সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ

সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ১৫:২৮ | আপডেট: ১৮ আগস্ট ২০২৪ | ২০:৩৮
সাবেক প্রধান বিচারপতি ও সদ্য আইন কমিশন থেকে পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান এবিএম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন খারিজ হয়েছে। প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির অভিযোগে এ মামলার আবেদন করেছিলেন ইমরুল হাসান নামে এক আইনজীবী।
রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তাহমিনা হকের আদালতে এই আবেদন করেন তিনি। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড শেষে মামলাটি গ্রহণের উপাদান না থাকায় খারিজের আদেশ দেন। সংশ্লিষ্ট আদালত সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশ সংবিধানে যোগ করা হয়েছিল। এরপর থেকে নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়ে পরবর্তী সরকার গঠিত হচ্ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ কয়েকজন রিট আবেদন করলে ২০০৪ সালে হাইকোর্ট তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে বৈধ বলে ঘোষণা করে রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ‘ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধান সম্মত ও বৈধ। এ সংশোধনী সংবিধানের কোনও মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নাই।
রিট আবেদনকারী ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০১০ সালের ১ মার্চ আপিল বিভাগে এর শুনানি শুরু হয়। আপিল আবেদনকারী এবং রাষ্ট্রপক্ষ ছাড়াও শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে শীর্ষস্থানীয় আটজন আইনজীবী বক্তব্য দিয়েছেন। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে সিনিয়র আইনজীবী টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম ও রোকনউদ্দিন মাহমুদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন।
আবেদনে আরও বলা হয়, অ্যামিকাস কিউরিদের বক্তব্য আমলে না নিয়ে এবিএম খায়রুল হক তার চাকরি মেয়াদকালের শেষের দিকে তড়িঘড়ি করে ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে রায় দেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিল। ২০১২ সালের ১৭ মে এবিএম খায়রুল হক অবসর নেন। সেই সঙ্গে তিনি ওই আপিল মামলার নথি বাসায় নিয়ে যান, যা বেআইনি। রায় দেওয়ার ১৬ মাস ৩ দিন পর ২০১২ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলায় প্রকাশ্যে আদালতে ঘোষিত রায়ে সুপ্রিম কোর্ট দুই মেয়াদ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বহাল রাখার পথ খোলা রেখেছিলেন। কিন্তু প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক অবসরে গিয়ে রায় ঘোষণার ১৬ মাস ৩ দিন পর যে রায় প্রকাশ করলেন সেখানে তিনি এ অংশটি রাখেননি। অসাধুভাবে প্রধান বিচারপতির পদ ব্যবহার করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে এ রায় দেন।
এবিএম খায়রুল হক ২০১০ সালের ১ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১২ সালের ১৭ মে পর্যন্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। তিনি উচ্চ আদালতে বিচারপতি থাকাকালে প্রায় পুরো সময়ে বাংলায় রায় দিয়ে নজির স্থাপন করেছেন। খায়রুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি ও যুক্তরাজ্যের লিংকনস-ইন থেকে বার অ্যাট ল ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে জেলা জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কাজ শুরু করে ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৯৮ সালে হাইকোর্টের বিচারপতি নিযুক্ত হন তিনি। ২০১০ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি হন।
- বিষয় :
- মামলা
- মামলা খারিজ
- সংবিধান সংশোধনী