ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

‘মনের দেয়ালে’ বহু প্রত্যাশা

সবার চাওয়া ‘শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়’

‘মনের দেয়ালে’ বহু প্রত্যাশা

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মনের দেয়ালের সামনে মো. মোহসিন রেজা। ছবি: সমকাল

ইয়াসির আরাফাত

প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:০২ | আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ২০:৪৯

সরকার পতনের তিন দিন আগে প্রথমবারের মতো আন্দোলনের মিছিলে যোগ দেন ব্যবসায়ী মোহসিন রেজা। গত ২ আগস্ট রাজধানীর শাহবাগে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি একজনকে দেখতে গিয়ে রাস্তায় মিছিলে পা মেলাতে শুরু করেন। সরকার পতনের দু'দিন পর থেকেই তিনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, শাহবাগ, প্রেস ক্লাবসহ বিভিন্ন জায়গায় দুই খুঁটির একটি স্ট্যান্ডে আর্ট পেপার সাঁটিয়ে তাতে মনের কথা লিখতে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে আসছেন। দেশ, রাজনীতি কিংবা চারপাশের যে কোনো বিষয় নিয়ে যে কেউ মনের কথা নামে বা বেনামে লিখতে পারছেন। কেউ সংস্কারের পক্ষে বলছেন, কেউ বিগত সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তবে তরুণদের বেশির ভাগ লেখায় ফুটে উঠছে আশাবাদ। চার ফুট প্রস্থ ও আট ফুট দৈর্ঘ্যের বোর্ডে ৩৩ ইঞ্চি প্রন্থ ও ৪৩ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের দুটি কাগজের শিট ঝোলানো থাকে। এ ছাড়া থাকে মার্কার পেন, লোকজন তা নিয়ে মনের কথা লিখে দেন। বাঁধা ধরা কোনো নিয়ম নেই, কেউ হয়তো এক লাইনে আন্দোলনে নিহতদের স্মরণ করছেন, কেউবা কয়েক ছত্রের ছড়া-কবিতা লিখছেন। এ পর্যন্ত হাজার দশেক মানুষ মোহসিন রেজার এই মনের দেয়ালে মন্তব্য লিখেছেন।

শুক্রবার মালিবাগে নিজ বাসায় বসে এই কৃষি উদ্যোক্তা বলছিলেন, ‘শুধু শিক্ষার্থী নন, বিভিন্ন ধরনের মানুষ স্লোগান দিচ্ছেন। আমার মনে হলো, তাদের দাবি-দাওয়া ন্যায্য। আমি কেন এতে অংশ নেব না? সরকার পতনের পরদিন শাহবাগে গেলাম, নতুন দেশের নেতা কারা, তাদের দেখব এই আশা নিয়ে। সারাদিন শাহবাগ এলাকায় থেকে রাতে বাসায় এসে কিছু করার তাগিদ অনুভব করলাম। মনে হলো, আমারও কিছু করা উচিত। সেই থেকে মানুষ আসলে কী চায় তা জানা জরুরি মনে হলো। তই এই মনের দেয়াল চালু করলাম।’

সবচেয়ে বেশি যে কথাগুলো লিখেছেন লোকজন এর মধ্যে আছে- শহীদদের রক্ত যেন বৃথা না যায়, দেশ রক্ষার দায়িত্ব সবার, স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন, পুলিশের বিচার করা হোক, সব আয়নাঘর খুলে দেওয়া হোক, ভারত বিরোধিতাই দেশপ্রেম, খুনি হাসিনার বিচার চাই, নাটক কম করো পিও, আবু সাঈদের খুনির বিচার চাই। আরও আছে- সকল হত্যার বিচার করো, নিজ দেশে পরাধীন হয়ে থাকতে চাই না, দেশে ছাত্রলীগের কোনো ঠাঁই নাই, স্বৈরাচারের দোসররা যেন ছাড় না পায়, নিয়োগ পরীক্ষায় সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের ছেলেমেয়েদের দেশেই পড়াতে হবে এবং তাদের পরিবারের সবার চিকিৎসা দেশেই করা বাধ্যতামূলক করতে হবে। এ ছাড়া অনেকে ব্যক্তিগত সম্পর্ক, প্রেম, ভালোবাসা নিয়েও লিখেছেন।

গত ৭ আগস্ট থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, গণঅধিকার পরিষদ, মায়ের ডাক, জাতীয় নাগরিক কমিটি, জাস্টিস ফর জুলাইসহ বহু দল ও সংগঠন আয়োজিত অনুষ্ঠানস্থলে মনের দেয়াল বসিয়েছেন মোহসিন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি তরুণদের লেখা পেয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অনুষ্ঠানে। মোহসিন বলেন, 'অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য, বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে সবচেয়ে কম সাড়া পেয়েছি।' রাজনীতি নিয়ে একরকম বিরক্ত ছিলেন মোহসিন। ব্যবসা-বাণিজ্য, পরিবার আর বন্ধুদের নিয়ে মেতে থাকতে পছন্দ করেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা। তাদের দুই ছেলে। একজন ধানমন্ডি আইডিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণিতে আর অন্যজন শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টমে পড়ে। মোহসিন জানান, দুই ছেলেই আন্দোলনের দাবি-দাওয়াগুলো সমর্থন করে।

আরও পড়ুন

×