ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম একনেক সভা

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত 

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত 

ছবি: সংগৃহীত

 সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০৫:১৭

চলতি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার পরিবর্তে সরকার গঠিত অর্থনৈতিক উন্নয়ন-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলবে। 

তিন মাসের মধ্যে টাস্কফোর্স প্রতিবেদন প্রকাশ করবে। এই তিন মাস কিছু ছোট নতুন প্রকল্প অনুমোদন করা হতে পারে। 

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ ছাড়া বিদেশি ঋণের প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবায়ন করা এবং দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করে প্রকল্পের মানসম্পন্ন বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। প্রকল্পের ব্যয় কেন বাড়ে, সময় মতো কেন বাস্তবায়ন হয় না– এসব বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করার উপায় বের করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এ ছাড়া নতুন করে মেগা প্রকল্প না নেওয়া এবং জ্বালানি সমস্যার সাশ্রয়ী সমাধানে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি- বাপেক্সকে শক্তিশালী করাসহ আরও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়। 

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে এবারের একনেক সভা হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভায় সভাপতিত্ব করেন। সাধারণত রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই সভা হয়। 

সভা শেষে পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি এক ধরনের রাজনৈতিক দলিল। রাজনৈতিক সরকার তাদের মতো করে পরিকল্পনা করবে, নীতিনির্ধারণ করবে। এতে রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা থাকে। আমরা বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেব না। সেজন্য অর্থনীতির জন্য দিকনির্দেশনা ও অর্থায়ন নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে এই টাস্কফোর্স প্রতিবেদন দেবে।

উপদেষ্টা বলেন, বিগত সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সব প্রকল্প বাদ দেওয়া হচ্ছে। একনেকে বিপুলসংখ্যক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে একনেকে প্রকল্প অনুমোদনের পর মনের আনন্দে ভোগ করা হতো। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রকল্প পরিচালক, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ঠিকাদার মিলে তাদের মতো করে  বাস্তবায়ন করত। এ কারণে বাস্তবায়ন ঠিকমতো হতো না। দ্বিতীয়, তৃতীয় সংশোধনের মাধ্যমে সময় ও ব্যয় বাড়ানো হতো। এর জন্য দায়ী কে তাদের ধরা যেত না। তিনি বলেন, বিগত সরকারের অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক প্রকল্পও থাকত। তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্য ভালো ছিল। তবে এর রাজনৈতিক ব্যবহার হয়েছে। ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে বিরোধী ভূমিকা ছিল এগুলোর। 

ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, উন্নয়নের নতুন ধারা শুরু হয়েছে। অনেক প্রকল্প গ্রহণ করার চেয়ে মানসম্পন্ন বাস্তবায়নকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। প্রকল্প বাস্তবায়ন যত কমই হোক সেটা যেন মানসম্পন্ন হয়। তৈরি পোশাক রপ্তানি, প্রবাসী আয় ও কৃষিতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি ছাড়া উন্নয়নে নতুন ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে না। 

পরিকল্পনা উপদেষ্টা আরও বলেন, বিদেশি অর্থায়ন পাওয়া যাবে এমন প্রকল্প গ্রহণে গুরুত্ব দেবে সরকার। বহু বছর আগের অনেক প্রকল্প পড়ে আছে। এ গুলোতে বিদেশি সহযোগীদের নজরদারি বেশি থাকে। অনিয়ম করা যায় না। তাই ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আগ্রহ কম থাকে। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিলে এমন কিছু নতুন প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জ্বালানি বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, জ্বালানি নীতি ভ্রান্ত ছিল। দেশে সম্ভাবনাময় কূপ খনন না করে  কেন জ্বালানি আমদানি করা হলো? আবার দেশে জ্বালানি উত্তোলনে দায়িত্ব দেওয়া হয় বিদেশিদের, যাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। টেংরাটিলা এর উদাহরণ। স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের দাবি-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  উত্তরণের এ পর্যায়ে এসে এখন আর সরে আসার চেষ্টা করে হয়তো লাভ হবে না। 

গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর এটিই প্রথম একনেক সভা। এতে  চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।  ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ২২২ কোটি টাকা। সাধারণত, সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার একনেক বৈঠক হয়ে থাকে। গড়ে ১০টি প্রকল্প অনুমোদন হয়ে থাকে। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সর্বশেষ সভা হয় ২ জুলাই। এ হিসাবে অন্তত ১০টি একনেক সভা যথাসময়ে হয়নি। এসব সভায় অনুমোদনের জন্য শতাধিক প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। 

অনুমোদিত ৪ প্রকল্প

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ২টি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। এর মধ্যে বাখরাবাদ-মেঘনাঘাট-হরিপুর গ্যাস সঞ্চালন পাইপলাইন নির্মাণ  প্রকল্পটি সংশোধন ও অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৭১ কোটি টাকা। ২টি মূল্যায়ন কাম উন্নয়ন কূপ (সুন্দলপুর-৪ ও শ্রীকাইল-৫) এবং ২টি অনুসন্ধান কূপ (সুন্দলপুর সাউথ-১ ও জামালপুর-১) খনন প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়  ৫৮৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় টেকসই সামাজিক সেবা প্রদান প্রকল্পের (২য় পর্যায়) জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ  দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৩০০ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব, বাকি ১০০ কোটি টাকা ইউনিসেফের অনুদান। এ ছাড়া মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ‘তথ্য আপা: ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে মহিলাদের ক্ষমতায়ন প্রকল্প (২য় পর্যায়) (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পটির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পের নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি ব্যয় পুনঃপ্রাক্কলন করার নির্দেশনা দিয়ে অনুমোদন করা হয়েছে। প্রকল্পটিতে আগামী ২ বছরের জন্য ১৬৩ কোটি ১১ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়। 

আরও পড়ুন

×