ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অভিমত: মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সরকার চাইলে মুহূর্তেই সমস্যার সমাধান সম্ভব

গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমননীতি চালিয়ে নস্যাৎ করা হচ্ছে

সরকার চাইলে মুহূর্তেই সমস্যার সমাধান সম্ভব

মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সমকাল ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ০১:৩০ | আপডেট: ১৬ জুলাই ২০২৪ | ১২:৫৫

সাধারণ শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার চায়। তারা মনে করে, কোটার একটা নির্দিষ্ট সীমায় রেখে বিশেষ সুবিধা হিসেবে থাকা প্রয়োজন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বংশপরম্পরায় থাকতে হবে– এটা কোনোমতেই যৌক্তিক নয়।

যারা এসব নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ টেনে আনছেন, তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমি বলব, মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশ পরিচালনা যাতে নিশ্চিত হয়; সমাজতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে যেন আমরা যেতে পারি, সেটাই ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রধান চেতনা। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা রাখলেই তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হয়ে যায় না।

আমি মনে করি, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অপপ্রচার  চালিয়ে এ আন্দোলনকে ভুলভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে। তরুণরা স্লোগান দিয়েছে– আমরা রাজাকার নই। তারা বলেছে– ‘চাইলাম অধিকার/ হয়ে গেলাম রাজাকার’। তারা পরিষ্কার বলেছে, আমরা রাজাকার নই। যা বাস্তব তা-ই বলেছে। এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে– তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। গণতান্ত্রিক এ আন্দোলনে দমননীতি চালিয়ে তারা তাদের ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত করতে চায়।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো, সমঅধিকারের চেতনা। তবে আমাদের সংবিধানে এটাও আছে– যারা রাষ্ট্রের পিছিয়ে পড়া অংশ, তাদের জন্য বিশেষ সুবিধা দিতে হবে। যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হলো, যারা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করল, তাদের দিয়েই দেশটা ভালোভাবে পরিচালনা করা সম্ভব ছিল। সেই সময়ের জন্য সেটা প্রয়োজনও ছিল। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোনো কোটা করা হলো না। আর এখন তাদের সন্তানাদি, নাতিপুতিদের জন্য কোটা রাখতে হবে– এটার কি কোনো যৌক্তিকতা আছে? নেই। কিন্তু তখন সেই সময়ে সেটা না করে ’৭১ সালের পর পাকিস্তানি আমলের আমলাতন্ত্র, সিএসপি, সেনা অফিসার, প্রত্যাগত সৈন্য ও কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সবকিছু পুরোনো ব্যবস্থা চালু রাখা হলো। ওই সময়ে এটা কিছুদিনের জন্য প্রয়োজন ছিল, মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে দেশ চালানো। আমরা বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) তখন দাবি করেছিলাম, মাঠে লড়াই করা থার্টিন ফোর্সের নেতৃত্বদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় সরকার’ গঠন করুন। কিন্তু সেই সময়ে তা করা হয়নি।

আমি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, আজকে যারা হেলমেট বাহিনী দিয়ে তাণ্ডব চালাল, সরকার তাদের মদদ দিল। আগামীতে অন্য কেউ এসে যদি বলে, আমরা তোমাদের আরও বেশি সুবিধা দেব, তখন তারাই কিন্তু বলবে– স্লামালেকুম আপা, আমাদের কিছু দিচ্ছেন না। আমরা চললাম ম্যাডামের দিকে। এই হলো পরিস্থিতি।

আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করা সাধারণ ছাত্রদের ওপর এই হামলাবাজি অবিলম্বে বন্ধ করা হোক। পাকিস্তানি আমলেও এমন হয়নি যে, হামলা করে আহত করে হাসপাতালের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেন আহতরা চিকিৎসা না পায়। ইসরায়েলিদের মতো বর্বরতা হয়েছে এটা। প্রধানমন্ত্রী গত রোববার সংবাদ সম্মেলনে যে উক্তি করেছেন, সেটি খুবই ত্রুটিপূর্ণ উক্তি। লাখ লাখ সাধারণ ছাত্রছাত্রীর এই আন্দোলনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অবিলম্বে সরকারি চাকরিতে সব কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। কেউ কেউ এটাকে কোটাবিরোধী আন্দোলন বলে পরিস্থিতিকে আরও উস্কে দিতে চান।

আমি মনে করি, কোটা যেমন প্রয়োজন, দক্ষতা আরও বেশি প্রয়োজন। দক্ষতার জন্য ৯৫ শতাংশ রেখে কোটার জন্য ৫ বা ৬ শতাংশ চাকরি রাখা যেতে পারে। এ জন্য একটা বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দিতে হবে।

যেসব ছাত্রলীগ কর্মীকে লাঠি হাতে দেখা যাচ্ছে, তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সার্বিক সমাধানকল্পে সরকারিভাবে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিশন বা কমিটি গঠন করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। যারা ছাত্রদের সঙ্গে বসে আলাপ-আলোচনা করে, দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে সাম্য এবং যৌক্তিকতার ভিত্তিতে সবার পরামর্শের আলোকে কোটা সমস্যার সমাধান করবেন। অবিলম্বে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা হোক। সরকার চাইলে এক মুহূর্তেই এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

লেখক: ডাকসুর সাবেক ভিপি, সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক সভাপতি

আরও পড়ুন

×