ঢাকা শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫

প্রত্যয় স্কিম

আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে

আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে

ছবি: ফাইল

 বিশেষ প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৫:৪৩ | আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৪ | ০৮:৫১

সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’ বাতিলের দাবিতে অনড় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান পেলেও তারা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি। গতকাল বুধবার রাতে ভার্চুয়ালি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আলোচনা চললেও বিষয়টি সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তৃতীয় দিনের কর্মবিরতির কারণে গতকাল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছে। জরুরি নম্বরপত্র ও সনদপত্র তুলতে না পেরে বিপাকে পড়েন সদ্য গ্র্যাজুয়েট করে চাকরিপ্রত্যাশী এবং বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহমুদুর রহমান সমকালকে বলেন, জরুরি প্রয়োজনে সনদ ও নম্বরপত্র উত্তোলনে আবেদন করেছি। তিন দিন ধরে রেজিস্ট্রার বিল্ডিংয়ে ঘুরছি। কোনো কাজ হচ্ছে না।

দাবি আদায়ে গতকাল কলাভবনের মূল ফটকে অবস্থান নেন শিক্ষকরা। আর প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে সকাল থেকে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা ও দাপ্তরিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে।

অবস্থান কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিনাত হুদা পেনশন কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি ও অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেন। অর্থমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় বসুন। অর্থমন্ত্রী কেন আলোচনা এড়িয়ে যাচ্ছেন? আপনারা যারা প্রত্যয় করেছেন, তারা নিজেরা এর আওতায় আসুন। আলোচনা ও আন্দোলন একসঙ্গে চলবে।’

বিক্ষোভ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের নেতারা অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর পদত্যাগ দাবি করেন। এ সময় পরিষদের আহ্বায়ক ও আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোত্তালিব বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম আমাদের জীবন দুর্বিষহ ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। আমরা বৈষম্যমূলক এ স্কিম চাই না।’

দুই মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন শিক্ষকরা অবস্থান কর্মসূচি শেষে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চেয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেন, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী খান পান্না ফোন করে আমাকে বললেন, আপনি সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে একটু কথা বলুন। আমি ফোনে তাঁর কাছে আমাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা তুলে ধরলাম। তিনি আরও দু-তিনজন শিক্ষকসহ সন্ধ্যায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বললেন। আমি তাঁকে বলেছি, আমাদের ফেডারেশন আছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তখন তিনি বললেন, ঠিক আছে। কথা বলার সুবিধার্থে ওবায়দুল কাদের বেশি লোক না নিতে অনুরোধ করেন।

গতকাল সন্ধ্যায় নিজামুল হক ভূঁইয়া সমকালকে বলেন, ‘আলোচনার স্থান ও সময় নির্ধারণ হয়নি। আমরা বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনায় বসার ব্যাপারে আশাবাদী। এ ছাড়া শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও আলোচনায় বসব। 

দুই মন্ত্রীর সঙ্গে একসঙ্গে আবার আলাদাভাবেও বৈঠক হতে পারে।’

এদিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, আজ বৃহস্পতিবারও সব ধরনের দাপ্তরিক কার্যক্রম, ক্লাস-পরীক্ষা ও লাইব্রেরি বন্ধ থাকবে। এ ব্যাপারে অধ্যাপক নিজামুল বলেন, আমরা বসব। আলোচনা ফলপ্রসূ হলে, দাবির সঙ্গে সরকার একমত হলে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব। 

প্রত্যয় বাতিলের দাবিতে গত রোববার থেকে সারাদেশে ৩৫টির বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি চলছে।

ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি

প্রত্যয় স্কিম বাতিল দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষকরা গতকাল বুধবারও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন। ধারাবাহিক আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য ও কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছেন তারা। গতকাল রাবির শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি হয়। রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

গতকাল তৃতীয় দিনের মতো পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। শাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. আলমগীর কবির  বলেন, সরকার দাবি না মানলে কর্মসূচি চলবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কর্মবিরতি অব্যাহত রয়েছে। গতকাল   বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। জাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, সরকার দ্রুত দাবি মেনে নিক। আমরা কাজে ফিরতে চাই।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি পূর্ণ দিবস কর্মবিরতির তৃতীয় দিন পার করেছে গতকাল। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এস এম ফিরোজ। অধ্যাপক ড. তরুণ কান্তি বোসের সঞ্চালনায় অংশ নেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক রকিবুল হাসান সিদ্দিকীসহ শিক্ষকরা। কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও কর্মসূচি পালন করেছেন। 

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গতকাল কর্মবিরতি পালন করেন। এতে অংশ নেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি  ড. মোহাম্মদ ছফি উল্লাহ ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ডা. মুহাম্মদ আল মামুনসহ শিক্ষকরা। কর্মকর্তা পরিষদও কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন

×