ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রী

বিনামূল্যে বাড়ি গৃহহীনদের এনে দিয়েছে মর্যাদা

বিনামূল্যে বাড়ি গৃহহীনদের এনে দিয়েছে মর্যাদা

গৃহহীনদের ঘর হস্তান্তরের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: বাসস

 মাজহারুল ইসলাম রবিন, লালমনিরহাট থেকে

প্রকাশ: ১২ জুন ২০২৪ | ০১:০০ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ | ০৪:২৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে দেওয়া বাড়িগুলো গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষের মাঝে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদা এনে দিয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষকে বিনামূল্যে ঘর প্রদান করে পুনর্বাসন করেছি। এতে তাদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে। আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদাবোধ ফিরে এসেছে। একটি দেশকে উন্নত করতে হলে এর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি তাঁর সরকারের সারাদেশের গৃহহীনদের বিনামূল্যে ঘর দেওয়ার জন্য গৃহীত আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ১৮ হাজার ৫৬৬টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে জমিসহ ঘর হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে ভাষণে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বাড়ি হস্তান্তরের পাশাপাশি তিনি ২৬ জেলার সব উপজেলাসহ আরও ৭০টি উপজেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, আমরা ঈদ উপহার হিসেবে এসব ঘর দিয়েছি। সরকারের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশবাসীর সেবা করা। কারণ, দেশের জনগণের আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থা থাকায় তারা বারবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনে।

শেখ হাসিনা বলেন, কিছুদিন আগে যে ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাস হয়ে গেল, সেখানে হাজার হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমেধ্যেই আমরা তালিকা করেছি কোন কোন এলাকায় কতগুলো ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। যেগুলো সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের আমরা ঘর তৈরি করে দেব। আর ক্ষতিগ্রস্তদেরও ঘর পুনর্নির্মাণে সহায়তা করব।

এদিন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলা, কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলা এবং ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে সুবিধাভোগীদের মাঝে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে জমির মালিকানা দলিলসহ বাড়ি হস্তান্তর করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে তিনি তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, আমার দেশের যারা ভূমিহীন-গৃহহীন আছে, তাদের আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে আশ্রয়ের ব্যবস্থা, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। ফলে তাদের জীবন বদলে গেছে। এই সময় তিনি ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ এবং প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমিকে চাষের আওতায় আনার মাধ্যমে সার্বিক উৎপাদন বাড়াতে দেশবাসীর প্রতি তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

প্রধানমন্ত্রী এদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মিথ্যা মামলায় কারাভোগ থেকে মুক্তি পাওয়ায় দিনটিকে তাঁর জন্য গৃরুত্বপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই আমাকে গেপ্তার করা হয়েছিল। মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতেও মিথ্যা মামলা দিয়েছিল। আবার সেই সময়কার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এসেছিল, তারাও গ্রেপ্তার করে পরে মিথ্যা মামলা দেয়। আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের সব নেতাকর্মী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াইকারী-প্রতিবাদী সাধারণ জনগণকে স্মরণ ও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

গণভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ওপর একটি ভিডিও প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

বদলে যাওয়া জীবনের গল্প শোনালেন সুবিধাভোগীরা

ভার্চুয়ালি ঘর হস্তান্তরকালে তিন উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকজন সুবিধাভোগীর কথাও শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় সুবিধাভোগীরা প্রধানমন্ত্রীকে একটি ঘর কীভাবে বদলে দিয়েছে তাদের জীবন– সেই গল্প শোনান।  দৈনন্দিন জীবনমানে অভূতপূর্ব পরিবর্তন আসার বর্ণনাও দেন তারা।

লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার মহিষামুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে ঝালমুড়ি বিক্রেতা বাবু মিয়া প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, আপনি ঘর দিয়েছেন, আমরা অনেক সুখে আছি। আমার যখন ঘর ছিল না, তখন অনেক কষ্টে থেকেছি। মানুষের বাড়িতে থেকেছি।

কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার পূর্ব দরগাপাড়া আশ্রয়ণকেন্দ্রে ঘর পাওয়া হোসনে আরা বলেন, ‘আমি শারীরিক প্রতিবন্ধী। অনেক সময় না খেয়ে সময় পার করে দিয়েছি। মানুষের বাসাবাড়িতে কাজ করেছি। প্রতিবন্ধী বলে স্বামী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। কেউ সাহায্য করেনি। মানুষের অনেক কটু কথা ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছি।’

ভোলার চরফ্যাসনের আশ্রয়ণ প্রকল্পের সুবিধাভোগী বিধবা বিবি আয়েশা বলেন, আমার বাড়িঘর নদী ভাঙে ফেলেছে। ২৪ বছর আগে আমার স্বামী মারা গেছে। আপনি ঘর দিয়েছেন, বিদ্যুৎ দিয়েছেন, স্কুল দিয়েছেন, ঘাটলা দিয়েছেন। আমি অনেক খুশি হয়েছি। 

 

আরও পড়ুন

×