বিশিষ্টজনের প্রতিক্রিয়া
আলোচনার ভিত্তিতে কোটা সংস্কার হওয়া উচিত

ছবি-সমকাল
আবু সালেহ রনি
প্রকাশ: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ০১:১৩ | আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৪ | ০৮:০৩
সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের পক্ষে মতামত দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজন। তাদের মতে, ২০১৮ সালেও ৫৬ ভাগ কোটা কার্যকর ছিল। তখন পুরোপুরি বাতিল করা সঠিক হয়নি। বিশ্বের বহু দেশে কোটা ব্যবস্থা রয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীসহ বিদ্যমান প্রশাসনিক কাঠামোর তথ্যাদি পর্যালোচনা করে বাংলাদেশেও এটি সংস্কার হওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনিক কাঠামোর যে কোনো নিয়োগে মেধাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কোটা থাকলেও তা প্রয়োগ করতে হবে নিয়োগের চূড়ান্ত পর্যায়ে।
সরকারি চাকরিতে ঢালাওভাবে কোটা ব্যবস্থা বহালের বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকার নেত্রী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল সমকালকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, বিশেষ করে প্রাণ দিয়েছেন, তাদের প্রতি জাতি অবশ্যই কৃতজ্ঞ। ইতিহাসের নানা সন্ধিক্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি একই মনোভাব প্রকাশ পায়নি। তবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় এসে নানা ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেলেও অনেকের পরিবার মুক্তিযুদ্ধে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে যেসব মুক্তিযোদ্ধা প্রাণ দিয়েছেন কিংবা এমনভাবে আহত হয়েছেন, তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে তাদের সন্তান ও পোষ্যদের জন্য বিশেষ সুবিধা বা কোটার দাবি যুক্তিযুক্ত হতে পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের দাবি সমর্থনযোগ্য নয়।’
তাঁর মতে, একটি গণতান্ত্রিক, সাম্য এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আর্থিক, শ্রেণিগত, শারীরিক বা যে কোনো রকম প্রতিবন্ধকতা থাকলে, সেসব ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, পোষ্যসহ সবার জন্য কোটা ব্যবস্থা থাকতে পারে। তবে সেটাও এক প্রজন্মের বেশি নয়।
কোটা ব্যবস্থা বাতিল না করে সংস্কারের পক্ষে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে মতামত দিয়েছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার। কিন্তু বিষয়টি এখন আপিল বিভাগে বিচারাধীন থাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত আলী ইমাম মজুমদার সমকালকে বলেন, ‘আগে যা বলার বলেছি।’
সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সমকালকে বলেন, ‘বিষয়টি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আপিল বিভাগই সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করে রায় দেবেন। মুক্তিযোদ্ধার পাশাপাশি অন্যান্য কোটার বিষয়ও থাকবে বলে আশা করছি।’ তিনি বলেন, ‘কোটা ব্যবস্থা বাতিল, সংস্কার বা পুনর্বহাল যাই হোক– এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, যারা কোটা বাতিল চাচ্ছেন, তারা কেউ কোর্টে পক্ষভুক্ত হননি। কোর্টে একটি পক্ষ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল চান। অন্য পক্ষ সরকার। তাই সরকারের সিদ্ধান্ত তথা তাদের যুক্তিতর্কভিত্তিক শুনানির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। এ নিয়ে চলমান অস্থিরতা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে আশা করছি।’
কোটা ব্যবস্থা বাতিল সঠিক হয়নি মন্তব্য করে সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান বলেন, ‘২০১৮ সালে কোটা সংস্কারের জন্য আন্দোলন হয়েছিল। কিন্তু সরকার সেটি না করে পুরো ব্যবস্থা বাতিল করে। এটি সঠিক হয়নি। বর্তমান সমস্যার বীজ তখনই রোপিত হয়। এজন্যই বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে।’ তাঁর মতে, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকা প্রয়োজন। বিশ্বের অনেক দেশেই রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতেও কোটা রয়েছে। এর আলোকে বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা সংস্কার হওয়া প্রয়োজন।
আবু আলম আরও বলেন, ‘ভারতে মুসলিম জনগোষ্ঠীর জন্যও কোটা রয়েছে। অথচ সেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠী একেবারে কম নয়। তবে ভারতে কোটা ব্যবস্থার সুবিধা পরিবারের যে কেউ একবারই ব্যবহার করতে পারেন। আমাদের এখানেও কোটা ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তাহলে বিষয়টি সমাধানের পাশাপাশি অনগ্রসর জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে।’
মুক্তিযুদ্ধ গবেষক ও মুক্তিযোদ্ধা জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলী সমকালকে বলেন, ‘সুনির্দিষ্টভাবে মেধার ভিত্তিতে প্রশাসনিক পদ পূরণ হওয়া বাঞ্ছনীয়। তবে ভারতে অনগ্রসর শ্রেণির জন্য বিশেষ ব্যবস্থার বিধান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা মাত্রাতিরিক্ত ছিল। তবে এটাও মনে রাখা দরকার, মুক্তিযোদ্ধারা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তাদের অনেকে এখন দুস্থ জীবনযাপন করছেন। তাই সরকার ও আন্দোলনরতদের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে একটি যুক্তিসংগত সমাধানে পৌঁছাতে হবে। এ ক্ষেত্রে সমাজের অনগ্রসর শ্রেণির বিষয় বিবেচিত হতে পারে। কিন্তু তাও একটি নির্ধারিত সময় পর্যন্ত হওয়া উচিত।’
- বিষয় :
- কোটা
- প্রতিক্রিয়া
- বিশিষ্টজন