ঢাকা শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বহিরাগত

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে বহিরাগত

আশুলিয়ায় আটক বহিরাগতরা সমকাল

 সমকাল প্রতিবেদক 

প্রকাশ: ০৭ অক্টোবর ২০২৪ | ০০:৪২

পোশাক খাতের শ্রমিকদের ১৮ দফা দাবি মেনে নিয়েছে মালিকপক্ষ। তার পরও শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা ঘটছে। পুলিশ বলছে, পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করছে কিছু বহিরাগত। তারা শ্রমিকদের উস্কে দিচ্ছে, হামলা-ভাঙচুর করছে। গত শনিবার আশুলিয়ায় আটক হয়েছে এমন ১৭ জন, যারা শ্রমিক নয়। 
আশুলিয়ার পুলিশ জানায়, বাইপাইলের ডংলিয়ান ফ্যাশনে শনিবার হামলা চালায় কিছু বহিরাগত সন্ত্রাসী। তারা রড, স্টিলের পাইপ ও লাঠি নিয়ে শ্রমিক ও স্টাফদের ওপর হামলা করে। খবর পেয়ে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা এসে হামলাকারী কনকসহ ১৭ জনকে আটক করে। পরে জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে, কেউই পোশাক কারখানার শ্রমিক নয়। 
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের নরসিংহপুর, জিরাবো ও জামগড়া এলাকায় শ্রমিক নামধারী বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন অপরাধে পোশাক কারখানা থেকে ছাঁটাই হয়েছেন। তবে চাকরিচ্যুত হলেও কারখানার পরিচয়পত্র কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেননি। পুলিশ বলছে, কালো তালিকাভুক্ত হওয়ায় এরা কোনো কারখানায় কাজ পাচ্ছে না। তবে কেউ কেউ  কর্তৃপক্ষের নজর ফাঁকি দিয়ে অন্য কারখানায় কাজ নিয়েছেন। অনেকে ঝুট ব্যবসা গড়ে তুলেছেন। বিভিন্ন কারখানায় রয়েছে তাদের নিজস্ব লোক। চাকরিচ্যুত এই বহিরাগতরাই শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টি করছে। 

নরসিংহপুরের অনন্যা কারখানার শ্রমিক শিরিন আক্তার সমকালকে বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কারখানায় কাজ করতে চাই। কোনো আন্দোলন চাই না। কিন্তু এলাকার কিছু লোক আমাদের কারখানায় যেতে বাধা দেয়। কারখানায় গেলে তারা আমাদের মারধর করার হুমকি দেয়।’ 
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন সমকালকে বলেন, ‘যৌথ বাহিনীর হাতে আটক ১৭ জন শ্রমিক নয়, তারা বহিরাগত সন্ত্রাসী। তাদের বিরুদ্ধে  মামলা হয়েছে।’ শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক আন্দোলনে জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি। 
ত্রিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়ন দাবি
পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসনে ত্রিপক্ষীয় চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন এবং শ্রমিক হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছে এ শিল্পের প্রতিনিধিত্বশীল ২০টি শ্রমিক সংগঠন। গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর নেতারা বলেন, ‘চক্রান্ত, গুজব ও ষড়যন্ত্র রুখে দিয়ে শিল্পে স্থিতিশীলতা রক্ষা ও উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।’  রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ওই সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন, পরিচালনা করেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ওয়ার্কার্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার। লিখিত বক্তব্য রাখেন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্টু ঘোষ। 

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর কিছু মালিক অতীতের মতোই দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে অবাধ ট্রেড ইউনিয়নসহ আইনানুগ সুযোগ-সুবিধা ও অধিকারবঞ্চিত শ্রমিকরা দাবিনামা উত্থাপন ও আন্দোলনে নামতে বাধ্য হন। ২৪ সেপ্টেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় ১৮ দফা চুক্তি স্বাক্ষর এবং ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে সব কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম চালু হয়। তা সত্ত্বেও কয়েকজন মালিক ১৮ দফা বাস্তবায়ন না করে চাকরিচ্যুতি ও হামলা-মামলা অব্যাহত রেখেছেন। বেশ কিছু কারখানায় বেতন পরিশোধ না করা ও ১৩/১ ধারায় কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। 
এতে আরও বলা হয়, গ্রেপ্তার-হয়রানির প্রতিবাদ, বকেয়া বেতনসহ পাওনার দাবিতে কয়েকটি স্থানে শ্রমিকরা কথা বলতে গেলে তাদের ওপর হামলা, এমনকি গুলি করা হয়। এতে কাউসার হোসেন খান নামে এক শ্রমিক নিহত ও শতাধিক আহত হন। সংবাদ সম্মেলনে এ ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। 
শ্রমিক নেতাদের মধ্যে মোশরেফা মিশু, তৌহিদুর রহমান, মাহবুবুর রহমান ইসমাইল, তাসলিমা আখতার, লাভলী ইয়াসমিন, সাদেকুর রহমান শামীম, কাজী রুহুল আমিন, রফিকুল ইসলাম সুজন, নাহিদুল হাসান নয়ন, কামরুল আনাম, মরিয়ম আক্তার ও মাহমুদ হাসান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

×