তলবের চিঠি গুলশানের বাসার গার্ডরুমে
বেনজীর দম্পতির দুই বাড়ি জব্দে দুদকের অনীহা

বেনজীর আহমেদ- ফাইল ছবি
হকিকত জাহান হকি
প্রকাশ: ০৫ জুন ২০২৪ | ০১:০৮ | আপডেট: ০৫ জুন ২০২৪ | ০৯:৩২
পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের নামে রাজধানীর ভাটারায় পাঁচ তলা ও স্ত্রী জীশান মীর্জার নামে উত্তরায় সাত তলা বাড়ি রয়েছে। বাড়ি দুটি জব্দে আইনি বাধা না থাকলেও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সময়ক্ষেপণ করছে। ইতোমধ্যে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা বিপুল পরিমাণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দে আদালতে আবেদন হয়েছে। কিন্তু উত্তরা ও ভাটারার বাড়ি জব্দে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত দুদক কোনো আবেদন করেনি।
সূত্র জানায়, উত্তরার অভিজাত এবং গুলশান-২-এর ডিপ্লোমেটিক জোন লাগোয়া আলিশান বাড়ি দুটি নির্মাণে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে তিন কাঠা প্লটে উত্তরার বাড়ি নির্মাণে নিজস্ব অর্থায়নের সঙ্গে বেনজীর স্ত্রীর নামে আইএফআইসি ব্যাংক থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছেন। ভাটারার বাড়ি তৈরিতে খরচ হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান সমকালকে বলেছেন, অপরাধলব্ধ আয় থেকে বাড়ি নির্মাণের তথ্য থাকলে, তা জব্দে আদালতে আবেদন করতে পারবে দুদক। ব্যাংক ঋণও কখনও কখনও অপরাধলব্ধ সম্পদ হতে পারে। অনুসন্ধানে সেটি অপরাধলব্ধ মনে হলে ঋণের নামে আইওয়াশ করার সুযোগ নেই। তিনি বলেন, তবে বেনজীর আহমেদ ঋণ কেন, কীভাবে নিয়েছেন; বিপরীতে বন্ধকি সম্পদ কী দেখিয়েছেন, তা যাচাই করতে হবে। কারণ বন্ধকি সম্পত্তির বিপরীতে ঋণ নিয়েও অর্থ পাচার করার প্রমাণ মিলেছে। অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে দুদক কর্মকর্তাদের সবকিছু বিবেচনায় নিতে হবে।
জানা যায়, মৌজা থেকে শুরু করে উত্তরার বাড়ির সব তথ্য দুদক সংগ্রহ করেছে। এখন এটি জব্দের আবেদন করতে কোনো অসুবিধা নেই। যদিও ভাটারার বাড়ির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনি সংস্থাটি। সূত্রের দাবি, দুর্নীতির খবর প্রকাশ পাওয়ার পরপরই ভাটারার বাড়ি বিক্রি করেছেন বেনজীর। তবে এটি আদৌ তিনি বিক্রি করেছেন কিনা, বিক্রি হলে কার কাছে, কত টাকায়– তা সংগ্রহ করতে পারেনি দুদক। এমনকি তারা ভাটারা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস কিংবা ঢাকা জেলা রেজিস্ট্রারের সহায়তাও নেয়নি। এ থেকে বাড়ি দুটি জব্দে দুদকের অনীহা প্রকাশ পাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
গত ২২ এপ্রিল দুদক বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান পর্যায়ে ২৩ ও ২৬ মে দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ৩৩ কোটি টাকার বেশি সম্পদ জব্দ এবং অবরুদ্ধের আদেশ দেন। এর মধ্যে ৮৩টি দলিলে ৬২১ বিঘা জমি ও গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়। আর ৩৮টি ব্যাংক হিসাব ও তাদের মালিকানার কোম্পানি অবরুদ্ধ করা হয়।
দুদকের চিঠি বাসার গার্ডরুমে
স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জনের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক গত ২৮ মে চিঠি দিলেও তা কেউ গ্রহণ করেননি। নোটিশ অনুযায়ী বেনজীরকে বৃহস্পতিবার, তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়েকে ৯ জুন তলব করা হয়। সূত্রের দাবি, দুদকের নোটিশের কপি এখন বেনজীরের গুলশানের বাসার গার্ডরুমে পড়ে রয়েছে। অবশ্য সাবেক আইজিপি ও তাঁর পরিবারের অবস্থানের বিষয়ে তাদের আইনজীবীরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না। এমনকি দুদকে তাদের হাজির হওয়ার বিষয়েও মন্তব্য থেকে বিরত আছেন আইনজীবীরা। ফলে বেনজীর আহমেদ বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদকে হাজির হচ্ছেন না, তা অনেকটাই নিশ্চিত।
এরই মধ্যে গতকাল এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুদক কমিশনার জহুরুল হক। তিনি বলেন, আমাদের নোটিশ পেয়ে আসার বাধ্যবাধকতা বিষয়ে আইনে সুস্পষ্ট কিছু নেই। তবে কেউ না এলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাঁর কোনো বক্তব্য নেই ধরে নেওয়া হয়। অবশ্য তলবের পর না এলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সময় চাইতে পারবেন এবং কমিশন ১৫ দিন দেওয়ার এখতিয়ার রাখে। এর পরও তিনি না এলে নথিপত্র দেখে অভিযোগ প্রমাণিত হলে হবে, না হলে নাই। তিনি বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে যা করণীয়, সব করা হচ্ছে। তাদের অনুপস্থিতিতে বিচার চলতেও কোনো বাধা নেই।
- বিষয় :
- বেনজীর আহমেদ
- বাড়ি জব্দ