অশান্ত আশুলিয়া বন্ধ অর্ধশতাধিক পোশাক কারখানা

ফাইল ছবি
সমকাল প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ০০:৫৭
কয়েক দিনের মধ্যে আবার অশান্ত আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল। গতকাল সোমবার এখানে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করেন বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। কয়েকটি কারখানায় হামলার ঘটনাও ঘটে। এমন পরিস্থিতিতে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের ৫১টি পোশাক কারখানা বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় মালিক কর্তৃপক্ষ।
গাজীপুরেও একটি কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ৪ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখেন। তবে গাজীপুর শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি ছিল শান্ত। দিনভর উৎপাদন কার্যক্রম চলে।
উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে বৈঠকে বসেন সরকার, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধিরা। বৈঠকে দ্রুত বোর্ড গঠন করে ন্যূনতম মজুরি পুনর্নির্ধারণের দাবি জানান শ্রমিক নেতারা। তবে এই মুহূর্তে মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয় বলে বিজিএমইএর জরুরি সভায় মত দিয়েছেন উদ্যোক্তারা। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মজুরি বাড়ানো ছাড়া আর্থিক সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন সব দাবি মেনে নেওয়া হবে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, আশুলিয়ায় গতকাল ২৩৩টি কারখানা খোলা ছিল। এর মধ্যে ১২টি কারখানার শ্রমিক কাজ করতে না চাইলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। এখানকার ৫টি কারখানায় গতকাল পর্যন্ত আগস্টের মজুরি পরিশোধ করা হয়নি।
নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি
শিল্পাঞ্চলে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল সচিবালয়ে সরকার, মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি বৈঠক হয়। এতে ১৮টি দাবি তুলে ধরেন শ্রমিক নেতারা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শ্রম সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান। তৈরি পোশাক খাতের দুই সংগঠন বিকেএমইএ এবং বিজিএমইএ নেতারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
একটি সূত্র জানায়, শ্রমিক নেতাদের প্রধান দাবির মধ্যে রয়েছে দ্রুত মজুরি বোর্ড গঠন, সব কারখানায় চলতি কাঠামো অনুযায়ী মজুরি নিশ্চিত করা, বকেয়া দ্রুত পরিশোধ ও শ্রম আইন সংশোধন।
মজুরি বাড়ানো সম্ভব নয়: বিজিএমইএ
পোশাক খাতের সার্বিক পরিস্থিতি এবং শ্রমিকপক্ষের দাবিদাওয়া নিয়ে গতরাতে জরুরি বৈঠকে বসেন বিজিএমইএ নেতারা। এতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ বলেন, ‘উদ্যোক্তাদের কাজ রপ্তানি আদেশ আনা, পণ্য উৎপাদন করা। শিল্পাঞ্চলের নিরাপত্তার উদ্যোগ নেওয়া তাদের কাজ নয়। এটা সরকারের কাজ। সরকার যেহেতু বারবার আশ্বাস দেওয়ার পরও শিল্পের নিরাপত্তা দিতে পারছে মনা, সে ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত
হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ থাকুক।’ তিনি বলেন, ‘অনেক হয়েছে, এবার আমাদের এক্সিট দিন।’ বিজিএমইএর আরেক সাবেক সভাপতি রেদওয়ান আহমেদও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারখানা বন্ধ রাখার পক্ষে মত দেন। অন্য উদোক্তারাও একই সুরে কথা বলেন। রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম।
আশুলিয়ায় বন্ধ ৫১ কারখানা
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ কারখানায় গতকাল সকাল ৮টায় কাজে যোগ দেন শ্রমিকরা। তবে ৮টি কারখানার শ্রমিকরা দুপুরের পর বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আশুলিয়া-ডিইপিজেড-নবীনগর মহাসড়কের নরসিংহপুর এলাকায় ‘জেনারেশন নেক্সট’ পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক সড়ক অবরোধ করেন। পরে কারখানাগুলোতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।
এর আগে গত রোববার দুপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ ও হামলার ঘটনায় হা-মীম গ্রুপ, শারমিন, নাসা ও আল মুসলিম ডেকো গ্রুপের কারখানাসহ টঙ্গী-আশুলিয়া সড়কের দু’পাশের ৪৩টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় কারখানাগুলো বন্ধের নোটিশ গেটে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ধারায় যতদিন কারখানা বন্ধ থাকবে ততদিন বেতন পাবেন না শ্রমিকরা।
শিল্প পুলিশ-১ এর সুপার সারোয়ার আলম জানান, সকালে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করেন। পরে তাদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়। এ ছাড়া কোথাও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং সেনা টহল রয়েছে।
গাজীপুরে কাজে ফিরেছেন শ্রমিকরা
গাজীপুরে বেশির ভাগ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন। তবে কিছু কারখানায় নানা দাবিতে আন্দোলন চলছে। শিল্প পুলিশ জানায়, বন্ধ ৮টি কারখানা গতকালও খোলেনি।
পুলিশ জানায়, সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় গোল্ডেন রিফিট গার্মেন্টের শ্রমিকরা ১২ দফা দাবিতে গতকাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। প্রায় ৪ ঘণ্টা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় দু’পাশে হাজার হাজার যানবাহন আটকা পড়ে। ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
শ্রমিকরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ তাদের হাজিরা বোনাস, টিফিন বিল, নাইট বিলসহ ৮টি দাবি মেনে নিয়েছে। বাকি ৪টি দাবি আদায়ে তারা আন্দোলন করছেন। জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল হালিম জানান, মালিকপক্ষ সব দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা দুপুর ১টার দিকে আন্দোলন স্থগিত করেন।
টঙ্গীতে মহাসড়ক অবরোধ
টঙ্গীতে বকেয়া বেতন-ভাতাসহ বিভিন্ন দাবিতে সিজন্স গার্মেন্টের শ্রমিকরা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন। সকাল ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত শ্রমিকরা মহাসড়কে অবস্থান করেন। পরে সেনাবাহিনী ও শিল্প পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। এ ছাড়া টঙ্গীর গাজীপুরায় এশিয়া পাম্পের সামনে শ্রমিকরা তিন মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শ্রমিকরা জানান, তিন মাসের বেতন ও এক বছরের ছুটির টাকা বকেয়া পড়েছে। আন্দোলন করার পর এক মাসের অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, যৌথ বাহিনীর সহযোগিতায় আন্দোলনকারী শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার এবং গাজীপুর ও টঙ্গী প্রতিনিধি)
- বিষয় :
- শ্রমিকদের আন্দোলন