টেন্ডারের খোঁজখবর নিচ্ছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা

.
যোবায়ের আহমদ
প্রকাশ: ৩০ আগস্ট ২০২৪ | ০১:১৬
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনে বিএনপিপন্থি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রভাব বেড়েছে। কর্মকর্তাদের একটি দল দপ্তরে দপ্তরে গিয়ে বিএনপি পরিচয়ে শোডাউন দিচ্ছে। রেজিস্ট্রারসহ কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদগুলো নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। প্রকৌশল দপ্তরে গিয়ে টেন্ডারের খোঁজ নিতে শুরু করেছেন ছাত্রদলের সাবেক এক নেতা। তবে ছাত্রদলের বর্তমান কোনো নেতাকে এসব কাজে দেখা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে দলটির অনুগতদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। অনেকে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ পরিচয়ে নিয়োগ পেয়েছেন, নানা সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন। এ সময় বিএনপিপন্থিদের সংখ্যা ছিল নগণ্য। বিএনপিমনা অনেকেও গত ১৫ বছরে প্রশাসনের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে নানা সুযোগ-সুবিধা বাগিয়েছেন। তবে কয়েকজন কোণঠাসা ছিলেন দীর্ঘদিন। কিন্তু সরকার পতনের পর বিএনপিপন্থিদের সংখ্যা ও প্রভাব, দুই-ই বাড়তে শুরু করেছে। লোভনীয় পদগুলো পেতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন অনেকে।
জানা গেছে, গত ৬ আগস্ট মনোবিজ্ঞান বিভাগের কর্মকর্তা মো. সফিউল্যাহ, রোকেয়া হলের কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান, সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী গ্রন্থাগারিক উত্তর কুমার, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের কর্মকর্তা আহসানুল কবিরসহ কর্মকর্তাদের একটি দল প্রশাসনিক ভবনে অফিসে গিয়ে মহড়া দেয়।
গত বুধবার অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সভা করেছেন বিএনপি সমর্থক ১০-১৫ কর্মকর্তা। এর মধ্যে ছিলেন হিসাব পরিচালক সাইফুল ইসলাম, পরিবহন ম্যানেজার কামরুল হাসান, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আমজাদ হোসেন শিশির, সফিউল্যাহ প্রমুখ। সভায় কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদগুলোতে কাকে বসানো যাবে, এসব বিষয়ে তারা আলাপ-আলোচনা করেছেন।
রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, কলেজ পরিদর্শক, এস্টেট ম্যানেজার, কর্মচারীদের নিয়োগ দপ্তর প্রশাসন-৮ ও ৯ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদগুলো তারা নিজেদের অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এসব বিষয়ে জানতে রোববার বিকেলে যোগাযোগ করা হলে সফিউল্যাহ সমকালকে বলেন, ‘আমরা প্রায়ই সভায় বসি। বিএনপি করে না এমন লোকজনও থাকে এখানে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা কি চাইব না যে, আমরা ভাইব্রাদাররা ভালো থাকি? ১৬ বছর যারা বঞ্চিত হয়েছে, একটু যাতে রিকভারি করতে পারি। আমরা কিছু পরিকল্পনা করব, কিছু কাজ করব, কাকে কোথায় নিতে পারব, কাকে কোথায় সরাব– এসব পরিকল্পনা কি আমরা করতে পারি না? এসব তো সব জায়গায় হয়। গণতন্ত্রের চারণভূমি আমেরিকায় নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট পুরো প্রশাসনের পরিবর্তন করে ফেলেন।’
কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যারা সরাসরি ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম, তারা একটু মতবিনিময় করছি।’
এদিকে গত ৬ আগস্ট থেকে ছাত্রদলের সাবেক নেতা পরিচয়ে প্রকৌশল দপ্তরে গিয়ে দরপত্রের খোঁজ নিয়েছেন ডজনখানেক নেতা। তাদের কেউ নিজেকে সূর্য সেন হল ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি, আবার কেউ স্বেচ্ছাসেবক দলের পরিচয় দিয়েছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রকৌশলী বলেন, ‘তারা অনেকেই আসছেন। তারা দাবি করছেন, তারা ১৫-২০ বছর আগে ক্যাম্পাসে ছিলেন। আমরা তাদেরকে বলেছি, ভিসি আসুন। এখন তো প্রশাসনের কোনো কার্যক্রম নেই। নিয়মতান্ত্রিকভাবে আপনারা টেন্ডার কার্যক্রমে অংশ নেবেন।
প্রধান প্রকৌশলী কাজী আকরাম হোসেন বলেন, ‘আমার কাছেও কয়েকজন এসেছে। সামনে থেকে সব টেন্ডার প্রক্রিয়া ই-জিপিতে (অনলাইনে) হবে। এখানে যে কেউই অংশ নিতে পারে। কে কোন দলের– এটি এখানে কোনো বিষয় নয়।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন সমকালকে বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুসারে দলীয় পরিচয়ে কেউ অপকর্ম করলে বহিষ্কার করা হচ্ছে। তাদের আইনের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে। আমরা ছাত্রদলও এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স।’
তিনি বলেন, ‘ছাত্রদলের কেউ আংশিকভাবেও এসব কাজে জড়ালে একজনেরও কোনো অন্যায় বরদাশত করব না।’
- বিষয় :
- টেন্ডার