আজকের পত্রিকা
নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লিকে আশ্বস্ত করল ঢাকা
বাংলাদেশ-ভারত প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের নয়াদিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনে পৌঁছালে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁকে স্বাগত জানান। ছবি: এএফপি
কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৪ | ০১:৪৬ | আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ | ১১:৫২
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের আগে গতকাল শনিবার দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষার এ সফরে নিরাপত্তা নিয়ে দিল্লিকে আশ্বস্ত করেছে ঢাকা। দুই দেশ একমত হয়েছে, অভ্যন্তরীণ মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতায়। এ ছাড়া ভারতে যৌথভাবে ছোট স্যাটেলাইট বানাবে দুই দেশ। আর বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে ঢেলে সাজানো নিয়ে বাংলাদেশের ফোর্সেস গোল-২০৩০ অর্জনে সক্ষমতা বাড়ানো ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে আগ্রহী দিল্লি।
গত শুক্রবার দু’দিনের ভারত সফরে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরকার গঠনের পর এটিই তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফর। আর ভারতে সদ্য সমাপ্ত লোকসভা নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো বাংলাদেশের সঙ্গে। সফরটি যেমন দুই দেশের একে অপরের প্রতি গুরুত্ব ও গাঢ় বন্ধুত্বের নিদর্শন প্রকাশ করেছে, তেমনি এসেছে সম্পর্ককে আরও গভীর করার দিকনির্দেশনাও।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কূটনীতিক সমকালকে বলেন, খুবই উষ্ণ পরিবেশে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহযোগিতা আরও বাড়াতে দুই দেশ একমত হয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার পক্ষ থেকে এসেছে নতুন দিকনির্দেশনা ও প্রেরণা। কীভাবে দুই দেশ একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ হতে পারে, তা নিয়ে হয়েছে আলোচনা। দুই দেশের কানেক্টিভিটি, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতায় অভিন্ন মতামত এসেছে শীর্ষ নেতাদের কাছ থেকে।
বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অন্য ইস্যুর পাশাপাশি গুরুত্ব পেয়েছে নিরাপত্তার বিষয়টি। ঢাকার পক্ষ থেকে বৈঠকে এ বিষয়ে দিল্লিকে আশ্বস্ত করা হয়েছে। নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিয়ে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে দুই সরকারপ্রধানের বৈঠকে। সেখানে দুই দেশের মৌলবাদ দূর করা, জঙ্গিবাদ দমন, রোহিঙ্গা সংকট, সীমান্ত পরিস্থিতি, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিস্থিতি, চীনসহ আঞ্চলিক বিভিন্ন নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
গতকাল দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর নিয়ে বিশেষ সংবাদ সম্মেলন করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বৈঠকে চীনের বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ নিয়ে আলোচনায় জানতে চাইলে দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রা বলেন, দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা। এ সহযোগিতা আরও বাড়াতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এসব সহযোগিতার বিষয়ে দুই দেশের সামরিক ও সুরক্ষা কল্যাণ এবং চ্যালেঞ্জগুলো ছাড়াও এসব চ্যালেঞ্জ দূর করা নিয়ে কথা হয়েছে। তৃতীয় দেশের পরিবর্তে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়েই বেশি আলোচনা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব জানান, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো এবং চাহিদা অনুযায়ী সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বৈঠকে। এ ছাড়া প্রতিরক্ষা শিল্পের সহযোগিতা এবং ভারতে যৌথভাবে দুই দেশ স্যাটেলাইট বানাবে। একই সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়ন করা হবে। যার জন্য একটি যৌথ কারিগরি দল শিগগিরই বৈঠক করবে। ভারতের সুবিধামতো ঋণে তিস্তা নদীর সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
রোহিঙ্গা নিয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ভারত-মিয়ানমার সম্পর্কে এ বিষয়ে বার্তা কীভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে প্রয়োজনে যেহেতু প্রচুর মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে, ফলে চিকিৎসাপ্রার্থীদের জন্য ই-মেডিকেল ভিসা চালু করা হচ্ছে।
১০ সমঝোতা স্মারক সই
প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতির আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ১০টি সমঝোতা স্মারক ও নথি সই করেছে দুই দেশ। এর মধ্যে পাঁচটি নতুন সমঝোতা স্মারক ও তিনটি সমঝোতা স্মারক নবায়ন করা হয়েছে। আর ভবিষ্যৎ দৃষ্টিকোণে সহযোগিতা বাড়াতে দুটি যৌথ কার্যক্রমের নথি সই হয়।
