ঢাকা রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর

নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি হলেও ১২ বছরে পদোন্নতি নেই ক্যাডারদের

নন-ক্যাডারদের পদোন্নতি হলেও ১২ বছরে পদোন্নতি নেই ক্যাডারদের

.

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:২৪ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৮:২৮

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে বিসিএসের মাধ্যমে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ক্যাডার কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকে একই পদে রয়েছেন। গত ১২ বছরে কোনো পদোন্নতি পাননি তারা। অথচ যারা ক্যাডার কর্মকর্তা নন তারা পদোন্নতি পেয়েছেন। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প ও নন–ক্যাডার থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্ত করে সহকারী প্রকৌশলী পদ থেকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে পিএসসির মাধ্যমে ৩০, ৩১ ও ৩২তম বিসিএসে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।

পদোন্নতি বঞ্চিত একজন ক্যাডার কর্মকর্তা বলেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর একটি ক্যাডার অধিদপ্তর হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে নন-ক্যাডার ও প্রকল্পের মাধ্যমে নিয়োগকৃত কর্মকর্তাদের অবৈধভাবে ক্যাডারভুক্তকরণ ও পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন বিসিএসে ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগের ফাঁকে ফাঁকে নন-ক্যাডার কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়। সহকারী প্রকৌশলী পদে অল্পসংখ্যক ক্যাডার এবং অধিক সংখ্যক নন-ক্যাডার নিয়োগ দেয়ায় ক্যাডারে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এই অধিদপ্তরে প্রকল্প থেকে আত্মীকৃত, ক্যাডার ও নন-ক্যাডারের সংমিশ্রণে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে কিছু প্রভাবশালী ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার প্রভাবে বেআইনিভাবে নন-ক্যাডার কর্মকর্তাদের একাধিকবার ক্যাডারে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এমনকি যোগ্যতাসম্পন্ন ক্যাডার কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে নন-ক্যাডারদের ক্যাডারভুক্তির পাঁচমাসের মধ্যে তাদেরকে পঞ্চম গ্রেডে পদোন্নতিও দেওয়া হয়।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে নিয়মিত করা ৩২ জন ও ৫৮ জন নন-ক্যডারসহ মোট ৯০ জন সহকারী প্রকৌশলীকে ক্যাডারভুক্তির উদ্দেশ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২২ সালে নিয়োগ বিধিমালা সংশোধন করে। যেখানে ভূতাপেক্ষিক ক্যাডারভুক্তির কোন নির্দেশনা ছিল না। নিয়োগবিধি সংশোধনে এবং ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল) গঠন ও ক্যাডার বিধিমালা, ১৯৮০’ সংশোধন করে সহকারী প্রকৌশলীর ক্যাডার পদ ৫০টি থেকে ২৩৫টিতে বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপনেও কোন ভূতাপেক্ষিক কার্যকারিতা দেওয়া হয়নি। এমনকি, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় ওই ৯০ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার পদে অন্তর্ভুক্ত করার কোন সুপারিশ করেনি। বরং বিদ্যমান ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার পর ওই ৯০ জন নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে ক্যাডারভুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে পিএসসি। তা সত্ত্বেও স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০২২ সালে ৯০ জন কর্মকর্তাকে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল ক্যাডারে তাদের রাজস্বখাতে যোগদানের তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডারভুক্ত করে। ফলে ২০০৪ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় থেকে এই ৯০ জন কর্মকর্তা ভূতাপেক্ষভাবে ক্যাডার হয়ে যান ২০২২ সালে এসে। 

এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিভিন্ন অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। যে সময় থেকে তারা ক্যাডারভুক্ত সে সময়ে ক্যাডারে পর্যাপ্ত পদই ছিল না। এই গেজেট প্রকাশের ফলে বিদ্যমান ক্যাডার কর্মকর্তারা জ্যেষ্ঠতার ক্ষেত্রে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। এই ৯০ জনের মধ্যে অনেকে বিসিএস পরীক্ষাই দেননি। আবার কয়েকজন বিসিএসে উত্তীর্ণ হলেও পদস্বল্পতার কারণে নন-ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। অথচ বিসিএস ক্যাডারদের কয়েকমাস আগে অধিদপ্তরে নন-ক্যাডার পদে যোগদান করে তারা ক্যাডার কর্মকর্তাদের সিনিয়র হয়ে যান। এছাড়া এই অধিদপ্তরের বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওই গেজেট প্রকাশের পর থেকে তাদের অধিনস্ত বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জুনিয়র হয়ে যান।

ক্যাডার কর্মকর্তারা গত ২৫ আগস্ট অন্তবর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপদেষ্টার কাছে জরুরি ভিত্তিতে ৯০ জনের এনক্যাডারমেন্টের প্রজ্ঞাপন বাতিল, এনক্যাডারড কর্মকর্তাদের ৫ম গ্রেডে পদোন্নতির প্রজ্ঞাপন সংশোধন ও পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের বিধিসম্মতভাবে পদোন্নতি প্রদানের দাবি জানান। তারা মনে করেন, এ সমস্যার সমাধান করা না হলে বিদ্যমান ২৫ জন ক্যাডার কর্মকর্তার মতো ৪১তম বিসিএসের মাধ্যমে নতুন যোগদান করা ৩১ জন ও ৪৩তম বিসিএসের মাধ্যমে সুপারিশকৃত ৫০ জন কর্মকর্তাও পরবর্তীতে এ বৈষম্যের শিকার হবেন। অধিদপ্তরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়োগবিধি সংশোধনের প্রজ্ঞাপনে ক্যাডারভুক্তির তারিখ নির্দিষ্টকরণ করার দাবি জানান। যাতে নিয়োগবিধি সংশোধন স্বচ্ছ হয় ও পরবর্তীতে দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত থাকে।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খাঁ সমকালকে বলেন, ৩০, ৩১ ও ৩২ বিসিএস থেকে আসা কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে ১২-১৩ জন নির্বাহী প্রকৌশলী হয়েছেন। বাকিদের চাকরির বয়স ১০ বছর পার হয়নি তখন, একারণে তারা পদোন্নতি পাননি। তবে একেবারে সুনির্দিষ্ট কতজনের হয়েছে, কতজনের হয়নি তা জানাতে গেলে সময় লাগবে। কাগজপত্র দেখে বলতে পারব।

আরও পড়ুন

×