ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

বড় সংকটে দেশের পোলট্রি খাত

বড় সংকটে দেশের পোলট্রি খাত

কোলাজ

 জাহিদুর রহমান

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৪ | ২২:২৪

গাজীপুরের কাপাসিয়ার যুবক আবদুল ওহাব বছর দুয়েক আগে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন। তিনি খামারে এক দিনের বাচ্চা উৎপাদন ও বিক্রি করেন। কিন্তু ৫-৬ দিন ধরে বড় সংকটে পড়েছেন তিনি। সহিংসতার কারণে এক দিনের বাচ্চা খামারিদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না। এগুলো বড় করার ব্যবস্থাও তাঁর নেই। ফলে গতকাল পর্যন্ত তাঁকে প্রায় ১ লাখ বাচ্চা মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়েছে।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের পোলট্রি খামারি সুমন চৌধুরী দৈনিক ২০ হাজার পিস ডিম ও বিভিন্ন জাতের ৫ হাজার কেজি মুরগি বিক্রি করেন। খামারে উৎপাদিত ডিম-মুরগি তিনি ঢাকায় আড়তে পাঠান। কিন্তু আন্দোলন-সহিংসতার কারণে ডিম-মুরগি তিনি ঢাকায় পাঠাতে না পেরে স্থানীয় বাজারে পানির ধরে বিক্রি করছেন। এতে দৈনিক কয়েক লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে বলে জানান তিনি। সংরক্ষণের ব্যবস্থা অর্থাৎ হিমাগার না থাকায় তিনি এমন সমস্যায় পড়েছেন। পরিবহন মালিকরাও পণ্য নিয়ে রাস্তায় নামতে চাচ্ছেন না। একদিকে পণ্য পরিবহনে সমস্যা, অন্যদিকে পোলট্রি ফিডের সংকট– এমন অবস্থায় খামারে থাকা মুরগি আছে হুমকিতে।

গাজীপুরের আবদুল ওহাব ও সুবর্ণচরের সুমন চৌধুরীর মতো অবস্থা দেশের লাখ লাখ পোলট্রি খামারির। পণ্য বিক্রি বন্ধ এবং পোলট্রি ফিডের সংকটের কারণে প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। উৎপাদিত ডিম-মুরগি ও ফিড পরিবহন নির্বিঘ্ন করতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি করেছেন তারা।

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব খন্দকার মো. মহসিন সমকালকে বলেন, ‘পোলট্রি খাত চরম বিপর্যয়ে পড়েছে। খামার থেকে ডিম ও মুরগি বিক্রি হচ্ছে না, যা বিক্রি হচ্ছে তাও পানির দরে। বাজারে যে দামে ডিম-মুরগি বিক্রি হচ্ছে, খামারিরা সেই দাম পাচ্ছেন না। লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে। দৈনিক ৪ কোটি ২০ লাখ ডিম উৎপাদন হলেও তা বাজারে সরবরাহ করা যাচ্ছে না।’ তিনি বলেন, ‘অনেক এলাকায় তেলের পাম্প বন্ধ। গাড়ি ভাড়া বেশি। চারদিকে আতঙ্ক। পোলট্রি খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ব্যাংক ও ইন্টারনেট বন্ধ। পোলট্রির খাদ্য, ওষুধসহ অন্যান্য উপাদান বিদেশ থেকে আনা যাচ্ছে না। অনেক এলাকায় খামার বন্ধের উপক্রম হয়েছে। প্রতিদিন লোকসান দিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে।’ আর ৪-৫ দিন এমন পরিস্থিতি থাকলে অনেক এলাকায় পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যাতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তখন আগের অবস্থায় ফেরানো কঠিন হবে। ফলে সরকারকে পোলট্রি খাত সচল রাখতে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে।’

বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ সমকালকে বলেন, ‘পোলট্রি খাত জীবন্ত। এখানে বিক্রি হোক আর না হোক, মুরগিকে খাওয়াতে হচ্ছে। দৈনিক শত শত কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হলেও তা সরবরাহ করা যাচ্ছে না। ব্যাংক, ইন্টারনেট সবকিছুই বন্ধ। কিন্তু পোলট্রি খামার ও প্রক্রিয়াজাত কারখানা বন্ধ নেই। শুধু উৎপাদিত পণ্য গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘পণ্য নিয়ে চারটি গাড়ি রাস্তায় বের হলে দুটি আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পোলট্রি খাতের পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ আছে। পরিস্থিতি এভাবে চলতে থাকলে পোলট্রি খাতকে এ বিপর্যয় থেকে টেনে তোলা যাবে না। সবাইকে মনে রাখতে হবে, দেশের সব সংকটে কৃষি-পোলট্রিই শেষ ভরসা। ফলে সরকার ও আন্দোলনকারীদের দেশের স্বার্থে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করতে হবে। সবকিছু খুলে দিতে হবে।’ 

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. রেয়াজুল হক সমকালকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলছি। কোথাও কোনো সমস্যার খবর পেলে স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। দুধ, ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও এক দিনের বাচ্চা জরুরি পরিষেবার মধ্যে পড়ে। এসব পণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা খামারিদের কাছে নেই। ফলে এগুলো কারফিউর আওতামুক্ত রাখা এবং পরিবহনে নিরাপত্তা দেওয়া উচিত। আমরা খামারিদের বর্তমান অবস্থা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি। দেশের মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে পোলট্রি ও ডেইরি পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে। দেশের স্বার্থে এদিকে সবার নজর দেওয়া উচিত।’

এ বিষয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ‘আমরা পোলট্রি খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের সমস্যা আমাদের জানিয়েছেন। চলমান সংকট থেকে উত্তরণে আমরা কাজ করছি। পোলট্রি খাতের বর্তমান অবস্থা সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। খাদ্যপণ্যবাহিত পরিবহন কারফিউর আওতামুক্ত। খামারিদের পণ্য আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহৃত গাড়ি যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে, তার জন্য আমরা সংশ্লিষ্টদের লিখিতভাবে জানাব। আশা করি, পরিস্থতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে।’ 

আরও পড়ুন

×