মানি লন্ডারিং আইনে ড. ইউনূসের বিচার শুরু

ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি-সংগৃহীত
সমকাল ও আদালত প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ জুন ২০২৪ | ১৫:৫৬ | আপডেট: ১৩ জুন ২০২৪ | ১৬:০৪
গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত।
আসামিদের অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে ঢাকার ৪ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেন গতকাল বুধবার এ আদেশ দেন। এর মধ্য দিয়ে এ মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলো। মামলায় অভিযোগ গঠনের পর বেরিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে উষ্মা প্রকাশ করেন ড. ইউনূস। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আজ আমরা অনেকক্ষণ খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে ছিলাম। বলা হয়েছিল, আপনি থাকেন। কিন্তু আমরা সারাক্ষণ লোহার খাঁচার মধ্যে ছিলাম। আমি আগেও প্রশ্ন তুলেছি, এটা ন্যায্য হলো কিনা? আমি যতদূর জানি, যতদিন আসামি অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত না হচ্ছে, ততদিন তিনি নিরপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবেন।’
ক্রমাগত হয়রানির মধ্যে আছেন দাবি করে ড. ইউনূস বলেন, ‘মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা এসব শব্দের সঙ্গে পরিচিত নই। অথচ এসব শব্দ আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। আমাদের হয়রানি করা হচ্ছে। সারাজীবন তো আমরা মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। নিজেদের অর্থ ব্যয় করে এসেছি। কিন্তু আমাদের বোধে আসছে না কেন এই হয়রানি করা হচ্ছে? আমি রক্তচোষা, আমি সুদখোর, আমি দেশের শত্রু, আমি পদ্মা সেতুর অর্থ আটকে দিয়েছি, চারদিকে ষড়যন্ত্র করে বেড়াই– কথার কথা এভাবেই বলা হচ্ছে। এগুলোই হচ্ছে হয়রানি। আমাকে জোর করে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।’
ড. ইউনূস আরও বলেন, একজন নিরপরাধ মানুষকে লোহার খাঁচার (আসামির কাঠগড়া) মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে শুনানির সময়, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক। এটা গর্হিত কাজ। এটা কারও ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য না হয়। একটা পর্যালোচনা হোক।
এর আগে গতকাল সকালে ড. ইউনূসসহ অপর আসামিরা আদালতে হাজির হন। তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন। পরে বিচারক বিচার শুরুর আদেশ দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৫ জুলাই দিন ধার্য রাখেন। তবে অভিযোগ গঠনের এই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।
মামলার অপর আসামিরা হলেন– গ্রামীণ টেলিকমের এমডি নাজমুল ইসলাম, সাবেক এমডি আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নুরজাহান বেগম, এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী, আইনজীবী ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, প্রতিনিধি মাইনুল ইসলাম এবং গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের কামরুল হাসান।
গত ২ জুন উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য গতকাল দিন রাখা হয়েছিল। এদিন আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। আসামিদের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন, শাহীনুর ইসলাম অনিসহ কয়েকজন।
আইনমন্ত্রী যা বললেন
ড. ইউনূসের বিচার প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেশের যে কোনো নাগরিক আইন ভঙ্গ করলে তার যেমনভাবে বিচার হয়, ড. ইউনূসেরও সেভাবেই বিচার হচ্ছে। তবে তিনি যেসব কথা বলে বেড়াচ্ছেন, তা অসত্য এবং দেশের জনগণের জন্য অপমানজনক। গতকাল সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
দুদকের আইনজীবীর বক্তব্য
দুদকের বিশেষ পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, ‘উনাকে (ড. ইউনূস) আদালতে লোহার খাঁচায় ঢোকানো হয়নি। আদালতে হাজির হওয়ার পর তাঁকে বসতে বলা হয়েছে। তাঁকে কেউ খাঁচার মধ্যে যেতে বলেনি। আদালতে আসামি বা সাক্ষীদের দাঁড়ানোর একটা নির্দিষ্ট স্থান রাখা হয়। দীর্ঘদিন ধরে এটাই আদালতের নিয়ম। এটা সবাইকে মেনে চলতে হবে। এটার কোনো পরিবর্তন করতে হলে তিনি প্রস্তাব দিতে পারেন।’
দোষী সাব্যস্ত হলে হতে পারে যাবজ্জীবন
অর্থ আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিংয়ের যে মামলায় ড. ইউনূস অভিযুক্ত হয়েছেন, তাতে দোষী সাব্যস্ত হলে তাঁর সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে। সর্বনিম্ন ১০ বছরের সাজা হতে পারে বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী। গতকাল অভিযোগ গঠনের শুনানির পর দুদক আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘জাল জালিয়াতি করে ডকুমেন্ট সৃজন করে শ্রমিকদের জন্য সেটেলড ৪৩৭ কোটির মধ্যে ২৬ কোটি টাকা তারা সরিয়েছিলেন। জাল ডকুমেন্ট তৈরি করেছিলেন তা ব্যবহার করেছিলেন নিজে লাভবান হওয়ার জন্য। মামলায় যেসব অভিযোগ রয়েছে তা সাক্ষ্য-প্রমাণের ব্যাপার। সে কারণে চার্জ গঠন করা হয়েছে।’