ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

কারামুক্তির বছর ঘুরতেই ‘চিরমুক্তি’ শাহজাহানের

২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন যে জল্লাদ

কারামুক্তির বছর ঘুরতেই ‘চিরমুক্তি’ শাহজাহানের

শাহজাহান ভুঁইয়া। ছবি-সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ জুন ২০২৪ | ১৯:৩৫ | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৪ | ২১:২৯

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় দণ্ডিত ছয় আসামিসহ মোট ২৬ জনকে ফাঁসির রশিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিলেন আলোচিত ‘জল্লাদ’ শাহজাহান ভুঁইয়া। দুই মামলায় ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর গত বছরের ১৮ জুন তিনি মুক্তি পান। তবে এই মুক্তির মেয়াদ দীর্ঘ হয়নি। কারামুক্তির বছর ঘুরতে না ঘুরতেই দুনিয়া থেকে ‘চিরমুক্তি’ পেয়েছেন তিনি। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তার।

কারাসূত্র জানায়, দেশে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ফাঁসি কার্যকর করা শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা ছিল দুটি। এরমধ্যে একটি ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা এবং অপরটি অস্ত্র আইনের মামলা। দুই মামলায় তার সাজা হয় ৪২ বছর। ১৯৯১ সালের ১৭ মে থেকেই তিনি কারাগারে ছিলেন। কারাগারে সুশৃঙ্খল আচরণ ও ফাঁসি কার্যকরসহ অন্যান্য কারণে মোট ১০ বছর ৫ মাস দণ্ড রেয়াত পান তিনি। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই তিনি মুক্তি পান। 

কারাগারে থাকার সময়ে আলোচিত বিভিন্ন মামলার চূড়ান্ত রায়ে দণ্ডিতদের ফাঁসি কার্যকর করায় বিভিন্ন সময় শাহজাহানকে নিয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনি, মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, মীর কাসেম আলী ও জেএমবির দুই জঙ্গির ফাঁসি কার্যকর করেন। কারামুক্তি উপলক্ষেও তিনি গত বছরের জুনে গণমাধ্যমের শিরোনাম হন। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, মুক্ত জীবনে বিয়ে সম্পর্কিত জটিলতায় আবারও খবরের শিরোনাম হন শাহজাহান। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর তিনি এক তরুণীকে বিয়ে করেন। তার ভাষ্য অনুযায়ী, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাওয়ার সময় একটি ভ্যানিটি ব্যাগ কুড়িয়ে পান। সেটিতে থাকা নম্বরে কল করে তিনি ব্যাগের মালিক তরুণীর সন্ধান পান। এরপর তরুণী ব্যাগ ফেরত নিতে এলে সামনাসামনি পরিচয় হয়। দুজনের ফোনে কথোপকথনের পর একসময় তারা বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। যদিও মাত্র ৫৩ দিনের মাথায় শাহজাহানকে ছেড়ে চলে যান ওই তরুণী। তিনি স্বামীর বিরুদ্ধে নির্যাতন ও যৌতুক দাবির মামলা করেন। পরে শাহজাহানও স্ত্রী-শাশুড়ির বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা করেন। এসব নিয়েও গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।

এদিকে কারামুক্তির পর যাওয়ার মতো জায়গা ছিল না শাহজাহানের। স্বজনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না দীর্ঘদিন। তাই মুক্তির পর তিনি কারাগারে পরিচয় হওয়া এক ব্যক্তির বাসায় ওঠেন। পরে তিনি ঢাকার কেরানীগঞ্জের গোলামবাজার এলাকায় বসবাস শুরু করেন। সেখানেই সংসার পেতেছিলেন। সংসার ভেঙ্গে যাওয়ার পর তিনি সাভারের হেমায়েতপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। সেখানে বুকের ব্যথা নিয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রোববার রাতে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান জল্লাদ ছিলেন শাহজাহান ভুঁইয়া। দীর্ঘ কারাজীবনে তিনি জল্লাদ হতে আগ্রহী বন্দিদের যথাযথ নিয়মে প্রশিক্ষণও দিয়েছিলেন। তিনি ১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ইছাখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯২ সালের ৮ নভেম্বর ডাকাতির মামলায় তার ১২ বছর এবং ১৯৯৫ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ডাকাতি ও হত্যার মামলায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়।

আরও পড়ুন

×