আসামিদের দাপটে জনির পরিবার নিরাপত্তাহীনতায়
পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু

প্রতীকী ছবি
ইন্দ্রজিৎ সরকার
প্রকাশ: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২৩:৫৭
রাজধানীর পল্লবী থানা পুলিশের হেফাজতে ইশতিয়াক হোসেন জনির মৃত্যুর ঘটনায় করা আলোচিত মামলার বিচার শেষ হয়নি এক দশকেও। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের প্রথম মামলা ছিল এটি। চার বছর আগে এ মামলার বিচারের রায় ঘোষণা হয়। এখন চলছে দণ্ডিতদের করা আপিলের শুনানি। তবে মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। পলাতক ও জামিনে থাকা আসামি এবং কারাবন্দি আসামির স্বজনরা তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরই মধ্যে হামলা-ভাঙচুর হয়েছে বাদীর কর্মস্থলে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম রেজাউল করিম সমকালকে বলেন, গত ৩১ জুলাই মামলাটির শুনানি হয়। আগামী শুনানির তারিখ নির্ধারণ হয়েছে ২৩ অক্টোবর। এ পর্যন্ত ১৩ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। আরও ১১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ বাকি আছে। দ্রুতই বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে দায়ীদের সাজার মুখোমুখি করা সম্ভব হবে।
২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি পল্লবী-১১ নম্বর সেকশনের ইরানি ক্যাম্পে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে গাড়িচালক জনি ও তাঁর ভাই রকিকে আটক করে পুলিশ। তাদের পল্লবী থানায় নিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে জনি মারা যান। এ ঘটনায় ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলা করেন রকি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মারুফ হোসেন ২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন জমা দেন। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা এ মামলায় পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। তারা হলেন– পল্লবী থানার তৎকালীন এসআই জাহিদুর রহমান জাহিদ, এএসআই রাশেদুল হাসান ও কামরুজ্জামান মিন্টু, পুলিশের সোর্স সুমন ও রাসেল।
আদালত সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক কে এম ইমরুল কায়েস এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এতে তিন পুলিশ কর্মকর্তার যাবজ্জীবন এবং দুই সোর্স সুমন ও রাসেলকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডিত প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুক্তভোগীর পরিবারকে ২ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়। দণ্ডিতদের মধ্যে এএসআই মিন্টু ও সোর্স রাসেল ছাড়া অপর তিনজন কারাগারে আছেন। পুলিশের ধারণা, মিন্টু বিদেশে পালিয়ে গেছেন। আর জামিনে আছেন রাসেল। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করছে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
নিহতের ছোট ভাই ও মামলার বাদী ইমতিয়াজ হোসেন রকি বলেন, নানাভাবে আসামিরা প্রভাব খাটিয়ে ও আইনের ফাঁকফোকর গলে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পলাতক পুলিশ সদস্য মিন্টুকে এত বছরেও আইনের আওতায় আনা গেল না। অথচ রায় ঘোষণার কিছুদিন আগে পর্যন্ত তিনি চাকরি করেছেন।
তিনি জানান, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পলাতক ও জামিনে থাকা আসামি এবং কারাবন্দি আসামির স্বজনরা নানামুখী তৎপরতা শুরু করেন। হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। এতদিন স্থানীয় একজন জনপ্রতিনিধি মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সহায়তা করেছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তিনি আত্মগোপনে থাকায় আসামি পক্ষের লোকজন বেপরোয়া আচরণ করছেন।
গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় পল্লবী-১১ নম্বরের বড় মসজিদ এলাকায় রকির গ্যারেজে ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সেখানে তাঁর একটি ঘর ভাড়া দেওয়া ছিল। সেই ভাড়াটেকেও বলা হয়েছে, তিনি যেন ভাড়া না দেন। মাঝে স্থানীয়রা সালিশ করে আসামি পক্ষের লোকদের বিরত থাকতে বলেছেন।
- বিষয় :
- পুলিশের নির্যাতনে মৃত্যু