এমপি আজীম হত্যাকাণ্ড
মিন্টু ও বাবুকে করা হবে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ

আনোয়ারুল আজীম
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৪ জুন ২০২৪ | ০১:৪৫ | আপডেট: ১৪ জুন ২০২৪ | ০৮:২৭
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে অপহরণ ও হত্যা মামলায় ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে আট দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন।
এদিকে, আদালতে শুনানির সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন মিন্টু। তবে তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আজীম হত্যায় যেসব নতুন প্রশ্ন সামনে আসছে, এর জবাব দিতে পারেননি মিন্টু। তাই তাঁকে বিশদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেপ্তার ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক কাজী কামাল আহমেদ বাবুকে প্রয়োজনে মিন্টুর মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন গত ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় তাঁর বাবাকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি। এ মামলায় গ্রেপ্তার বাবুকে গত শনিবার সাত দিনের রিমান্ডে পায় পুলিশ। এরই মধ্যে মিন্টুকে একই মামলায় রিমান্ডে পেল গোয়েন্দা পুলিশ।
পুলিশ ও আদালতের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মিন্টুকে গতকাল আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আজীম হত্যা মামলায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন খুলনা অঞ্চলের চরমপন্থি নেতা শিমুল ভূঁইয়া। জবানবন্দিতে আজীম হত্যায় তাঁর সংশ্লিষ্টতা উঠে এসেছে। শিমুল ভূঁইয়া বলেছেন, আজীমকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার মূল পরিকল্পনাকারী আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে গত ৫ কিংবা ৬ মে আওয়ামী লীগ নেতা মিন্টুর হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সে সময় আজীমকে হত্যার বাস্তবায়ন সাপেক্ষে আর্থিক লেনদেনের কথা বলেন।
গত মঙ্গলবার ধানমন্ডির ৩/এ এলাকায় আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসার নিচ থেকে মিন্টুকে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আটকের পর থেকে মিন্টুকে বাঁচাতে শুরু হয় নানা তদবির।
শুনানির সময় বিচারকের জিজ্ঞাসায় মিন্টু বলেন, ‘আমি নির্দোষ, আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। ৪৬ বছরের রাজনীতিতে আমার খুনখারাবির রেকর্ড নেই। ছাত্রলীগের রাজনীতি থেকে আজ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। এখন মনোনয়ন চাওয়ায় আমার অপরাধ হয়েছে।’
মিন্টু বলেন, ‘আমি ওয়ান-ইলেভেনে গ্রেপ্তার হয়েছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছি। মানুষের জন্য রাজনীতি করেছি। আমাকে রাজনৈতিক কারণে ফাঁসানো হচ্ছে।’
সদুত্তর দিতে পারেননি
গতকাল বিকেলে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের জানান, আজীম হত্যার ঘটনায় মিন্টু অর্থদাতা ও নির্দেশদাতা ছিলেন কিনা তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। অভিযোগ না পেলে আমরা কাউকে ডাকি না।
তিনি বলেন, শিমুল ভূঁইয়া ও বাবুর জবানবন্দিতে কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। এ কারণে মিন্টুকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তাঁকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ কারণে আমরা তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছি।
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বাবুর মোবাইল ফোন কেন নেওয়া হয়েছে– এ ব্যাপারে মিন্টুর কাছে জানতে চাওয়া হবে। কিলার শিমুল ভূঁইয়া ঢাকায় আসার পর কেন মিন্টুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত বাবু তাঁর সঙ্গে দেখা করলেন– এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন গোয়েন্দারা।
বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে তিনি জানিয়েছিলেন, মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়ায় তিনি জিডি করেছেন। এর পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, মিন্টুর পরামর্শে মোবাইল ফোন তাঁর কাছে দিয়ে তিনি থানায় হারানোর জিডি করেন। বাবু ও মিন্টুকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রয়োজনে আবারও শিমুল ভূঁইয়াকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
মিছিল ও মানববন্ধন
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, আজীম হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গ্রেপ্তার মিন্টুর মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। গতকাল সকালে শহরের পোস্ট অফিস মোড়ে জেলা দোকান মালিক সমিতি ও চেম্বার অব কমার্স এবং পরিবেশক সমিতির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। বক্তারা বলেন, আজীম হত্যার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মিন্টুকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে।
- বিষয় :
- আনোয়ারুল আজীম
- খুন