লোডশেডিং, সড়ক দুর্ঘটনা ও ব্যাংক খাত নিয়ে সংসদে হঠাৎ সোচ্চার জাপা এমপিরা

সংসদ ভবন- ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪ | ২১:২৪ | আপডেট: ০৫ মে ২০২৪ | ২১:২৪
দেশের চলমান বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা এবং ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদে হঠাৎ সমালোচনামুখর হয়েছেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ও বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং মহাসচিব ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নু। সংসদের বৈঠকে মাগরিবের বিরতির পরে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়িয়ে এসব বিষয় উত্থাপন করেন জাপার দুই সদস্য। এর আগে বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু শুরু হয়।
অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলীয় উপনেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক আইএমএফের শর্ত পূরনের জন্য দশটি ব্যাংককে একীভূত করার জন্য চিহ্নিত করেছে। এসব ব্যাংকের দায় ৮৪ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে ৫৪ হাজার কোটি টাকা হচ্ছে খেলাপী ঋণ। গত ১০ বছর ধরে এই ব্যাংকগুলোর নাম এসেছে।
উদাহরণ সরূপ বেসিক ব্যংকের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ব্যাংকগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো রকম বড় পদক্ষেপ নেয়নি। আজকে আইএমএফ যখন বলেছে তখন পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর দায় দায়িত্ব কে নেবে? যারা এর জন্য দায়ী তাদের কী হবে। সে সম্পর্কে বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো কথা বলেনি। যারা দায়ী তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা না হলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যাবো।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভাল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত না করে খারাপ ব্যাংকগুলোকে একীভূত করে নতুন ব্যাংক করা যায় কি না একান্তভাবে দেখা দরকার। তিনি বলেন, অর্থনীতি সচল করতে ক্রাইসিস উত্তরণ করতে হবে।
এর আগে জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, দেশের মানুষ অনেক সমস্যায় আছে। এখন দুটো সমস্যায় মানুষ আক্রান্ত। একটি হল বিদ্যুৎ। এখন গ্রামগঞ্জে লোডশেডিং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোথাও ১২ ঘণ্টা, কোথাও ৮ ঘণ্টা। তার নির্বাচনী এলাকায় (কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ-তাড়াইল) ৫ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকে না। সরকার বলেছে ২৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সক্ষমতা আছে, তাহলে বিদ্যুৎ গেল কোথায়? গ্রামে লোডশেডিং হয় না চ্যালেঞ্জ করবেন কেন? এলাকার মানুষ বলেছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে দাওয়াত দিতে, লোডশেডিং হয় কি-না তা দেখার জন্য একদিন থাকার জন্য। এসময় আগামী দুই/চার দিনের মধ্যে নিজ এলাকায় যাওয়ার জন্য বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ।
সক্ষমতা সত্ত্বেও ভাড়ায় চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪১ শতাংশ বসে আছে দাবি করে মুজিবুল হক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বসে থাকার জন্য ভাড়া বাবদ ২৬ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুতের দায়মুক্তি আইন প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ চুক্তিটা দয়া করে প্রত্যাহার করেন। উৎপাদন না করেও বসে বসে ভাড়া নেওয়ার যে চুক্তি তা জনগণের স্বার্থে বাতিল করেন। ওই সমস্ত কোম্পানি বিদ্যুৎ দিলে বিল দেবেন, বসিয়ে বসিয়ে ২৬ হাজার টাকা বিল দেবেন...তারপর লোডশেডিং থাকবে। কি যে অসহনীয় অবস্থা এ দেশের, ঢাকায় থেকে আপনারা বুঝবেন না। সরকারি দলের যে সমস্ত এমপিরা গ্রামগঞ্জে আছেন তারা হয়তো এখন বলতে পারছেন না।’ বিদ্যুতের অপচয় বন্ধ করে, ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগিতা মাধ্যমে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আইএমএফের প্রস্তাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের কথা তিনি বলেন, ‘মন্ত্রী দাম বৃদ্ধিকে বলেন সমন্বয়। দাম বাড়ানো বলতে লজ্জা পান, তাই সমন্বয় বলেন তিনি। এ সমন্বয় একবছর করেছেন। আগামী তিনবছরে ১২ বার করবেন। ভর্তুকি পুরো তুললে বিদ্যুতের দাম দ্বিগুণ হয়ে যাবে। মানুষ কিনতে পারবে কি-না জানি না। দাম বৃদ্ধি না করে এমন পদক্ষেপ নেন, যেটাতে জনগণের উপর চাপ না পড়ে সহনীয় পর্যায়ে আপনারা সরকারেও থাকতে পারেন, আর বিদ্যুতও যাতে পাওয়া যায়।’
এ ছাড়াও দেশে অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সড়কের বেশিরভাগই দুর্ঘটনা হয়। কোন গাড়ির ফিটনেস নাই, ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। তিনি এবিষয়ে মন্ত্রীকে শক্ত অবস্থান নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, পুরানো গাড়ি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, অটো রাস্তায় না চললে, মানুষ এইভাবে মারা যাবে না।
- বিষয় :
- বিদ্যুৎ বিভ্রাট
- সড়ক দুর্ঘটনা
- ব্যাংক খাত
- জাপা