ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

খুবির পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে আলোচনায় যারা

খুবির পরবর্তী উপাচার্য হিসেবে আলোচনায় যারা

ড. মো. হারুনর রশীদ খান, ড. রেজাউল করিম, ড. আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরী এবং ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত

সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৫:৩৯ | আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ১৭:৫৬

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শূন্য হয়ে পড়ে। এর মধ্যে কয়েকটিতে উপাচার্য নিয়োগ শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) উপাচার্য নিয়োগ হয়নি। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কে হবেন তা নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত চারজন শিক্ষক উপাচার্য নিয়োগের আলোচনায় এগিয়ে আছেন। 

আলোচনায় সবচেয়ে এগিয়ে আছেন অধ্যাপক ড. মো. হারুনর রশিদ খান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের এই অধ্যাপক দীর্ঘ ৩২ বছরের ক্যারিয়ারে শিক্ষা ও গবেষণা নিয়ে ১৩০টির বেশি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশিত এসব গবেষণাপত্রে ১১ হাজারের বেশি সাইটেশন আছে। ২০০৮ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবলেজয়ী অধ্যাপক মাকোতো কোবায়াশি ও অধ্যাপক তোশিহিদে মাসকাওয়ার সঙ্গে গবেষণা করেছেন। বর্তমানে তিনি ডিসিপ্লিন প্রধানের দায়িত্বে আছেন। তিনি ইতোমধ্যে ৫ জন গবেষককে পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছেন এবং বর্তমানে ৩ জন পিএইচডি শিক্ষার্থী তার তত্ত্বাবধানে উচ্চতর গবেষণায় যুক্ত আছেন।

জাপান সরকারের মনবুশো বৃত্তি নিয়ে ড. মো. হারুনর রশিদ খান সাগা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেন। পরে দুইটি পোস্ট ডক্টরাল করেছেন টোকিও ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি ও সাগা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, ডিন, গবেষণা সেলের ডিরেক্টর, হল প্রভোস্ট, শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক, পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। সমাজ ও রাজনীতির অসঙ্গতি নিয়ে তিনি নিয়মিত পত্রিকায় কলাম লিখেন। নোবেলবিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে লেখা ‘দৈনিক আমার দেশ’ পত্রিকায় ২০১২ সালে প্রকাশিত ‘সাদা ওয়াইন ও টেকসই গণতন্ত্র’ শিরোনামে কলামে তিনি টেকসই গণতন্ত্রের পক্ষে শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করে ড. ইউনূসসহ সর্বস্তরের মানুষের জন্য ন্যায় বিচারের দাবি জানান, যা ড. ইউনূসের শুভানুধ্যায়ী ও সাধারণ পাঠকদের মধ্যে ইতিবাচক সাড়া ফেলে। 

ড. হারুনর রশীদ খান একাধিক গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত আছেন। তার নেতৃত্বে সৌদি আরবের কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ এটোমিক এনার্জি কমিশন ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের মধ্যে একটা যৌথ গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন হচ্ছে। এছাড়াও তিনি কিং সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচ বছরের অধিক কাল অধ্যাপনা করেছেন। জাপানের হাই এনার্জি এক্সিলালরটর রিসার্চ অর্গানাইজেশন (কেইকে) এবং ইতালির দ্যা আবদুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্স (আইসটিপি)-এর মতো গুরত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানেও তিনি সাত বছর গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা সংস্কৃতি বেশ শক্ত অবস্থানে আছে। গবেষণায় সুনাম ও ভালো র‌্যাকিংয়ের কারণে এই প্রতিষ্ঠানের বহু শিক্ষার্থী বিশ্বের নানা প্রান্তের প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঐতিহ্য যাতে খর্ব না হয় এজন্য তারা প্রশাসনিকভাবে দক্ষ ও বিশ্বমানের একজন গবেষককে উপাচার্য পদে দেখতে চান।

উপাচার্য হিসেবে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ হারুণ চৌধুরীর নাম আলোচনায় রয়েছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তিনি ৩৫টির বেশি গবেষণা আর্টিকেল প্রকাশনা করেছেন।

ড. হারুণ চৌধুরী বায়োলজিক্যাল সায়েন্স জুনিয়র ক্যাটেগরিতে ২০০৯ সালে বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স গোল্ড মেডেল অর্জন করেন। তিনি দেশে ও বিদেশে আয়োজিত বিভিন্ন কনফারেন্সে অংশ নিয়েছেন এবং একাধিক পিয়ার রিভিউ কনফারেন্স পেপার প্রকাশ করেছেন। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের পরিবেশ নিয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তার কনসালটেন্সির অভিজ্ঞতা রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমের নামও আলোচিত হচ্ছে। তিনি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি স্কুলের ডিন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি, ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) এবং নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা ডিসিপ্লিনের প্রধানসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ড. রেজাউল করিম বেশকিছু গবেষণা নিবন্ধ ও বইয়ের অনুচ্ছেদ লিখেছেন। তিনি বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে যুক্ত ছিলেন। হাইয়ার এডুকেশন কোয়ালিটি এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (হেকেপ) এর অধীনে তিনি একটি গবেষণা প্রকল্প সম্পন্ন করেন। কনসালটেন্ট হিসেবে কলেজ এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্টে (সিইডিপি) যুক্ত ছিলেন।

গণিত ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বিশ্বাসও আলোচনায় আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তিনি গণিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল ডিগ্রি নেন। পরে পর্তুগালের ইউনিভার্সিটি অব পোর্তো থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তার গবেষণা অভিজ্ঞতা বেশ সমৃদ্ধ। গবেষণা আর্টিকেলের পাশাপাশি তিনি বই ও বুক চ্যাপ্টারও লিখেছেন। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রদত্ত ভাইস চ্যান্সেলর এ্যাওয়ার্ড ও রিসার্চ এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি (বিএমএস),  ইনস্টিটিউট অব ম্যাথমেটিকস অ্যান্ড ইটস এপ্লিকেশন (আইএমএ) সহ বেশ কিছু সংগঠনের সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত শহীদ মীর মুগ্ধ গণিত ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ছিলেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, শহীদ মীর মুগ্ধ এখন সমগ্র জাতির গৌরব। তাকে কোন ব্যক্তি, ডিসিপ্লিন বা বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ রাখা অনুচিত। মুগ্ধের আত্মত্যাগের আবেগকে কেউ যেন ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার না করেন এবং যিনি‌ই খুবির ভিসি হয়ে আসুক, তিনি যেন মীর মুগ্ধ ও তার পরিবারের সম্মান সমুন্নত রাখেন এমনটাই প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা।

সূত্র জানায়, প্রত্যেক আলোচিত প্রার্থীরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। কেউ সক্রিয় ছিলেন বা আছেন, কেউ নিষ্ক্রিয় আছেন।

আরও পড়ুন

×