এক ছাগল নিয়ে লঙ্কাকাণ্ড

১৫ লাখ টাকায় ছাগল কেনা মুশফিকুর রহমান ইফাত। ছবি: সংগৃহীত
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২০ জুন ২০২৪ | ০৮:১৫ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ | ২৩:৪৫
কোরবানির ঈদ গেছে; কিন্তু একটি ছাগল নিয়ে ঈদের আগে যে আলোচনা শুরু হয়েছে, তা এখনও তুঙ্গে। সেই আলোচনা নতুন মাত্রা পাচ্ছে, আসছে নতুন নতুন তথ্য। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে যেন লঙ্কাকাণ্ড।
ঘটনার শুরু গত সপ্তাহে। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে একটি ভিডিও। তাতে বেশ বড় মাপের একটি ছাগলের সঙ্গে এক তরুণকে উচ্ছ্বসিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায়। ক্যামেরার সামনে ওই তরুণ বলেন, ‘এ রকম একটি খাসি কেনা আমার স্বপ্ন ছিল। এ রকম খাসি আমরা সামনাসামনি দেখিনি। আমার জীবনে প্রথম দেখা। এটি আমার হবে, জানা ছিল না। আল্লাহ নসিবে রাখছে, তাই হইছে। এর থেকে বেশি কিছু আর কী বলব!’ ১১ জুন ছাগলটি ধানমন্ডি ৮ নম্বরে ডেলিভারি হবে বলেও জানান তিনি। মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের ওই তরুণ জানান, সাদেক এগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় তিনি ছাগলটি কিনেছেন।
ফেসবুকে জোর আলোচনা চলে, ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের ছেলে। তবে এই আলোচনা গতকাল বুধবার নতুন মোড় নিয়েছে। মতিউর রহমান জানিয়েছেন, ১২ লাখ টাকায় ছাগল কিনে ভাইরাল হওয়া মুশফিকুর রহমান ইফাত তাঁর ছেলে নন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেবেন বলেও জানান তিনি। আর সাদেক এগ্রো কর্তৃপক্ষ বলছে, ১২ লাখ টাকায় ছাগলটি কিনলেও শেষ পর্যন্ত সেটি নেননি ক্রেতা ইফাত। এখন তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
একাধিক সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়, ইফাতের বাসা ধানমন্ডি; তিনি এনবিআর সদস্য মো. মতিউর রহমানের ছেলে। এ বিষয়ে মতিউর রহমান গতকাল সমকালকে বলেন, ‘আমার এক ছেলে ও এক মেয়ে। তবে এই ইফাত আমার ছেলে নয়।’ তিনি বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলের নাম আহমেদ তৌফিকুর রহমান আর মেয়ে ফারহানা রহমান। আমার বাসা রাজধানীর বসুন্ধরায়। একটি গোষ্ঠী আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এ বিষয়ে পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের সহায়তা চেয়ে আইনি পদক্ষেপে যাচ্ছি। কেউ কেউ সামাজিক মাধ্যমে আমার ছবি ও নাম ব্যবহার করায় আমি বিব্রত।’
সাদেক এগ্রোর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘১২ লাখ টাকায় ছাগলটি কেনার জন্য এক তরুণ লাখ টাকা দিয়ে বুক করেছিলেন। ১২ জুন বাকি টাকা পরিশোধ করে ছাগলটি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এর পর আমরা তাঁকে আর খুঁজে পাইনি। ছাগলটি আমাদের কাছ থেকে অনেকে কিনতে চেয়েছিল। বুকিং ছিল বলে আমরা সেটি বিক্রি করতে পারিনি। মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের ওই তরুণকে আমরা খুঁজছি।’
ইমরান আরও বলেন, ‘ছেলেটি বলেছে, তার বাসা ধানমন্ডিতে। এর চেয়ে বেশি কিছু জানি না। কারণ, গ্রাহকের পারিবারিক ইতিহাস জানার অধিকার আমাদের নেই।’
ফেসবুকে আলোচনা– ছাগলটির এই অস্বাভাবিক দাম কোরবানির পশুর বাজারে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছে। এ বিষয়ে ইমরান হোসেন বলেন, ‘কথাটি সঠিক নয়। কারণ, কোরবানি উপলক্ষে ১ হাজার ২০০ ছাগল ও ২ হাজার ১০০ গরু খামারে তুলেছি। এর মধ্যে কেবল একটি ছাগলের দাম ছিল ১২ লাখ টাকা; বাকিগুলোর ১৫-২০ হাজার। আর কেবল একটি গরুর দাম ছিল কোটি টাকা; বাকিগুলোর ৭০-৮০ হাজার বা দেড় লাখ।’ যে ছাগলের দাম নিয়ে এত কথা, সেটি ‘বিটল’ জাতের এবং বাংলাদেশে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ছাগল বলে জানান তিনি। ধূসর বাদামি ছাগলটির ওজন ১৭৫ কেজি, উচ্চতা ৬২ ইঞ্চি। যশোরের একটি হাট থেকে ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় ছাগলটি কেনেন বলে জানান ইমরান হোসেন।
একটি সূত্র জানায়, ছাগলটির ক্রেতা ইফাতের বাবা থাকেন বিদেশে এবং মা দেশে। তবে এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করা যায়নি। ইফাত বলেন, ‘আমি সাদেক এগ্রোতে গরু দেখতে গিয়েছিলাম। আমি তখন ছাগলটির সঙ্গে ছবি তুলেছি, সবাইকে বলেছি, আমি ছাগলটি কিনেছি। আসলে ছাগলটি কেনা হয়নি।
এ বিষয়ে সাদেক এগ্রোর মালিক ইমরান বলেন, ‘ছাগলটি কিনে ইফাত ১ লাখ টাকা অগ্রিমও দিয়েছে। তার রিসিট আমাদের কাছে আছে। ছাগলটি কিনে সে নিজেই ভিডিওতে বক্তব্য দিয়েছে। সে যদি সেলিব্রিটি হতো তাহলে (না হয়) তাকে আমরা ব্যবহার করতাম। তাকে তো কেউ চেনেই না। ছাগলটি অবিক্রীত থাকায় আমাদেরই লোকসান হয়েছে।’