ঢাকা মঙ্গলবার, ০৮ জুলাই ২০২৫

বিএফএফ-সমকাল বিজ্ঞান বিতর্ক অনুষ্ঠানে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

আমরা গণতন্ত্র পাই না, তাই বিজ্ঞান চর্চা হয় না

এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন ময়মনসিংহ জিলা স্কুল

আমরা গণতন্ত্র পাই না, তাই বিজ্ঞান চর্চা হয় না

বিএফএফ-সমকাল বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের চূড়ান্ত পর্বে পুরস্কার বিজয়ীদের সঙ্গে অতিথিরা। শনিবার ড্যাফোডিল প্লাজার ৭১ মিলনায়তনে সমকাল

 সমকাল প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২০ অক্টোবর ২০২৪ | ০১:০১

বিএফএফ-সমকাল বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের এবারের আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুল। আর রানার্সআপ হয়েছে নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল। সেরা বক্তা নির্বাচিত হয়েছে ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের অভিজিৎ চৌধুরী মনন। 

গতকাল শনিবার রাজধানীর সোবহানবাগে ড্যাফোডিল প্লাজার ৭১ মিলনায়তনে এই বিজ্ঞান বিতর্ক উৎসবের ১০ম আসরের চূড়ান্ত পর্বের সমাপনী অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। 

অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘সমাজে অধিকার ও সাম্যের সুযোগ উন্নয়নে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন। বিজ্ঞানের আবিষ্কার চরম জায়গায় চলে গেছে। আজ আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কথা বলছি। এর কারণে মানুষের কর্ম কমে যাবে। কিন্তু এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মালিকানা কার থাকবে– সেই প্রশ্ন গুরুত্বপূর্ণ।’ 
‘বিতর্ক মানেই যুক্তি, বিজ্ঞানে মুক্তি’ এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে সমকাল সুহৃদ সমাবেশ এই আয়োজন করে। আয়োজনের টাইটেল স্পন্সর ছিল বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এবং পাওয়ার্ড বাই শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক পিএলসি।

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা কি  পুঁজিবাদী উন্নতি চাই, যেখানে অল্প মানুষের উন্নতি হবে আর বেশি মানুষ বঞ্চনার শিকার হবে? আমরা কি সেই উন্নতি চাই, যা আমাদের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে? আসলে আমরা অধিকার ও সুযোগের সাম্য চাই। এর জন্য দরকার বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি।’ 

তিনি বলেন, ‘তর্ক এবং বিতর্ক এক নয়। বিতর্কে যুক্তিই প্রধান হিসেবে থাকে। কিন্তু তর্কের ক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে বিশ্বাস বড় হয়ে ওঠে। বিশ্বাসের জোরে কথা বলে আমরা বিজয়ী হতে চাই, অন্যকে পরাভূত করতে চাই। বিতর্কের প্রধান শক্তি হলো যুক্তি। যুক্তির উপস্থাপনা, অপর পক্ষের যুক্তি খণ্ডন এবং উপস্থাপনায় ভাষার ব্যবহার ও ভঙ্গি বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ। বিতর্কে থাকে শিল্প, থাকে নান্দনিকতা।’ 

দেশে বিজ্ঞানের অগ্রগতি সেভাবে ঘটছে না উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা স্বৈরাচারের অধীনে থাকি, স্বৈরাচারের পতন ঘটলে তাকে বিপ্লব মনে করি। আমরা গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষায় থাকি, কিন্তু গণতন্ত্র পাই না। এ কারণে বিজ্ঞানের চর্চা এখানে ঘটে না।’ দেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও প্রকাশক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএফএফের ট্রাস্টি ও ট্রেজারার এবং বাংলাদেশ ফিজিক্স অলিম্পিয়াডের ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম. আরশাদ মোমেন, ড্যাফোডিল পরিবারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ নুরুজ্জামান ও সমকালের সহযোগী সম্পাদক লোটন একরাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিএফএফের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান শারমিন আক্তার।
অনুষ্ঠানে এম. আরশাদ মোমেন বলেন, ‘বর্তমানে আমরা নানা ধরনের ভুল তথ্য ও অপতথ্য পাই। এ কারণে সামনের বছর এই আয়োজনে একজন ফ্যাক্ট চেকার রাখা যেতে পারে।’
লোটন একরাম বলেন, ‘সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সমকাল প্রতিবছর এই আয়োজন করে আসছে। এ ছাড়া সমকাল বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্ব ইস্যুতে নানা ভূমিকা পালন করে।’
সভাপতির বক্তব্যে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনসহ অন্যান্য সহযোগীরা আমাদের সঙ্গে থাকলে এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে।’
অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্যদের ল্যাপটপ ও রানার্সআপ দলকে নোটপ্যাড দেওয়া হয়। সেমিফাইনালে অংশ নেওয়া অপর দুই দল রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ও নোয়াখালী জিলা স্কুলের বিতার্কিকদের দেওয়া হয় স্মার্টফোন। এ ছাড়া তাদের ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতার বিচারক ও স্বেচ্ছাসেবকদের ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় বিতর্ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের সেরা সাবেক বিতার্কিকরা এই কর্মশালা পরিচালনা করেন। কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদেরও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

চূড়ান্ত আসরে ১৬ দল
এবারের চূড়ান্ত আসরে অংশ নেয় জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন ১৬ দল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হলো– বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, নোয়াখালী জিলা স্কুল, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (কুমিল্লা), ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, কালাই ময়েনউদ্দীন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় (জয়পুরহাট), খুলনা সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, রংপুর জিলা স্কুল, মজিদ-জরিনা ফাউন্ডেশন স্কুল অ্যান্ড কলেজ (শরীয়তপুর), আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, শহীদ পুলিশ স্মৃতি কলেজ, রাজবাড়ী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নারায়ণগঞ্জ আইডিয়াল স্কুল, উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ। গত ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়া এবারের আসরে অংশ নেয় ৫২০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় দুই হাজার বিতার্কিক।
 

আরও পড়ুন

×