চট্টগ্রাম আউটারে ফিরেছে ‘প্রাণ’

ছবি- মো. রাশেদ
শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম
প্রকাশ: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩:২২ | আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৩:৪৩
দুর্জয় ও শান্তর হাতে দুটি ক্রিকেট ব্যাট। তাদের বাবা মোহাম্মদ মহসিনের হাতে স্টাম্প ও বল। আর মা তন্বী মহসিনের হাতে পানির বোতল ও নাশতার প্যাকেট। এভাবে ছেলেদের নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেন তারা। মাঠের একপাশে স্টাম্প গেঁড়ে শুরু করে দেন ক্রিকেট অনুশীলন। দুর্জয় ও শান্তকে একের পর এক বল ছুড়তে থাকেন বাবা মহসিন। ছেলেদের ব্যাটে আঘাতে মাঠের নানা কোণায় যাওয়া বল কুড়িয়ে স্বামীকে দেন তন্বী। তাদের মতো আরও অনেকেই মাঠে ক্রিকেট, ফুটবল খেলছে। মাঠের কয়েকটি অংশে আবার টুর্নামেন্টও হচ্ছে; চলছে প্রশিক্ষণও।
এটি চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহাসিক কাজির দেউড়ি আউটার স্টেডিয়ামের প্রতিদিনকার চিত্র। চট্টগ্রাম নগরে খেলার মাঠের অপ্রতুলতার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধদের দখলে থাকা মাঠটি খেলাধুলার জন্য আবারও উন্মুক্ত হওয়ায় এটি এখন দুর্জয়, শান্তর মতো অনেকের জন্য স্বস্তির নিঃশ্বাস হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একসময় এখানে নিয়মিত খেলতেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান, তামিম ইকবাল, নাফীস ইকবাল, মিনহাজুল আবেদীন নান্নু, আফতাব আহমেদসহ অনেকেই। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গল টিমও খেলেছে এ মাঠে। তবে গত তিন দশক ধরে দখলদারদের থাবায় মাঠটি পরিণত হয় জঞ্জালে। সৌন্দর্যবর্ধনের নামে এটিকে পরিণত করা হয় ব্যবসা কেন্দ্রে। দখলদাররা মাঠের ভেতরেই গড়ে তোলে অঘোষিত ‘গাড়ি রাখার টার্মিনাল’। মাঠের চারপাশে ছোট-বড় রেস্টুরেন্টসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। বছরের বেশির ভাগ সময় এখানে রাজত্ব চলত মেলার। রাতে বসত মাদকসেবীদের আসর।
তবে দীর্ঘদিন পর হলেও দখলদারমুক্ত হওয়া আউটার স্টেডিয়ামে ফিরেছে ‘প্রাণ’। সরেজমিন দেখা যায়, দুপুরের পর থেকে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবেঁধে ক্রিকেট, ফুটবল খেলতে এখানে ছুটে আসছেন নানা বয়সীরা। মাঠটি উন্মুক্ত হওয়ায় ছোট ছোট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে এখানে। সন্ধ্যার পর দলবদ্ধভাবে গল্প-আড্ডায় মেতে ওঠেন অনেকেই। রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত মুখরিত থাকে পুরো মাঠ।
নগরের আসকারদিঘির বাসিন্দা মোহাম্মদ মহসিন বলেন,
দীর্ঘদিন পর দখলমুক্ত করে মাঠকে সবুজায়ন করে খেলার উপযোগী করা হয়েছে। তাই দুই ছেলেকে নিয়ে এখানে ছুটে এসেছি।
চকবাজার থেকে ছেলেকে নিয়ে আসা গৃহিনী কানিজ ইসলাম বলেন, ‘মাঠটি উন্মুক্ত হওয়ায় আমার ছেলের মতো অনেকের খেলাধুলার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাই সুযোগ পেলেই ছেলেকে নিয়ে ছুটে আসি। ছেলে খেলাধুলা করে আর আমি মাঠে হাটাচলা করি।’
নিয়মিত ক্রিকেট প্রশিক্ষণ করা স্কুল শিক্ষার্থী মো. জুনায়েদ বলেন,
স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন বিকেলে অনুশীলন করতে আসি। কয়েকটি স্কুলের বেশ কয়েকজন ছাত্র একত্রে ক্রিকেট খেলতে পেরে আনন্দিত।
মাঠের রক্ষণাবেক্ষণের প্রতিও গুরুত্ব দিয়েছেন অনেকে। আবারও যাতে দখলে চলে না যায় সেদিকে নজর রাখার পরামর্শও দিয়েছেন।
আউটার স্টেডিয়াম সংস্কারে চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থার (সিজেকেএস) নিজস্ব অর্থায়নে ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে এখানে ঘাস গজানোর জন্য ব্যবহার করা হয় আধুনিক স্প্রেডিং পদ্ধতি। ঘাষ বড় করতে টানা কয়েকমাস করা হয় নিয়মিত পরিচর্যা। মাঠের চারপাশে দেওয়া হয়েছে লোহার বেষ্টনি। এর আগে শেষ করা হয় বালু ভরাট ও ফিনিশিংয়ের কাজ। দ্বিতীয় ধাপে গ্যালারি, ড্রেসিং রুম, অনুশীলনের জন্য আলাদা ক্রিকেট, ভলিবল আর হ্যান্ডবলের কোর্ট করার পরিকল্পনা ছিল।
তবে দেশের পটপরিবর্তনের কারণে এসব কাজ বাস্তবায়ন হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিপর্যস্ত আউটার স্টেডিয়ামের চারপাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে গতবছরের ২৯ সেপ্টেম্বর উন্নয়ন কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে বদলি হওয়া সাবেক জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। পদাতিকার বলে তিনি সিজেকেএস’র সভাপতিও।