরশ 

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪ | ০০:৪০

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫ মে তাণ্ডব চালায় হেফাজতে ইসলাম। শাপলা চত্বরের ঘটনার রেশ ধরে পরদিন হাটহাজারী, নারায়ণগঞ্জ, বাগেরহাটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানেও নাশকতায় জড়ায় সংগঠনটির কর্মীরা। এসব ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৪৯টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ৩টি মামলার তদন্ত শেষ হয়েছে। বাকি ৪৬টি মামলার তদন্ত থমকে আছে। রাজধানী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন এলাকায় হেফাজত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আরও অন্তত ৩০টি মামলা হয়েছে। এর অধিকাংশ মামলার তদন্ত ‘হিমাগারে’। 

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় করা হেফাজতের মামলার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে মামলা হয়েছে ৪৯টি। এর মধ্যে রমনা বিভাগে ৫টি, মতিঝিলে ২৬টি, ওয়ারীতে ৩টি, ডিবির মতিঝিল বিভাগে ১২টি, ডিবির লালবাগ বিভাগে ২টি ও ডিবির ওয়ারী বিভাগে ১টি। এর মধ্যে রমনা বিভাগের ৩টি মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। এ ছাড়া ২০২০ সালে হেফাজতের বিরুদ্ধে রাজধানীতে ৪টি ও ২০২১ সালে ১৩টি মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় হেফাজতের মামলার সংখ্যা ৬৬টি। 

ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (প্রসিকিউশন) আনিসুর রহমান বলেন, হেফাজতের অধিকাংশ মামলার তদন্ত চলছে। তথ্য-উপাত্ত পেলেই গ্রহণযোগ্য সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করা হবে। 
এদিকে তিন বছরেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর শুক্রবার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন হেফাজতে ইসলামের সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। ধর্ষণের একটি মামলা বেশি আলোচিত হলেও তাঁর নামে মামলার সংখ্যা ৪১টি। তার মধ্যে একটি হত্যা মামলাও রয়েছে। ১৫টি মামলা এখন বিচারাধীন। মামুনুল হকের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে ঢাকার শাপলা চত্বরে হেফাজতের ঘেরাও কর্মসূচির জেরে সংঘটিত সংঘর্ষ ও নাশকতার মামলাও রয়েছে। 

২০১৩ সালের ৫ মে ঢাকার ছয়টি প্রবেশমুখে অবরোধ কর্মসূচি শেষে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয় হেফাজতের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক। একপর্যায়ে উগ্র নেতাকর্মীরা সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়ে আগুন, ভাঙচুর ও নাশকতা চালায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত দল সমন্বিত অভিযান চালিয়ে তাদের শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দেয়। তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে হেফাজতের নাশকতার ঘটনায় তিন হাজার ৪১৬ জনের নামে এবং ৮৪ হাজার ৭৯৬ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছিল। আসামিদের মধ্যে হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট, জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি, ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, যুবদল, নেজামে ইসলাম, খেলাফত মজলিস, খেলাফত আন্দোলন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতাকর্মীর নাম রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ, পিবিআইসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে এসব মামলা তদন্তাধীন। তবে মামলার তদন্ত নিষ্পত্তিতে ‘ধীরে চলো নীতি’ গ্রহণ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। 

২০১৩ সালের শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চের পাল্টা ‘মঞ্চ’ হিসেবে সামনে আসে হেফাজতে ইসলাম। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ‘নাস্তিক’ আখ্যা দিয়ে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে মাঠে নামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক চট্টগ্রামের হাটহাজারীকেন্দ্রিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। ৫ মে ঢাকা ঘেরাও এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচিতে মতিঝিল-পল্টন ও আশপাশের এলাকায় সরকারি প্রতিষ্ঠান, যানবাহন, ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কেটে ফেলা হয় অনেক গাছ। বায়তুল মোকাররমে কোরআন শরিফে আগুন দেওয়া হয়। ৫ মে গভীর রাতে পুলিশ, র‍্যাব ও বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ অভিযানের মুখে মতিঝিল ছাড়তে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মী। শাপলা চত্বরের সমাবেশ ভাঙার পর হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে তাদের আড়াই হাজার কর্মী ও সমর্থক নিহত হয়েছেন। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ দাবি করে, তাদের কাছে নিহত ৬১ জনের তালিকা রয়েছে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে বেরিয়ে আসে, হেফাজতের সঙ্গে সংঘর্ষে রাজধানীতে একজন পুলিশ সদস্যসহ ১৩ জন নিহত হন। 


 

আরও পড়ুন

×