প্রতিবাদ সমাবেশে নাগরিক সমাজ
বিশ্বব্যাংকের ঋণ রোহিঙ্গা সংকট বাড়াবে

ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ জুন ২০২৪ | ২২:১৪
লাগাতার তহবিল ঘাটতির কারণে সাত বছরে রোহিঙ্গা সংকট ক্রমান্বয়ে আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ছাড়া যখন কোনো বিকল্প নেই, তখন বিশ্বব্যাংক এই সংকট সমাধানে ঋণ জর্জরিত বাংলাদেশকে এ খাতে ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই ঋণ রোহিঙ্গা সংকটের পাশাপাশি বাংলাদেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নয়টি নাগরিক ও উন্নয়ন সংগঠন আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তারা একথা বলেন। ইক্যুইটি অ্যান্ড জাস্টিস ওয়ার্কিং গ্রুপ (ইক্যুইটিবিডি) আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের জায়েদ ইকবাল খান, বিডিসিএসও প্রসেসের ওমর ফারুক ভুইয়া, ওয়াটার কিপারস বাংলাদেশের মামুন কবীর, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী, এফএন ফাউন্ডেশনের আবদুল্লাহ আল হাদী মুন্না। সংহতি বক্তব্য রাখেন গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি জনাব আবুল হোসেন, ও বীর মুক্তিযোদ্ধা লায়ন আকবর হোসেন। ইক্যুইটিবিডির চিফ মডারেটর জনাব রেজাউল করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সমাবেশ সঞ্চালনা করেন সংগঠনের সচিবালয় সমন্বয়কারী মোস্তফা কামাল আকন্দ।
মুক্তিযোদ্ধা লায়ন আকবর হোসেন বলেন, ঋণ সবসময়ই একটা নেতিবাচক বিষয়। সেটা ব্যক্তিই হোক, বা দেশ। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের একটি সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুও ঋণগ্রস্ত। সহকারী অধ্যাপক মীর মোহাম্মদ আলী বলেন, বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাংলাদেশকে কোনোভাবেই সহায়তা করবে না। বরং ইতিমধ্যে ঋণভারে জর্জরিত এই দেশকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেবে।
ওমর ফারুক ভুইয়া বলেন, বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ঋণে জর্জরিত, যে ঋণ আগামী প্রজন্মের সাধারণ মানুষকেই শোধ করতে হবে। ইতিমধ্যে দেশের মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ ৫৮০ ডলার। এই ঋণ আরও বাড়ানো মানে, আগামী প্রজন্মকে জন্মের আগেই ঋণগ্রস্ত করে ফেলা।
মামুন কবীর বলেন, এই সংকটের জন্য আমরা দায়ী নই। কাজেই এই সংকট মোকাবিলায় আমরা কোনোভাবেই ঋণ গ্রহন করব না। রোহিঙ্গাদের জন্যই হোক বা তাদের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনেগাষ্ঠীর জন্যই হোক, আমাদের অনুদান দিতে হবে। ঋণ নয়।
বরকত উল্লাহ মারুফ বলেন, সারা পৃথিবীতে শরণার্থী সংকট বাড়ছে কিন্তু তাদের জরুরি সহায়তার জন্য তহবিল কমছে। ২০২৩ সালে এই তহবিল ঘাটতি ছিল ৩৬ বিলিয়ন ডলার। রোহিঙ্গা সংকটে চাহিদার তুলনায় জোগার হয়েছে মাত্র ২৫% তহবিল। এমতাবস্থায় প্রত্যাবাসনই একমাত্র উপায়। বিশ্বব্যাংক যদি সংকট থেকে উত্তরণে বাংলাদেশকে সহায়তা করতেই চায়, তাহলে তার উচিত প্রত্যাবাসনের জন্য তহবিল জোগান দেওয়া।
সভাপতির বক্তৃতায় রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর রোহিঙ্গা ত্রাণ কর্মসূচির বাইরেও ১.২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করছে। রোহিঙ্গা সংকটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার যখন সহায়তা চেয়েছে, তখন বিশ্বব্যাংক বলেছে এর জন্য বাংলাদেশকে ঋণ নিতে হবে। আমরা এর প্রতিবাদ করছি, কারণ, এই সংকটের জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়, যে তাকে ঋণ নিতে হবে।