নতুন সমঝোতা স্মারকগুলো হলো– বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরের সুনীল অর্থনীতি ও সমুদ্র সহযোগিতা, সমুদ্রবিজ্ঞান ও এ ক্ষেত্রে সক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়ে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বিওআরআই) এবং কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর) ইন্ডিয়ার মধ্যে সমঝোতা স্মারক, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগ, যৌথ কৃত্রিম উপগ্রহ প্রকল্পে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ভারতের ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টারের মধ্যে সমঝোতা এবং ডিফেন্স স্টাফ কলেজের মধ্যে একাডেমিক সহযোগিতা।
নবায়নকৃত সমঝোতা স্মারকগুলো হলো– মৎস্যসম্পদ সহযোগিতা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য ও ওষুধ খাতে সহযোগিতাবিষয়ক।
আর নথি দুটি হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ডিজিটাল অংশীদারিত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা সই এবং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশ-ভারত সবুজ অংশীদারিত্বের বিষয়ে অভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা।
হাসিনা-মোদির যৌথ বিবৃতি
গতকাল দুপুরে হায়দরাবাদ হাউসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত ও দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে যৌথ বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত আরও শক্তিশালী হচ্ছে। বাংলাদেশ সব সময়ই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে বিশেষ গুরুত্ব দেয়।
তিনি বলেন, যেহেতু নতুন সরকার গঠনের মাধ্যমে ঢাকা ও দিল্লি নতুনভাবে পথচলা শুরু করেছে, সে ধারাবাহিকতায় আমরা ‘রূপকল্প-২০৪১’-এর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠা এবং ‘বিকশিত ভারত-২০৪৭’ অনুসরণ নিশ্চিত করার জন্য ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভারত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশী, বিশ্বস্ত বন্ধু এবং আঞ্চলিক অংশীদার। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে শুরু হওয়া ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে বাংলাদেশ সব সময়ই বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে।
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ও একান্ত বৈঠক প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আমাদের দুই পক্ষের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে আমরা অন্যান্য পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের মধ্যে রাজনীতি ও নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও সংযোগ, অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, জ্বালানি ও শক্তি এবং আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করেছি।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের দুই দেশের এবং জনগণের কল্যাণের জন্য আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করার বিষয়ে সম্মত হয়েছি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, উভয় দেশ শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিতকরণে একটি ‘রূপকল্প ঘোষণা’ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি ‘ডিজিটাল অংশীদারিত্ব’ এবং ‘টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সবুজ অংশীদারিত্ব’বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্প সামনে রেখে কাজ করতে আমরা দু’পক্ষই সম্মত হয়েছি।
দুই দেশের মধ্যকার সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। আজ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকে আমরা দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্পৃক্ততার পথ এবং কার্যপন্থা নিয়ে আলোচনা করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর সুবিধাজনক সময়ে যত দ্রুত সম্ভব দ্বিপক্ষীয় সফরে বাংলাদেশ সফর করার আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনা।
মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারতের সেই সব বীরের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি, যারা ১৯৭১ সালের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।
ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠান, আমাদের স্বাধীনতার এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে যোগদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দ্বিপক্ষীয় রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছিলাম। পরবর্তীকালে আমি ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র আমন্ত্রিত ‘অতিথি দেশ’-এর নেতা হিসেবে নয়াদিল্লিতে ভারতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জি২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিই। এখন আমি এই একই জুন মাসে অভূতপূর্ব দ্বিতীয়বারের মতো নয়াদিল্লি সফর করছি।
বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, ৯ জুন অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং তাঁর নবগঠিত মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আরও কয়েকজন বিশ্বনেতার সঙ্গে নয়াদিল্লি সফর করি। এসবই আমাদের দুই দেশের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে একে অন্যের সঙ্গে কাজ করার প্রমাণ বহন করে।
এর আগে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, ভারতের কাছে প্রতিবেশীই প্রথম। আর সেজন্যই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেই প্রথম রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, দুই দেশ এরই মধ্যে বড় অনেক কাজ একসঙ্গে করেছে। আখাউড়া-আগরতলায় রেল লিঙ্ক প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। খুলনার মোংলা পোর্টের মাধ্যমে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর জন্য পণ্য আমদানির সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি যৌথ চেষ্টায় রামপালে চালু হয়েছে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন মৈত্রী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।
মোদি উল্লেখ করেন, ভারতীয় রুপিতে বাণিজ্যও চলছে। ভারত বাংলাদেশকেই প্রথম পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ করছে। এমনকি আঞ্চলিক সহযোগিতার আওতায় নেপালের বিদ্যুৎও বাংলাদেশে যাবে ভারতের মধ্য দিয়ে। এসব কাজ আমাদের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করেছে।
তিনি বলেন, আজ দুই দেশ মিলে ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা ও লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। গ্রিন পার্টনারশিপ, ডিজিটাল পার্টনারশিপ, ব্লু-ইকোনমির মতো বিষয়গুলো নিয়ে একসঙ্গে কাজ করে এগিয়ে যেতে সহমতে পৌঁছেছি আমরা। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী স্যাটেলাইট আমাদের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে। আমাদের ফোকাসটা হলো সংযুক্তি, বাণিজ্য এবং পারস্পরিক সহযোগিতা।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৬৫ সালের পর গত ১০ বছরে সংযুক্তিতে দুই দেশ অনেক দূর এগিয়েছে। এখন সময় ডিজিটাল আর এনার্জি কানেক্টিভিটি বাড়ানোর। এর মাধ্যমে দুই দেশেরই অর্থনৈতিক গতিশীলতা আসছে। আমাদের আর্থিক সম্পর্ককে আরও ভালো করতে দু’পক্ষই কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট চূড়ান্ত করতে আলাপ-আলোচনা শুরু করেছে।
তিনি বলেন, সিরাজগঞ্জে একটি ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো নির্মাণে ভারত সমর্থন ও সহযোগিতাও দিচ্ছে। ৫৪টি অভিন্ন নদী দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত। বাংলাদেশে তিস্তা নদী সংরক্ষণে কী করণীয় রয়েছে, তা নিয়ে আলাপ করতে শিগগিরই একটি কারিগরি দল বাংলাদেশ সফর করবে। জঙ্গিবাদ দমন, মৌলবাদ ও সীমান্তে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজে আপনাদের সহযোগিতা বড় নিশ্চয়তা দিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, ভারত মহাসাগরের উন্নয়নে আমাদের লক্ষ্য অভিন্ন। বিমসটেকসহ অন্য আঞ্চলিক-আন্তঃরাষ্ট্রীয় ফোরামগুলোতে আমরা একযোগে কাজ করব। জনগণের মধ্যে নিবিড় যোগাযোগ আমাদের সম্পর্ক আরও গভীর করেছে। বাংলাদেশিদের চিকিৎসাসেবার সুবিধায় ই-মেডিকেল ভিসা সুবিধা চালু করছে ভারত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের ভারত গমনের সুযোগ সম্প্রসারণে আমরা রংপুরে একটি উপহাইকমিশন স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
ভারত সরকারপ্রধান বলেন, ভারতের সবচেয়ে বড় অংশীদার হলো বাংলাদেশ। ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে বাংলাদেশ, সেই সময়ও ভারতের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, গতকাল সকালে দিল্লির ফোরকোর্টে রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখানে শেখ হাসিনাকে লালগালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
রাষ্ট্রপতি ভবনের এ কর্মসূচি শেষে রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন শেখ হাসিনা। পরে তিনি পরিদর্শন বইয়ে স্বাক্ষর করেন। বিকেলে ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখারের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাৎ হয়। এর পর তিনি আবার রাষ্ট্রপতি ভবনে যান। সেখানে তিনি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্রৌপদী মুর্মু বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। দুই দিনের সফর শেষে গতকাল রাতে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী।
- বিষয় :
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- মোদি
- ভারত
- ভারত সরকার